০৭:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা-দিল্লির রাতও এখন গরম: ঘুম ভাঙা ক্লাইমেট ক্রাইসিস জ্বালানি রূপান্তর ও ভূরাজনীতি এখন এক জিনিস: ব্যাটারির খনিজের জন্য নতুন মার্কিন চাপ এআই ডেটা সেন্টার এত বিদ্যুৎ খাচ্ছে যে গ্রিড কাঁপছে — সমাধান কি ‘কার্বন-অওয়্যার’ ট্রেনিং ট্রাম্পের এশিয়া সফরের মাঝেই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া, জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার সতর্কতা জোরালো টেকক্রাঞ্চ ডিসরাপ্ট ২০২৫: শুধু এআই বললেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না” মারিনল্যান্ডের বেলুগা তিমিদের বাঁচাতে কানাডার প্রাদেশিক সরকারের আহ্বান ট্রাম্পের আগমনে আসিয়ান শীর্ষ বৈঠক হয়ে গেল মার্কিন মঞ্চ ১৪ বছর না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের ফোন না দেওয়ার অঙ্গীকারে বাড়ছে সচেতনতা যুদ্ধোত্তর অনিশ্চয়তার মধ্যে ইসরায়েলের পর্যটন খাতে পুনর্জাগরণের আশা কানাডার সাবমেরিন ক্রয় : দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের মধ্যে কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ভারসাম্যের কঠিন নির্বাচনে কানাডা

প্রথম সন্তানের জন্মের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর দ্বিতীয়বার মাতৃত্বে শান্তি খুঁজে পাওয়া

জন্মের শুরুতেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

প্রথম সন্তান জন্মের মুহূর্তেই, আমার জীবনে আনন্দের বদলে নেমে আসে আতঙ্ক। শিশুটিকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (NICU)। সেখানে জানা যায়, প্রসবের সময় তার মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। সেই মুহূর্ত থেকে আমার মাতৃত্ব শুরু হয় ভয় আর অপরাধবোধের সঙ্গে।

প্রতিবার থেরাপিস্ট কিংবা নতুন চিকিৎসকের কাছে যেতে হলে সেই ঘটনার গল্প বারবার বলতে হতো—তার নিম্ন অ্যাপগার স্কোর, নিস্তব্ধ প্রসূতি কক্ষ, দীর্ঘ চিকিৎসা, ঠান্ডা থেরাপি, এমআরআই—সবই যেন আমার মনে গেঁথে ছিল। হাসপাতালের গন্ধ, নীল চেয়ার, মেশিনের শব্দ — সবকিছু আমাকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যেত সেই ভয়ের রাতটিতে।

দ্বিতীয় সন্তান—একটা নতুন সূচনার আকাঙ্ক্ষা

আমি ও আমার স্বামী সবসময়ই একাধিক সন্তান চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলাও কঠিন হয়ে ওঠে। মনে হতো, নতুন সন্তান চাওয়ার মানে কি প্রথম সন্তানের প্রতি অবহেলা?

আমরা পুরো মনোযোগ দিয়েছিলাম তার চিকিৎসায়—খাদ্য পরিমাপ; ওষুধের সময়সূচি; স্পিচ থেরাপি; প্রতিদিনের যত্ন। শিশুর অগ্রগতি দেখতে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ ছিলাম, কিন্তু ভয় কাটছিল না। যখন অন্য কারও সুখী প্রসবের খবর পেতাম, ঈর্ষা আর অপরাধবোধে ভরে উঠত মন। নিজের মধ্যেই লড়াই চলত—আমি কেন অন্যদের আনন্দ সহ্য করতে পারি না?

Avoid the Seven-Year Itch In Your Relationship

“আবার চেষ্টা করতে হবে”—নিজেকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গেল, কথায় আর থেরাপিতে সব ঠিক হয়ে উঠছে না। আমার প্রয়োজন ছিল এক নতুন বাস্তব অভিজ্ঞতা—একটি সম্পূর্ণ নতুন জন্মের অভিজ্ঞতা, যেন শরীর ও মন উভয়ে সুস্থ হতে পারে।

২০১৭ সালের শুরুতে, সন্তানের দেড় বছর পূর্ণ হলে, আমি আবার গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিই। চিকিৎসকেরা জানালেন, আগের জটিলতাগুলো ছিল দুর্ঘটনাজনিত, এবার ঝুঁকি কম। গর্ভধারণের খবর জানার পর ভয় ছিল, কিন্তু গভীর ছিল আনন্দও।

দ্বিতীয় গর্ভাবস্থা—আতঙ্ক আর আশার মিশেল

পুরো গর্ভকাল কাটালাম প্রস্তুতির মধ্যে। বই, গবেষণা, সহায়ক গোষ্ঠী—সবকিছু পড়ে নিজেকে তৈরি করছিলাম। কিন্তু মানসিক উদ্বেগ পিছু ছাড়েনি—হৃদস্পন্দনের অনিয়ম, ঘুমহীনতা, হাসপাতালে বারবার পর্যবেক্ষণ ছিল।

তবু গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে আমি নতুনভাবে নিজের শরীরকে ভালোবাসতে শুরু করি। আয়নার সামনে পেটের ছবি তোলা, হাঁটতে যাওয়া, ভবিষ্যতের আশা নিয়ে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচা—সবকিছু যেন মুক্তির পথে যাত্রা।

দ্বিতীয় প্রসব—পুনর্জন্মের অভিজ্ঞতা

How to Induce Labor: Helpful Methods

এইবার আমি পরিকল্পিতভাবে প্রসব প্ররোচনা (ইনডাকশন) বেছে নিই, যাতে প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসকদের বলেছিলাম—“ঝুঁকির কোনো সীমা আমি নিতে পারব না; সামান্য বিপদে সিজারিয়ান অপারেশন চাই।”

সবকিছু খুব শান্তভাবে এগোয়। কোনো জটিলতা, কোনো আতঙ্ক নয়। শিশুটি জন্ম নিতেই কান্নার শব্দে ভরে ওঠে ঘর। আমি তাকে বুকে তুলে নেই—প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে মাতৃত্বকে অনুভব করি। আমরা ছবি তুলি, নাম লিখি দেয়ালে, সবাই আসে দেখতে। বাবার মুখে গর্বের কথা শুনে, বন্ধুর চোখে আনন্দ দেখে বুঝি — অবশেষে আমি মুক্ত।

প্রথম সন্তানের সঙ্গে নতুন বন্ধন

যখন বড় ছেলে হাসপাতালে আসে, একটু দ্বিধায় সে তাকায় নতুন ভাইয়ের দিকে। আমি দুই সন্তানকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরি। তখন সে আর সেই অসহায় নবজাতক নয়—সে একজন উদ্দীপ্ত বড় ভাই।

এই নতুন জন্ম আমাকে প্রথম সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কমায়নি, বরং ট্রমাকে আলাদা করেছে তার অস্তিত্ব থেকে। আমি বুঝেছি—সন্তান মানে শুধু তার জন্মের গল্প নয়, তার জীবনটাই মূল বিষয়।

আমি ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরি—দুজনই এসেছে ভিন্ন পথে, কিন্তু দুজনই আমার পূর্ণ জীবনের অংশ।

 

# মাতৃত্ব, #জন্ম #অভিজ্ঞতা, #মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা, #পারিবারিক সম্পর্ক, #ব্যক্তিগত গল্প

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা-দিল্লির রাতও এখন গরম: ঘুম ভাঙা ক্লাইমেট ক্রাইসিস

প্রথম সন্তানের জন্মের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর দ্বিতীয়বার মাতৃত্বে শান্তি খুঁজে পাওয়া

০৩:৪৪:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

জন্মের শুরুতেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

প্রথম সন্তান জন্মের মুহূর্তেই, আমার জীবনে আনন্দের বদলে নেমে আসে আতঙ্ক। শিশুটিকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (NICU)। সেখানে জানা যায়, প্রসবের সময় তার মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। সেই মুহূর্ত থেকে আমার মাতৃত্ব শুরু হয় ভয় আর অপরাধবোধের সঙ্গে।

প্রতিবার থেরাপিস্ট কিংবা নতুন চিকিৎসকের কাছে যেতে হলে সেই ঘটনার গল্প বারবার বলতে হতো—তার নিম্ন অ্যাপগার স্কোর, নিস্তব্ধ প্রসূতি কক্ষ, দীর্ঘ চিকিৎসা, ঠান্ডা থেরাপি, এমআরআই—সবই যেন আমার মনে গেঁথে ছিল। হাসপাতালের গন্ধ, নীল চেয়ার, মেশিনের শব্দ — সবকিছু আমাকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যেত সেই ভয়ের রাতটিতে।

দ্বিতীয় সন্তান—একটা নতুন সূচনার আকাঙ্ক্ষা

আমি ও আমার স্বামী সবসময়ই একাধিক সন্তান চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলাও কঠিন হয়ে ওঠে। মনে হতো, নতুন সন্তান চাওয়ার মানে কি প্রথম সন্তানের প্রতি অবহেলা?

আমরা পুরো মনোযোগ দিয়েছিলাম তার চিকিৎসায়—খাদ্য পরিমাপ; ওষুধের সময়সূচি; স্পিচ থেরাপি; প্রতিদিনের যত্ন। শিশুর অগ্রগতি দেখতে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ ছিলাম, কিন্তু ভয় কাটছিল না। যখন অন্য কারও সুখী প্রসবের খবর পেতাম, ঈর্ষা আর অপরাধবোধে ভরে উঠত মন। নিজের মধ্যেই লড়াই চলত—আমি কেন অন্যদের আনন্দ সহ্য করতে পারি না?

Avoid the Seven-Year Itch In Your Relationship

“আবার চেষ্টা করতে হবে”—নিজেকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গেল, কথায় আর থেরাপিতে সব ঠিক হয়ে উঠছে না। আমার প্রয়োজন ছিল এক নতুন বাস্তব অভিজ্ঞতা—একটি সম্পূর্ণ নতুন জন্মের অভিজ্ঞতা, যেন শরীর ও মন উভয়ে সুস্থ হতে পারে।

২০১৭ সালের শুরুতে, সন্তানের দেড় বছর পূর্ণ হলে, আমি আবার গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিই। চিকিৎসকেরা জানালেন, আগের জটিলতাগুলো ছিল দুর্ঘটনাজনিত, এবার ঝুঁকি কম। গর্ভধারণের খবর জানার পর ভয় ছিল, কিন্তু গভীর ছিল আনন্দও।

দ্বিতীয় গর্ভাবস্থা—আতঙ্ক আর আশার মিশেল

পুরো গর্ভকাল কাটালাম প্রস্তুতির মধ্যে। বই, গবেষণা, সহায়ক গোষ্ঠী—সবকিছু পড়ে নিজেকে তৈরি করছিলাম। কিন্তু মানসিক উদ্বেগ পিছু ছাড়েনি—হৃদস্পন্দনের অনিয়ম, ঘুমহীনতা, হাসপাতালে বারবার পর্যবেক্ষণ ছিল।

তবু গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে আমি নতুনভাবে নিজের শরীরকে ভালোবাসতে শুরু করি। আয়নার সামনে পেটের ছবি তোলা, হাঁটতে যাওয়া, ভবিষ্যতের আশা নিয়ে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচা—সবকিছু যেন মুক্তির পথে যাত্রা।

দ্বিতীয় প্রসব—পুনর্জন্মের অভিজ্ঞতা

How to Induce Labor: Helpful Methods

এইবার আমি পরিকল্পিতভাবে প্রসব প্ররোচনা (ইনডাকশন) বেছে নিই, যাতে প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসকদের বলেছিলাম—“ঝুঁকির কোনো সীমা আমি নিতে পারব না; সামান্য বিপদে সিজারিয়ান অপারেশন চাই।”

সবকিছু খুব শান্তভাবে এগোয়। কোনো জটিলতা, কোনো আতঙ্ক নয়। শিশুটি জন্ম নিতেই কান্নার শব্দে ভরে ওঠে ঘর। আমি তাকে বুকে তুলে নেই—প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে মাতৃত্বকে অনুভব করি। আমরা ছবি তুলি, নাম লিখি দেয়ালে, সবাই আসে দেখতে। বাবার মুখে গর্বের কথা শুনে, বন্ধুর চোখে আনন্দ দেখে বুঝি — অবশেষে আমি মুক্ত।

প্রথম সন্তানের সঙ্গে নতুন বন্ধন

যখন বড় ছেলে হাসপাতালে আসে, একটু দ্বিধায় সে তাকায় নতুন ভাইয়ের দিকে। আমি দুই সন্তানকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরি। তখন সে আর সেই অসহায় নবজাতক নয়—সে একজন উদ্দীপ্ত বড় ভাই।

এই নতুন জন্ম আমাকে প্রথম সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কমায়নি, বরং ট্রমাকে আলাদা করেছে তার অস্তিত্ব থেকে। আমি বুঝেছি—সন্তান মানে শুধু তার জন্মের গল্প নয়, তার জীবনটাই মূল বিষয়।

আমি ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরি—দুজনই এসেছে ভিন্ন পথে, কিন্তু দুজনই আমার পূর্ণ জীবনের অংশ।

 

# মাতৃত্ব, #জন্ম #অভিজ্ঞতা, #মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা, #পারিবারিক সম্পর্ক, #ব্যক্তিগত গল্প