পারফেক্ট ঘুমের নামে নতুন চাপ
ওয়েলনেস দুনিয়ার নতুন ট্রেন্ডের নাম ‘স্লিপম্যাক্সিং’। ধারণাটা দেখতে খুব স্বাস্থ্যকর: আপনার ঘুমও এখন জিম রুটিনের মতো মাপুন, অপটিমাইজ করুন, স্কোর শেয়ার করুন। কেউ কেউ ঘুমের ডেটা—হার্ট রেট, ডীপ স্লিপ, রিকভারি ইনডেক্স—সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনভাবে পোস্ট করছেন যেন এটা তাদের দৈনিক ওয়ার্কআউট রেজাল্ট। কিন্তু এই ট্রেন্ড নিয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্টিং বলছে, বাস্তবে অনেকেই উল্টো আরও দমবন্ধ বোধ করছেন। স্মার্টওয়াচ বা অ্যাপ সকালে জানিয়ে দিল “তুমি ভালো রিকভার করোনি,” আর সেই এক লাইনেই সারাদিনের মুড, খাদ্যাভ্যাস, এমনকি অপরাধবোধও সেট হয়ে যাচ্ছে। ঘুম মানে বিশ্রাম থাকার বদলে হয়ে গেছে হোমওয়ার্ক আর সেল্ফ-অডিট।
এই বাজারও ছোট নয়। এখন ম্যাট্রেস বিক্রি হয় “অ্যাথলেট-গ্রেড রিকভারি” দাবি নিয়ে। ব্ল্যাকআউট কার্টেন, সাদা নয়েজ মেশিন, ম্যাগনেসিয়াম স্প্রে, নাক খোলা রাখার স্ট্রিপ—সবই “ডীপ স্লিপ” প্যাকেজের অংশ হিসেবে ঠেলা হচ্ছে। ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের “স্লিপ স্ট্যাক” প্রকাশ করছে—ঘুমের আগে কোন সাপ্লিমেন্ট কখন খেয়েছে, কোন অ্যারোমা ছড়িয়েছে, কীভাবে রুম সাউন্ডপ্রুফ রেখেছে। ভাষা নরম, রং প্যাস্টেল, কিন্তু মেসেজ কড়া: তুমি ক্লান্ত? তাহলে তুমি যথেষ্ট অপটিমাইজ করছ না।
বার্নআউটকে ব্যক্তিগত দোষে পরিণত করা
সমালোচকদের মতে, এভাবে দায় সরে যাচ্ছে সিস্টেম থেকে। রাত পর্যন্ত কাজের মেসেজ, অনিশ্চিত আয়ের দুশ্চিন্তা, ভাড়া-বাড়ির চাপ, জলবায়ু আতঙ্ক—এসবকে আর কাঠামোগত সমস্যা বলা হচ্ছে না। বরং বলা হচ্ছে তোমার ব্যক্তিগত স্লিপ ডিফিসিট, যেটা তোমাকেই ‘ফিক্স’ করতে হবে নতুন গ্যাজেট ও সাপ্লিমেন্ট কিনে। কিছু মনোবিজ্ঞানী বলছেন, এতে বিশ্রামও প্রোডাক্টিভিটি মেট্রিক হয়ে যাচ্ছে: তুমি ক্লান্ত নও, তুমি ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’।
আরও এক স্তর আছে, যা সরাসরি শ্রেণিগত। নিখুঁত ঘুমের স্ক্রিনশট পোস্ট মানে কী? মানে তুমি এমন বাসায় ঘুমাও যেখানে রাতভর শব্দ নেই, তুমি নাইট শিফটে কাজ করো না, তোমার বিছানা তোমারই, রুমমেটের নয়। মানে তুমি সময় ও জায়গা কেনার সামর্থ্য রাখো। এই “স্লিপম্যাক্সিং” তাই শুধু ওয়েলনেস নয়, এক ধরনের নীরব স্ট্যাটাস ডিসপ্লে। যারা পারে না, তাদের বলা হয় “আরও চেষ্টা করো।” বিশ্রাম নয়, বিক্রি হচ্ছে নিয়ন্ত্রণের এক ছবি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















