সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে এ মৌসুমে ছড়িয়ে পড়েছে সরিষার হলুদ ফুলের চাদর। চোখ জুড়ানো এই দৃশ্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে স্থানীয় কৃষকদের জন্য নতুন আশার গল্প। ভালো ফলন আর আগাম আয়ের সুযোগে আর্থিক স্বস্তি ফিরছে বহু পরিবারে।
হাওরে বদলে যাওয়া চিত্র
মধ্যনগর উপজেলার বাঁশিকুন্ডা উত্তর ও দক্ষিণ, চামারদানি এবং মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের নিচু জমি, নদীতীর ও জলাভূমি জুড়ে এখন সরিষার দখল। আগে যেসব জমি বর্ষার পর পড়ে থাকত, সেগুলোই এবার উৎপাদনে এসেছে। হলুদ ফুলে ভরা মাঠ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আশপাশের এলাকার মানুষ।
কেন সরিষার দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা
স্বল্প খরচে দ্রুত ফলন এবং ভালো বাজারদরের কারণে সরিষা এখন হাওর এলাকার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় ফসল। ধানসহ অন্যান্য প্রধান ফসলে উৎপাদন খরচ বেশি আর দাম অনিশ্চিত হওয়ায় অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। সেই তুলনায় সরিষায় বিনিয়োগ কম, সময়ও লাগে কম, ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
আবাদ ও উৎপাদনের চিত্র
মধ্যনগর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে প্রায় পাঁচশ পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি উৎপাদন আরও বাড়তে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সাধারণত কার্তিক মাসের শেষ দিকে বপন শুরু হয়ে পৌষের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়, ফলে মৌসুমের শুরুতেই আয় নিশ্চিত হয়।
বীজের আগেই আয়, ফসলের পরেও লাভ
সরিষার বীজ তোলার আগেই কৃষকেরা ফুল ও শাক বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। স্থানীয়ভাবে এসব ফুল ও শাক দিয়ে বড়া ও নানা ধরনের শাকসবজি রান্না হয়। আবার ফসল তোলার পর শুকনো ডাঁটা জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করা যায়, যা সংসারের আয় আরও বাড়ায়।
কৃষি বিভাগের আশাবাদ
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকমল হোসেন জানান, আগের বছরের মতো এবারও সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বড় ধরনের রোগবালাই বা পোকার আক্রমণ না হলে ফলন খুব ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সময়মতো সার ও বীজ বিতরণসহ সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির কারণে চাষাবাদে কোনো বড় বাধা আসেনি।
দেশজুড়ে সরিষার গুরুত্ব
সারা দেশেই রবি মৌসুমে সরিষা লাভজনক ফসল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে, বিশেষ করে মাগুরা ও নড়াইলের মতো জেলাগুলোতে। উন্নত জাতের সরিষা উদ্ভাবন ও আধুনিক চাষপদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষ দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















