শ্রী নিখিলনাথ রায়
মহাকবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ তৃণরাশিতে যে মহিমাময়ী উজ্জ্বলতা দেখিতেন, সেই মহীয়সী উজ্জ্বলতা এই শ্যামল তৃণসাগরে প্রতিনিয়ত ক্রীড়া করিয়া বেড়াইতেছে। যখন সমীরান্দোলিত স্বচ্ছ সলিল- রাশি সৌর-করে বা চান্দ্র-কিরণে সহস্র সহস্র মণিমাণিক্য ফুটাইতে থাকে, সেই সময়ে তরঙ্গায়িত হরিদ্বর্ণ তৃণসমুদ্রে দৃষ্টিপাত করিলে বোধ হয়, যেন সহসা অপ্সরোরাজ্য পৃথ্বীতলে অবতীর্ণ হইয়াছে। ঝিলের পূর্ব্বতীরে দীর্ঘকায় বৃক্ষসকল’ সলিল দর্পণে আপনাদিগের প্রতিবিম্ব নিরীক্ষণ করিতেছে, তাহাদের ছায়ায় বসিয়া গোপবালকগণ কখন গ্রাম্য-সঙ্গীত গাহিতেছে, কখন বা ভগ্নাবশিষ্ট প্রাসাদের দিকে অঙ্গুলি- নির্দেশ করিয়া পরস্পরে নানাপ্রকার উপকথা বলিতেছে।
এই রূপ রমণীয় স্থানে আসিলে, অতীতস্মৃতি আপনা হইতে মানসপটে *উদিত হয়-অতীত-গৌরব হৃদয়কে বড়ই ব্যাকুল করিয়া তুলে! তখন অতীতের কত কথা মনে পড়ে, কত ঘটনার ছবি যবনিকাপাতের ন্যায় মানসচক্ষের সম্মুখ দিয়া অপসারিত হইতে থাকে, -কত মধুর ভাবে হৃদয় ভরিয়া যায়। আমরা অতীতের সে মাধুর্য্যবর্ণনে অক্ষম।
যদি কোন মহাকবি আপনার বিশ্বব্যাপী হৃদয় লইয়া এই রূপ মনোমোহকর স্থানে উপস্থিত হন, তিনিই ইহার বর্তমান রমণীয়তার সহিত অতীতের মধুর স্মৃতি বিজড়িত করিয়া ভুবনমোহন চিত্র অঙ্কিত করিতে পারেন। আমাদের কাৰ্য্য অন্যরূপ; আমরা ঘটনাবলীর নীরস বিন্যাসের জন্য উপস্থিত; সুতরাং আমরা এক্ষণে তাহাই দেখাইতে চেষ্টা পাইব।
মোতিঝিল বর্তমান মুর্শিদাবাদের দক্ষিণ-পূর্ব্বাংশে অর্দ্ধক্রোশ দূরে। অবস্থিত। পূর্ব্বে ইহা ভাগীরথীর গর্ভ ছিল বলিয়া অনুমান হয়। ভাগীরথী মুর্শিদাবাদের অনেক স্থানে ভ্রমণ করিয়া ভিন্ন ভিন্ন গতি। অবলম্বন করিয়াছেন। পুরাতন খাদগুলি কোন স্থানে শুষ্ক, কোথাও বা বন্ধ বিলে পরিণত হইয়াছে; মোতিঝিল ইহার একটি প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। কত কাল পূর্ব্বে মোতিঝিল স্রোতঃশালিনী ভাগীরথীর গর্ভ ছিল, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। উভয় পার্শ্বের প্রবাহ রুদ্ধ হওয়ায় ইহা অশ্বপাদুকা- কৃতি ঝিলে পরিণত হইয়াছে।
Leave a Reply