০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৯১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
  • 70

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সিরাজ ধীরে ধীরে : আপনার প্রভুত্ব বিস্তার করিতেছিলেন। নওয়াজেস্ সিরাজের প্রভুত্ব অসহ্য বিবেচনা করিয়া রাজধানী হইতে কিছু দূরে অবস্থিতি করিতে ইচ্ছা করেন। তৎকালে মহারাষ্ট্রীয়দিগের ভয়ও প্রবল ছিল; তাহারা দুই এক বার মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠনও করে; সুতরাং তিনি একটি সুরক্ষিত স্থানের অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। দেখিয়া তাঁহার আশা পূর্ণ হইল। মোতিঝিলের সুন্দর অবস্থান- অশ্বপদাকার ঝিল ইহার তিন দিক্ বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে; অধিকন্তু এই স্থানটি পরম রমণীয়, এই সকল বিবেচনায় তিনি ইহার তাঁরে স্বীয় প্রাসাদনিস্মাণের আয়ো- জন করিতে আরম্ভ করিলেন।

বাঙ্গলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের অগণ্য ভগ্নস্তূপ হইতে প্রস্তর- স্তপ্ত ও মর্ম্মর প্রস্তর ‘আনীত হইয়া প্রাসাদ নির্মিত হইল। কয়েকটি চত্বরে ভবনটি বিভক্ত হয়; চত্বরগুলি পরস্পর অল্প ব্যবধানে অবস্থিত ছিল; প্রত্যেক চত্বর দুইটি বৃহৎ প্রাচীরে বেষ্টিত ছিল, প্রাচীরগুলি প্রত্যেক দিকেই ঝিলের জল স্পর্শ করিত। দুই তিন শ্রেণীর লঘুকায় স্তম্ভ দ্বারা চত্বরের ছাদ সুরক্ষিত হইয়াছিল; কিন্তু প্রাসাদের গৃহগুলি তাদৃশ সু’বস্তৃত ছিল না।

তৎকালে মুসল্মানদিগের গৃহ প্রায়ই সুবিস্তৃত হইত না; অনেকস্থলে এখনও তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাসাদের সোপানাবলী সলিলাভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াছিল। প্রাসাদের চারিদিকে নানাবিধ বৃক্ষ রোপণ করিয়া একটি রমণীয় কানন নির্মাণ করা হয়। ফলপুষ্পে শোভমান, বৃক্ষরাজিসমন্বিত রম্যকাননের মধ্যস্থ, জলমধ্যগত সোপানাবলীসংলগ্ন সুচারু প্রাসাদটি পর পার হইতে দেখিলে বোধ হইত, যেন উদ্যানসহিত প্রাসাদটি ঝিলমধ্য হইতে ভাসিয়া উঠিতেছে।

নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ প্রায়ই এই রম্য প্রাসাদে বাস করিতেন। তিনি ইহাতে কোকিলকণ্ঠী কামিনীগণের সঙ্গীতসুধাপানে অনেক সময়ে পরিতৃপ্ত হইতেন। ভগবাই নামে একটি রমণী তাঁহার হৃদয় অধিকার করিয়াছিল। তাহার মনস্তষ্টির জন্য তিনি অনেক অর্থ ব্যয় করেন এবং তাহাকে বিস্তর হীরা জহরত উপহার দিয়াছিলেন। তাহার সহিত এই মোতিঝিলের রম্য প্রাসাদে তিনি অনেক সময় অতিবাহিত করিতেন। গান, বাদ্য ও নানাবিধ আমোদজনক ক্রীড়া তাঁহার অত্যন্ত প্রিয় ছিল বলিয়া, তিনি রাজধানীর মধ্যস্থিত স্বীয় কোলাহলময় প্রাসাদ পরিত্যাগ করিয়া এইঃস্থানেই আত্মীয়জনপরিবৃত হইয়া বাস করিতে ভাল বাসিতেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৯১)

১১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সিরাজ ধীরে ধীরে : আপনার প্রভুত্ব বিস্তার করিতেছিলেন। নওয়াজেস্ সিরাজের প্রভুত্ব অসহ্য বিবেচনা করিয়া রাজধানী হইতে কিছু দূরে অবস্থিতি করিতে ইচ্ছা করেন। তৎকালে মহারাষ্ট্রীয়দিগের ভয়ও প্রবল ছিল; তাহারা দুই এক বার মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠনও করে; সুতরাং তিনি একটি সুরক্ষিত স্থানের অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। দেখিয়া তাঁহার আশা পূর্ণ হইল। মোতিঝিলের সুন্দর অবস্থান- অশ্বপদাকার ঝিল ইহার তিন দিক্ বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে; অধিকন্তু এই স্থানটি পরম রমণীয়, এই সকল বিবেচনায় তিনি ইহার তাঁরে স্বীয় প্রাসাদনিস্মাণের আয়ো- জন করিতে আরম্ভ করিলেন।

বাঙ্গলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের অগণ্য ভগ্নস্তূপ হইতে প্রস্তর- স্তপ্ত ও মর্ম্মর প্রস্তর ‘আনীত হইয়া প্রাসাদ নির্মিত হইল। কয়েকটি চত্বরে ভবনটি বিভক্ত হয়; চত্বরগুলি পরস্পর অল্প ব্যবধানে অবস্থিত ছিল; প্রত্যেক চত্বর দুইটি বৃহৎ প্রাচীরে বেষ্টিত ছিল, প্রাচীরগুলি প্রত্যেক দিকেই ঝিলের জল স্পর্শ করিত। দুই তিন শ্রেণীর লঘুকায় স্তম্ভ দ্বারা চত্বরের ছাদ সুরক্ষিত হইয়াছিল; কিন্তু প্রাসাদের গৃহগুলি তাদৃশ সু’বস্তৃত ছিল না।

তৎকালে মুসল্মানদিগের গৃহ প্রায়ই সুবিস্তৃত হইত না; অনেকস্থলে এখনও তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাসাদের সোপানাবলী সলিলাভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াছিল। প্রাসাদের চারিদিকে নানাবিধ বৃক্ষ রোপণ করিয়া একটি রমণীয় কানন নির্মাণ করা হয়। ফলপুষ্পে শোভমান, বৃক্ষরাজিসমন্বিত রম্যকাননের মধ্যস্থ, জলমধ্যগত সোপানাবলীসংলগ্ন সুচারু প্রাসাদটি পর পার হইতে দেখিলে বোধ হইত, যেন উদ্যানসহিত প্রাসাদটি ঝিলমধ্য হইতে ভাসিয়া উঠিতেছে।

নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ প্রায়ই এই রম্য প্রাসাদে বাস করিতেন। তিনি ইহাতে কোকিলকণ্ঠী কামিনীগণের সঙ্গীতসুধাপানে অনেক সময়ে পরিতৃপ্ত হইতেন। ভগবাই নামে একটি রমণী তাঁহার হৃদয় অধিকার করিয়াছিল। তাহার মনস্তষ্টির জন্য তিনি অনেক অর্থ ব্যয় করেন এবং তাহাকে বিস্তর হীরা জহরত উপহার দিয়াছিলেন। তাহার সহিত এই মোতিঝিলের রম্য প্রাসাদে তিনি অনেক সময় অতিবাহিত করিতেন। গান, বাদ্য ও নানাবিধ আমোদজনক ক্রীড়া তাঁহার অত্যন্ত প্রিয় ছিল বলিয়া, তিনি রাজধানীর মধ্যস্থিত স্বীয় কোলাহলময় প্রাসাদ পরিত্যাগ করিয়া এইঃস্থানেই আত্মীয়জনপরিবৃত হইয়া বাস করিতে ভাল বাসিতেন।