০১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড মার্থা ওয়াশিংটন থেকে মেলানিয়া ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাকে ইতিহাস, রাজনীতি ও শক্তির প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলির ঘটনায় কী জানা যাচ্ছে; দলগুলো কেন ক্যাডার রাখে? ট্রাম্প যখন যুদ্ধ শেষের দম্ভ দেখাচ্ছেন, চীন তখন নীরবে শান্তির পথে কাজ করছে অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১০৪)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • 78

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মীর- জাফর, ক্লাইব, তাঁহার সহকারী ওয়াশ, কাশীমবাজারের ওয়াট্‌ট্স, লশিংটন, দেওয়ান রামচাঁদ এবং মুন্সী নবকৃষ্ণ প্রভৃতি সেই কোবাগার লুণ্ঠনের সময় উপস্থিত ছিলেন। ‘সিরাজ উদ্দৌলার এই প্রকান্ত ধনাগারে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ রৌপ্যমুদ্রা, ৩২ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। দুই সিন্ধুক অমুদ্রিত স্বর্ণপিণ্ড, ৪বাক্স অলঙ্কারে ব্যবহারোপযোগী হীরা, জহরত ও ২ বাক্স অখচিত চুণী, পান্না প্রভৃতি প্রস্তরখণ্ড মাত্র থাকার উল্লেখ দেখা যায়। এই প্রকাশ্য ধনাগার ব্যতীত সিরাজ উদ্দৌলার অন্তঃপুরস্থ আর একটি ধনভাণ্ডারের কথা কেহ কেহ উল্লেখ করিয়া থাকেন। তৎকালে অর্থশালী ভারতবাসিমাত্রেই নিজ নিজ অন্তঃপুরে একটি স্বতন্ত্র ধনাগার স্থাপন করিতেন। নবাব বাদশাহের ত কথাই নাই।

কথিত আছে যে, সিরাজ উদ্দৌলার অন্তঃপুরস্থ ধনাগার মধ্যে ৮ কোটী টাকা সঞ্চিত ছিল। ইংরেজেরা নাকি তাহার কোনই সন্ধান পান নাই। তাহা মীরজাফর, তাঁহার কর্মচারী আমীর বেগ খাঁ, রামচাঁদ ও নবকৃষ্ণের মধ্যে বিভক্ত হইয়া যায়। রামচাঁদ পলাশীযুদ্ধের সময় মাসিক ৬০ টাকা বেতনে কাৰ্য্য করিতেন; কিন্তু তাহার দশ বৎসর পরে মৃত্যুকালে তাঁহার নগদে ও হুণ্ডীতে ৭২ লক্ষ টাকা, ৪০০টি বড় বড় সোনার ও রূপার কলস থাকার উল্লেখ দেখা যায়। তন্মধ্যে ৮০টি সোনার ও অবশিষ্টগুলি রৌপ্যনির্মিত।

এতদ্ব্যতীত তাঁহার ১৮ লক্ষ টাকার জমীদারী ও ২ লক্ষ টাকার জহরতও ছিল। নবকৃষ্ণও মাসে ৬০ টাকা বেতন পাইতেন, তিনিও নাকি মাতৃ- শ্রাদ্ধোপলক্ষে ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়াছিলেন। মীরজাফরের প্রিয়তমা ভাৰ্য্যা মণি বেগমও হীরাঝিলের প্রাসাদলুণ্ঠনলব্ধ অর্থেই অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বরী হন। তাঁহার যাবতীয় হীরা, জহরত এই লুণ্ঠন হইতেই লব্ধ।

রামচাদ ও নবকৃষ্ণ যে সমস্ত অর্থ পাইয়াছিলেন, যদি ক্লাইব তাহা জানিতে পারিতেন, তাহা হইলে তাঁহাদিগকে আর তাহার অংশ পাইতে হইত না; সমস্তই সেই ব্রিটিশপুঙ্গধের হস্তগত হইত। মীরজাফরের নিকট হইতে ইংরেজেরা ৩,৩৮,৮৫,৭৫০ টাকা লাভ করেন। কিন্তু একবারে সমস্ত টাকা দেওয়া হয় নাই; ঐ টাকার, অধিকাংশ সিরাজের প্রকাশ্য ভাণ্ডার হইতে দেওয়া হয়। কথিত আছে যে, ধনাগার উন্মুক্ত হইবা- মাত্র তাহা হইতে ৮০ লক্ষ টাকা নৌকাযোগে কলিকাতায় রওনা হইয়া- ছিল। । ইংরেজসাধারণের প্রাপ্য অর্থ হইতে একা ক্লাইব সাহেবই ২৩ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা লাভ করিয়াছিলেন। এইরূপে, সিরাজের সমস্ত সম্পত্তি বিভক্ত হইয়া যায়। সিরাজের প্রাসাদ ধনে পরিপূর্ণ থাকায় বর্তমান সময় পর্যন্ত এরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ভগ্নাবশিষ্ট প্রাসাদের মধ্যে অনুসন্ধান করিলে এখনও অনেক অর্থ পাওয়া যাইতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১০৪)

১১:০০:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মীর- জাফর, ক্লাইব, তাঁহার সহকারী ওয়াশ, কাশীমবাজারের ওয়াট্‌ট্স, লশিংটন, দেওয়ান রামচাঁদ এবং মুন্সী নবকৃষ্ণ প্রভৃতি সেই কোবাগার লুণ্ঠনের সময় উপস্থিত ছিলেন। ‘সিরাজ উদ্দৌলার এই প্রকান্ত ধনাগারে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ রৌপ্যমুদ্রা, ৩২ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। দুই সিন্ধুক অমুদ্রিত স্বর্ণপিণ্ড, ৪বাক্স অলঙ্কারে ব্যবহারোপযোগী হীরা, জহরত ও ২ বাক্স অখচিত চুণী, পান্না প্রভৃতি প্রস্তরখণ্ড মাত্র থাকার উল্লেখ দেখা যায়। এই প্রকাশ্য ধনাগার ব্যতীত সিরাজ উদ্দৌলার অন্তঃপুরস্থ আর একটি ধনভাণ্ডারের কথা কেহ কেহ উল্লেখ করিয়া থাকেন। তৎকালে অর্থশালী ভারতবাসিমাত্রেই নিজ নিজ অন্তঃপুরে একটি স্বতন্ত্র ধনাগার স্থাপন করিতেন। নবাব বাদশাহের ত কথাই নাই।

কথিত আছে যে, সিরাজ উদ্দৌলার অন্তঃপুরস্থ ধনাগার মধ্যে ৮ কোটী টাকা সঞ্চিত ছিল। ইংরেজেরা নাকি তাহার কোনই সন্ধান পান নাই। তাহা মীরজাফর, তাঁহার কর্মচারী আমীর বেগ খাঁ, রামচাঁদ ও নবকৃষ্ণের মধ্যে বিভক্ত হইয়া যায়। রামচাঁদ পলাশীযুদ্ধের সময় মাসিক ৬০ টাকা বেতনে কাৰ্য্য করিতেন; কিন্তু তাহার দশ বৎসর পরে মৃত্যুকালে তাঁহার নগদে ও হুণ্ডীতে ৭২ লক্ষ টাকা, ৪০০টি বড় বড় সোনার ও রূপার কলস থাকার উল্লেখ দেখা যায়। তন্মধ্যে ৮০টি সোনার ও অবশিষ্টগুলি রৌপ্যনির্মিত।

এতদ্ব্যতীত তাঁহার ১৮ লক্ষ টাকার জমীদারী ও ২ লক্ষ টাকার জহরতও ছিল। নবকৃষ্ণও মাসে ৬০ টাকা বেতন পাইতেন, তিনিও নাকি মাতৃ- শ্রাদ্ধোপলক্ষে ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়াছিলেন। মীরজাফরের প্রিয়তমা ভাৰ্য্যা মণি বেগমও হীরাঝিলের প্রাসাদলুণ্ঠনলব্ধ অর্থেই অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বরী হন। তাঁহার যাবতীয় হীরা, জহরত এই লুণ্ঠন হইতেই লব্ধ।

রামচাদ ও নবকৃষ্ণ যে সমস্ত অর্থ পাইয়াছিলেন, যদি ক্লাইব তাহা জানিতে পারিতেন, তাহা হইলে তাঁহাদিগকে আর তাহার অংশ পাইতে হইত না; সমস্তই সেই ব্রিটিশপুঙ্গধের হস্তগত হইত। মীরজাফরের নিকট হইতে ইংরেজেরা ৩,৩৮,৮৫,৭৫০ টাকা লাভ করেন। কিন্তু একবারে সমস্ত টাকা দেওয়া হয় নাই; ঐ টাকার, অধিকাংশ সিরাজের প্রকাশ্য ভাণ্ডার হইতে দেওয়া হয়। কথিত আছে যে, ধনাগার উন্মুক্ত হইবা- মাত্র তাহা হইতে ৮০ লক্ষ টাকা নৌকাযোগে কলিকাতায় রওনা হইয়া- ছিল। । ইংরেজসাধারণের প্রাপ্য অর্থ হইতে একা ক্লাইব সাহেবই ২৩ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা লাভ করিয়াছিলেন। এইরূপে, সিরাজের সমস্ত সম্পত্তি বিভক্ত হইয়া যায়। সিরাজের প্রাসাদ ধনে পরিপূর্ণ থাকায় বর্তমান সময় পর্যন্ত এরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ভগ্নাবশিষ্ট প্রাসাদের মধ্যে অনুসন্ধান করিলে এখনও অনেক অর্থ পাওয়া যাইতে পারে।