শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার সাথে প্রারম্ভিক শিশু বিকাশ সম্পৃক্তকরণ এবং বাস্তবায়ন

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪, ৫.৩৩ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে, পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ২৫ কোটি শিশু দরিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা এবং অপর্যাপ্ত প্যারেন্টিং দক্ষতার কারণে তাদের সম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা অর্জনে ব্যর্থ হয়। শিশুদের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি, প্রাথমিক শৈশব উদ্দীপনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ, আইসিডিডিআর, বি-র সাসাকাওয়া অডিটোরিয়াম, মহাখালী, ঢাকা-তে এ সংক্রান্ত একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়, যেখানে সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশুদের সম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির উদ্দেশ্যে কয়েক দশকের গবেষণা উপস্থাপন করা হয়েছে।

একজন মা গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথেই শিশু বিকাশের ভিত্তি গঠিত এবং এটি শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এটি প্রাথমিক শৈশব বিকাশের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে পরিচিত। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে, শিশুর শেখার অভিজ্ঞতা তার বুদ্ধিমত্তা, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ফলে, শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, ভালোবাসা, খেলা এবং বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত একটি পরিবেশ প্রদান করা অত্যন্ত জরুরী।

শিশুর বিকাশকে উন্নত করতে, পরিবারের সবাইকে, বিশেষত বাবাদের, সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে শিশুর প্রয়োজনগুলির প্রতি মনোযোগী হওয়া, ভাষা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কথোপকথনে যুক্ত হওয়া, এবং খেলার মাধ্যমে শেখার জন্য বয়স উপযোগী খেলনা প্রদান করা। এমন যৌথ প্রচেষ্টা শিশুর বৃদ্ধি এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে একটি সমর্থনশীল পরিবেশ তৈরি করে।

আইসিডিডিআর, বি-র এমসিএইচডি বিভাগের এমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. জেনা দেরাখশানি হামাদানি তার উপস্থাপনায় দেখিয়েছেন যে আইসিডিডিআর, বি-র বিস্তৃত গবেষণা অনুযায়ী খেলাধুলা ভিত্তিক শিশু লালন-পালন কর্মসূচি শিশুদের জ্ঞানগত, ভাষাগত, শারীরিক এবং আচরণগত বিকাশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে।

ড. হামাদানি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর আওতায় প্রাথমিক শৈশব বিকাশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, বিশেষ করে এসডিজি ৪.২ এর লক্ষ্য হচ্ছে সব মেয়ে এবং ছেলে শিশুদের মানসম্পন্ন প্রাথমিক শৈশব বিকাশ, এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা যাতে তারা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সরকার, আইসিডিডিআর, বি-র সাথে অংশীদারিত্বে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অধীনে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক শৈশব বিকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে যাতে অভিভাবকদের শিশুদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং সামগ্রিক শিশুর বিকাশ সম্পর্কে প্রচার করা যায়।

বর্তমানে, এই কর্মসূচিটি চারটি জেলার (নরসিংদি, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষীপুর) ২১টি উপজেলার ৬১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৪৮৫ জন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাথমিক শৈশব বিকাশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যারা পরে ১,৮২১ জন সম্মুখসারির স্বাস্থ্য কর্মীদের এই সেবা প্রদানে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যার মধ্যে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) এবং পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডবিউএ) অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৬-৩৬ মাস বয়সী শিশুদের ১৪,০০০ এর বেশি মা বা যত্নদাতাদের প্রশিক্ষিত হয়েছেন। আইসিডিডিআর, বি-র মূল্যায়নে দেখা গেছে যে অংশগ্রহণকারী মায়েরা শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে উন্নত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছেন, যা প্রতিভাবান শিশুদের বিকাশ এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে।

উপসংহারে ড. হামাদানি বলেন, “বয়স উপযোগী খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু বিকাশ তরান্বিত করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায়, আশা করি আমরা দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে কার্যক্রমটি কার্যকরভাবে সম্প্রসারণ করতে পারব এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করতে পারব।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এছাড়াও, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, এমপি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

আইসিডিডিআর, বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ তাঁর স্বাগত বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রীদের আইসিডিডিআর, বি তে প্রথমবারের মতো আগমনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রাথমিক শৈশব বিকাশ কর্মসূচিতে সরকারের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন। স্বাস্থ্যখাতে এবং জনস্বাস্থ্যে আইসিডিডিআরবি-র উল্লেখযোগ্য অবদানগুলো তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী ডাঃ সেন প্রাথমিক শৈশব বিকাশের গুরুত্বের উপর জোর দেন এবং এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “শিশুরাই এদেশের ভবিষ্যৎ। শৈশব থেকেই যদি আমরা তাদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারি, নিঃসন্দেহে তারা ভবিষ্যতে দেশের কাণ্ডারি হবে। সুতরাং, আমরা শিশু বিকাশের জন্য আইসিডিডিআর, বি-র অংশীদার হিসাবে একসাথে কাজ চালিয়ে যাব।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডাঃ বেগম রোকেয়া সুলতানা, এমপি এমন একটি সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য আইসিডিডিআর, বি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে আইসিডিডিআর, বি-র কাজ প্রশংসনীয়। শিশুরা যে পরিবেশে বেড়ে উঠছে তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে তাদের বাড়ি, আশেপাশের জায়গা, স্কুল এবং আরও অনেক কিছু। তাদের বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।”

আইসিডিডিআর, বি-র এমসিএইচডি বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. শামস এল আরেফিন সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি আইসিডিডিআর, বি এর সাথে অংশীদারিত্বে উদ্যোগটি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশ বর্ধিত পরিবার থেকে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি স্ট্রাকচারে রূপান্তরিত হওয়ায় প্যারেন্টাল জ্ঞান বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্ব তুলে ধরেন। প্রথমবারের মতো বাবা-মা হওয়ার কারণে যাদের সঠিক শিশুপ্রতিপালনের জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তিনি তাদের সন্তানদের মঙ্গল ও বিকাশ নিশ্চিত করতে লক্ষ্যযুক্ত সহায়তা এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন লাইন ডাইরেক্টর, সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, এবং শিশু বিকাশ উদ্যোগের সাথে যুক্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024