১২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৮৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • 19
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

তৎকালীন গ্রামীণ জীবনে জমিদার ছিল সর্বময় কর্তা। তিতুর শিষ্যরা জমিদারদের প্রতি একটা ঔদ্ধত্যের ভাব দেখাতে শুরু করল। এই এলাকার সমস্ত জমিদার ছিল হিন্দু এবং চাষিদের মধ্যে এক বিপুল অংশ চাষি ও কারিগররা ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বী। নানারকম নিষ্ঠুর জবরদস্তিমূলক নিপীড়নের শিকার এলাকার চাষিরা। প্রতিনিয়ত খাজনা বাড়ছে সেই সঙ্গে নানাধরনের হিসাব বহির্ভূত খাজনা। খাজনা মুদ্রায় দেবার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, আর সে যুগে মুদ্রার সংকট লেগেই ছিল। বিভিন্ন ধরণের আবয়াবের পাশাপাশি হিন্দু জমিদারদের পূজা উৎসবে আদায় ওয়াহাবি প্রজাদের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে।

হফতম্ আইনের সুযোগ নিয়ে প্রজাদের ইচ্ছামত কয়েদ করা ছিল সেদিনকার জমিদারদের রেওয়াজ। এ ছাড়া মুসলমান প্রজাদের বিক্ষোভের আরও সঙ্গত কারণ ছিল, কোম্পানির রাজত্বের নানাধরনের আইনকানুনে এদেরকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। সরকার লাখোয়াজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করায় স্থানীয় অনেক মুসলমান জমিদারের সম্পত্তি হিন্দু জমিদারদের হাতে চলে গেল। কোর্টে ফারসি ভাষার স্থান ধীরে ধীরে ইংরেজি ভাষা দখল করে নিচ্ছিল মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অবলুপ্তির শঙ্কা দেখা দিল। বেশ কিছু ফারসি ভাষার মৌলভী কোর্টের চাকরি থেকে বিতাড়িত হল, মুসলমানদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বাধানিষেধ প্রবল হচ্ছিল।

নারকেলবেড়িয়ার আশে পাশের গুঁড়া, খোড়গাছি, নগরপুর, তারাগুনিয়া প্রভৃতি এলাকার হিন্দু জমিদাররা নানাধরণের বিভেদমূলক খাজনা আদায় করতে থাকে, চাষিদের সব চাইতে বিক্ষুব্ধ করে তোলে হিন্দু জমিদারদের দাড়ির ওপর কর। কলভিন অবশ্য তার রির্পোটে উল্লেখ করেছেন এই ট্যাক্স চাপানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেকক্ষেত্রে হিন্দু জমিদারের পাইক বরকন্দাজরা খাজনা না পেলে মুসলমানদের দাড়ি ছিঁড়ে নিত। এ ঘটনা তিতুর সঙ্গীদের দারুণভাবে উত্তেজিত করে। নরহরি কবিরাজ এ প্রসঙ্গে বলেছেন This tax on beard was the last straw on the camel back. N. Kaviraj: The Wahabi & Ferzi rebels of Bengal.

১৮৩১ এর ২৭ শে জুন বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট বাগুন্ডির লবণ চৌকিগুলির সুপারের মাধ্যমে খবর পেলেন পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় দাড়ির ওপর ট্যাক্স ধরেছেন মাথা পিছু ২ টাকা আট আনা। চাষিদের প্রতিবাদ স্তব্ধ করার জন্য প্রায় তিনশ পাইক বরকন্দাজ লাঠিবল্লম তরবারিতে সজ্জিত হয়ে জমিদারের পক্ষে চাষিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং একটা মসজিদে আগুন ধরানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বসিরহাট থানা সরকারকে মিথ্যা সংবাদ সরবরাহ করে বলে জমিদার কোন অন্যায় করেনি। তিতুর দলবল জমিদারকে বিপদে ফেলার জন্য তারা নিজেরা মসজিদে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া পুঁড়ার জমিদার তিতুমির ও তার ভাইপো গোলাম মাসুমকে মিথ্যা ডাকাতির কেসে জড়াবার চেষ্টা করে।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৮৫)

১২:০০:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

তৎকালীন গ্রামীণ জীবনে জমিদার ছিল সর্বময় কর্তা। তিতুর শিষ্যরা জমিদারদের প্রতি একটা ঔদ্ধত্যের ভাব দেখাতে শুরু করল। এই এলাকার সমস্ত জমিদার ছিল হিন্দু এবং চাষিদের মধ্যে এক বিপুল অংশ চাষি ও কারিগররা ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বী। নানারকম নিষ্ঠুর জবরদস্তিমূলক নিপীড়নের শিকার এলাকার চাষিরা। প্রতিনিয়ত খাজনা বাড়ছে সেই সঙ্গে নানাধরনের হিসাব বহির্ভূত খাজনা। খাজনা মুদ্রায় দেবার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, আর সে যুগে মুদ্রার সংকট লেগেই ছিল। বিভিন্ন ধরণের আবয়াবের পাশাপাশি হিন্দু জমিদারদের পূজা উৎসবে আদায় ওয়াহাবি প্রজাদের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে।

হফতম্ আইনের সুযোগ নিয়ে প্রজাদের ইচ্ছামত কয়েদ করা ছিল সেদিনকার জমিদারদের রেওয়াজ। এ ছাড়া মুসলমান প্রজাদের বিক্ষোভের আরও সঙ্গত কারণ ছিল, কোম্পানির রাজত্বের নানাধরনের আইনকানুনে এদেরকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। সরকার লাখোয়াজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করায় স্থানীয় অনেক মুসলমান জমিদারের সম্পত্তি হিন্দু জমিদারদের হাতে চলে গেল। কোর্টে ফারসি ভাষার স্থান ধীরে ধীরে ইংরেজি ভাষা দখল করে নিচ্ছিল মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অবলুপ্তির শঙ্কা দেখা দিল। বেশ কিছু ফারসি ভাষার মৌলভী কোর্টের চাকরি থেকে বিতাড়িত হল, মুসলমানদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বাধানিষেধ প্রবল হচ্ছিল।

নারকেলবেড়িয়ার আশে পাশের গুঁড়া, খোড়গাছি, নগরপুর, তারাগুনিয়া প্রভৃতি এলাকার হিন্দু জমিদাররা নানাধরণের বিভেদমূলক খাজনা আদায় করতে থাকে, চাষিদের সব চাইতে বিক্ষুব্ধ করে তোলে হিন্দু জমিদারদের দাড়ির ওপর কর। কলভিন অবশ্য তার রির্পোটে উল্লেখ করেছেন এই ট্যাক্স চাপানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেকক্ষেত্রে হিন্দু জমিদারের পাইক বরকন্দাজরা খাজনা না পেলে মুসলমানদের দাড়ি ছিঁড়ে নিত। এ ঘটনা তিতুর সঙ্গীদের দারুণভাবে উত্তেজিত করে। নরহরি কবিরাজ এ প্রসঙ্গে বলেছেন This tax on beard was the last straw on the camel back. N. Kaviraj: The Wahabi & Ferzi rebels of Bengal.

১৮৩১ এর ২৭ শে জুন বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট বাগুন্ডির লবণ চৌকিগুলির সুপারের মাধ্যমে খবর পেলেন পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় দাড়ির ওপর ট্যাক্স ধরেছেন মাথা পিছু ২ টাকা আট আনা। চাষিদের প্রতিবাদ স্তব্ধ করার জন্য প্রায় তিনশ পাইক বরকন্দাজ লাঠিবল্লম তরবারিতে সজ্জিত হয়ে জমিদারের পক্ষে চাষিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং একটা মসজিদে আগুন ধরানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বসিরহাট থানা সরকারকে মিথ্যা সংবাদ সরবরাহ করে বলে জমিদার কোন অন্যায় করেনি। তিতুর দলবল জমিদারকে বিপদে ফেলার জন্য তারা নিজেরা মসজিদে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া পুঁড়ার জমিদার তিতুমির ও তার ভাইপো গোলাম মাসুমকে মিথ্যা ডাকাতির কেসে জড়াবার চেষ্টা করে।