০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৯২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • 20
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সংকট দেখা দিল, ধর্মগোলার ধান আত্মসাতের ঘটনা ঘটে গেল, কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক তার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করল। ১৯৪৩-৪৪ এর মধ্যে সমবায় ব্যাঙ্ক ও ধর্মগোলার হিসাবে কারচুপি লক্ষ করা যাচ্ছে; ব্যাঙ্কে আমানতের ব্যাপারে চাষিরা আর উৎসাহ দেখাচ্ছে না যারা ঋণ নিয়েছে তারা ঋণ শোধ করতে পারছে না। সাতজেলিয়ায় এমিলবাড়ি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের হিসাব দেখে ১৭-০২-৮৮ সুপারভাইজর মন্তব্য করেছেন- ‘অদ্য পর্যন্ত ধর্মগোলার হিসাবে যাহা দৃষ্ট হইল তাহাতে ১৩৪৯ সালে মোট ধান্য আদায় আঠারো বিশ নয় কুড়ি দুই পালি হইয়াছিল।

উক্ত ধান্য ১৩৫০ সালে দাদনের পর দেখা যায় দুই বিশ এক কুড়ি দুই পালি ধান্য কম। হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন ধান্য শুক্তি গিয়াছে।”- এভাবে ধীরে ধীরে দুর্নীতি, পরিচালকদের ব্যর্থতা, চাষিদের সময়মত ঋণ পাওয়া এবং চাষিদের পক্ষে সময়মত ঋণের টাকা শোধ না করার ফলে ধীরে ধীরে সমবায় ব্যাঙ্ক এর করুণ দশা লক্ষ করা যাচ্ছিল। চাষিরা সংঘবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদে এগিয়ে এল। গজেন মাইতি সেবক দাসের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হল। সমবায় থেকে চাষিদের ধান ঋণ হিসাবে দাদন দেওয়া হত। চাষিরা ধানে সেই ঋণ শোধ করত- দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি চালু ছিল। জমিদারির মধ্যে রাইসমিল ছিল- মিলের মালিক ছিল এস্টেট কর্মচারীরা চাষিদের ধান দেবার সময় ওজনে কম দিত এবং ধান নেবার সময় বেশি করে নিত।

ওজনের কারচুপির ব্যাপারে আন্দোলন হয়। গোসাবা এস্টেটের অভ্যন্তরে কয়েকটা বড় বড় খাল ছিল। চাষিরা ঐ সব খালের মাছ ধরত। ১৯৪৩-৪৪ সালের দিকে ঐ খাল থেকে চাষিদের বঞ্চিত করে কয়েকজন লোককে খাল লীজ দেওয়া হল- এর বিরুদ্ধে চাষিরা আন্দোলন করে এই আন্দোলনে পুলিশী জুলুম চলে। কৃষি চুক্তিপত্র বাতিলের দাবিতে সাতজেলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে তীব্র আন্দোলন হয়। এসব জায়গায় প্রচুর কৃষিজমি হ্যামিলটন এস্টেটের খাস জমি হিসাবে চিহ্নিত ছিল। চাষিদের কৃষি মজুরি চুক্তি এ করে জমি চাষ করতে দিত। উৎপন্ন ফসল থেকে চাষিদের খরচ বাবদ একটা অংশ বাদ দিয়ে বাকি ধান জমিদারের গোলায় তুলে দিয়ে আসতে হত। চাষিদের খরচ হিসাব করার সময় জমিদারের কর্মচারীরা চেষ্টা করত কতটা কম দেওয়া যায়।

এসময় সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে তেভাগার দাবিতে কৃষকরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে- গোসাবার হ্যামিলটন স্টেটের কৃষকরাও দাবি তুলল কৃষিমজুরি চুক্তিপত্র বাতিল কর- চাষিকে ভাগচাষি হিসাবে তার অধিকার দিতে হবে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে গোসাবার কৃষকরা এজন্য দুর্বার আন্দোলন করেছেন। পরবর্তীকালে সেবক দাস, গজেন মাইতির সঙ্গে রামকৃষ্ণ পাঠক নেতৃত্বে উঠে আসেন। স্বাধীনতার প্রাকমুহূর্তে বোঝা গেল হ্যামিলটন। এস্টেটের অভ্যন্তরে সন্দেহ অবিশ্বাস ব্যক্তিগত লাভ লোকসান দানা বেঁধে-উঠেছে- মানবপ্রেমিক ড্যানিয়েল হ্যামিলটন-এর স্বপ্ন সাধনা ব্যর্থতার চোরা-বালিতে আটকে পড়ল। সামাজিক অর্থনৈতিক বিরুদ্ধে পরিবেশে তার সমস্ত পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ল।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৯২)

১২:০০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সংকট দেখা দিল, ধর্মগোলার ধান আত্মসাতের ঘটনা ঘটে গেল, কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক তার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করল। ১৯৪৩-৪৪ এর মধ্যে সমবায় ব্যাঙ্ক ও ধর্মগোলার হিসাবে কারচুপি লক্ষ করা যাচ্ছে; ব্যাঙ্কে আমানতের ব্যাপারে চাষিরা আর উৎসাহ দেখাচ্ছে না যারা ঋণ নিয়েছে তারা ঋণ শোধ করতে পারছে না। সাতজেলিয়ায় এমিলবাড়ি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের হিসাব দেখে ১৭-০২-৮৮ সুপারভাইজর মন্তব্য করেছেন- ‘অদ্য পর্যন্ত ধর্মগোলার হিসাবে যাহা দৃষ্ট হইল তাহাতে ১৩৪৯ সালে মোট ধান্য আদায় আঠারো বিশ নয় কুড়ি দুই পালি হইয়াছিল।

উক্ত ধান্য ১৩৫০ সালে দাদনের পর দেখা যায় দুই বিশ এক কুড়ি দুই পালি ধান্য কম। হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন ধান্য শুক্তি গিয়াছে।”- এভাবে ধীরে ধীরে দুর্নীতি, পরিচালকদের ব্যর্থতা, চাষিদের সময়মত ঋণ পাওয়া এবং চাষিদের পক্ষে সময়মত ঋণের টাকা শোধ না করার ফলে ধীরে ধীরে সমবায় ব্যাঙ্ক এর করুণ দশা লক্ষ করা যাচ্ছিল। চাষিরা সংঘবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদে এগিয়ে এল। গজেন মাইতি সেবক দাসের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হল। সমবায় থেকে চাষিদের ধান ঋণ হিসাবে দাদন দেওয়া হত। চাষিরা ধানে সেই ঋণ শোধ করত- দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি চালু ছিল। জমিদারির মধ্যে রাইসমিল ছিল- মিলের মালিক ছিল এস্টেট কর্মচারীরা চাষিদের ধান দেবার সময় ওজনে কম দিত এবং ধান নেবার সময় বেশি করে নিত।

ওজনের কারচুপির ব্যাপারে আন্দোলন হয়। গোসাবা এস্টেটের অভ্যন্তরে কয়েকটা বড় বড় খাল ছিল। চাষিরা ঐ সব খালের মাছ ধরত। ১৯৪৩-৪৪ সালের দিকে ঐ খাল থেকে চাষিদের বঞ্চিত করে কয়েকজন লোককে খাল লীজ দেওয়া হল- এর বিরুদ্ধে চাষিরা আন্দোলন করে এই আন্দোলনে পুলিশী জুলুম চলে। কৃষি চুক্তিপত্র বাতিলের দাবিতে সাতজেলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে তীব্র আন্দোলন হয়। এসব জায়গায় প্রচুর কৃষিজমি হ্যামিলটন এস্টেটের খাস জমি হিসাবে চিহ্নিত ছিল। চাষিদের কৃষি মজুরি চুক্তি এ করে জমি চাষ করতে দিত। উৎপন্ন ফসল থেকে চাষিদের খরচ বাবদ একটা অংশ বাদ দিয়ে বাকি ধান জমিদারের গোলায় তুলে দিয়ে আসতে হত। চাষিদের খরচ হিসাব করার সময় জমিদারের কর্মচারীরা চেষ্টা করত কতটা কম দেওয়া যায়।

এসময় সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে তেভাগার দাবিতে কৃষকরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে- গোসাবার হ্যামিলটন স্টেটের কৃষকরাও দাবি তুলল কৃষিমজুরি চুক্তিপত্র বাতিল কর- চাষিকে ভাগচাষি হিসাবে তার অধিকার দিতে হবে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে গোসাবার কৃষকরা এজন্য দুর্বার আন্দোলন করেছেন। পরবর্তীকালে সেবক দাস, গজেন মাইতির সঙ্গে রামকৃষ্ণ পাঠক নেতৃত্বে উঠে আসেন। স্বাধীনতার প্রাকমুহূর্তে বোঝা গেল হ্যামিলটন। এস্টেটের অভ্যন্তরে সন্দেহ অবিশ্বাস ব্যক্তিগত লাভ লোকসান দানা বেঁধে-উঠেছে- মানবপ্রেমিক ড্যানিয়েল হ্যামিলটন-এর স্বপ্ন সাধনা ব্যর্থতার চোরা-বালিতে আটকে পড়ল। সামাজিক অর্থনৈতিক বিরুদ্ধে পরিবেশে তার সমস্ত পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ল।