শশাঙ্ক মণ্ডল
দোহাই আল্লা মাথা খাও
আমায় ফেইল্যা কনে যাও
মোর বাপ নাই মাও নাই
এক্কা ঘরে রাত কাটাই
শীতের রাতে ঘোর জড়াতে
পরাণডা মোর কাঁপতে থাকে
মরদ আমায় ফেলে কনে যাও।
জারি গায়ক বা বরাতী হিসাবে যশোর খুলনার কালীশঙ্কর পুরের মেহের চাঁদ, দীঘল কান্দি গ্রামের হাকিমচাঁদ, কলস বিশ্বাস, আরজেন শেখ, আসরফ বিশ্বাস, মেহের বিশ্বাস প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া এবং হাসনাবাদ থানায় কয়েক জন জারি গায়ক দ্বিতীয় মহাযুদ্ধর পূর্বকালে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। হাসনাবাদের মাখালগাছা হাবাসপুর গ্রামের আকবর আলী স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুনামের সাথে গান করেছেন। মূল গায়েনের হাতে থাকে চামর। পায়ে ঘুঙুর মাথায় কালো টুপি। মূল গায়েনের সাথে আরও কয়েকজন গায়ক ধুয়ো ধরে গান করে। হাসান হোসেনের করুন বিয়োগান্ত কাহিনী সুর করে দর্শকদের সামনে উপস্থিত করা হত। জারি গানের এ ধরনের পদ বসিরহাট হাসনাবাদে এখনো শোনা যায় মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায়-
আকবর আলি কেঁদে বলে শোনো বাবা পানি চাই
পানি বিনে আর বাঁচিনে দেহ কলেজা হল ছাই।।
বারাসে গানে অন্তহীন বেদনা ঝরে পড়ে। কোন অজানা বন্ধুকে প্রাণের আকৃতিতে বধূ ডাকে, কেন ডাকে কে জানে। জলতরঙ্গে ডিঙাখানি ভেসে চলেছে, কোথায় তার গন্তব্যস্থল কোথা থেকে তার অগমণ কোন কিছুই সে জানে না তবু প্রাণের মধ্যে গভীর আকৃতি জেগে ওঠে। অজানা অচেনা বন্ধুর উদ্দেশ্যে সে তার প্রাণের আকৃতি গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। আকৃতি ভরা সুরে সে অজানা বন্ধুর প্রতি সে আবেদন পাঠায়-
কোন গেরামের নাওরে ভাই
কোন গেরামে যাও
একখানা কথা কও না কও
পান খেয়ে যাও।
এই মোহ জীবনে ধীরে ধীরে মদিরার মতো প্রবেশ করে। বিরহী নারীর বেদনার পাশাপাশি বারাসের মধ্য দিয়ে পরের ঘরে চলে যাওয়া কন্যার জন্য মর্মবিদারী হাহাকার সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ঝঙ্কৃত হয়। সন্তানহারা জননীর বেদনা অথৈ দরিয়ার সামনে এমনভাবে প্রকাশিত হয়।
আগে যদি জানতাম লো ময়না
তোরে নিবে পরে পাটার চন্দন পাটায় না থুইয়া
সুন্দর মতি ময়নারে
তোরে লইতাম কোলে লো।
সুন্দর মতি ময়নারে।
বিয়ের গান হলেও এর মধ্য দিয়ে এক সর্বজনীন বেদনার আর্তি ছাড়িয়ে পড়েছে- আশিক্ষিত পল্লীকবির এই গান উন্নত কাব্যের মর্যাদা লাভ করেছে।