সারাক্ষণ ডেস্ক
বাংলাদেশের ৪৭ জন নাগরিক আজ গোবিন্দগঞ্জে আদিবাসী সাঁওতাল নারীকে লাঞ্ছিত করা এবং তাদের বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগের তীব্র প্রতিবাদ ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
“আমরা অত্যন্ত ক্ষোভ ও পরিতাপের সাথে জানলাম যে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় গত ৩ জানুয়ারি,২০২৫ সকাল ১০টার দিকে আাদিবাসীদের ভোগদখলীয় জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকেরা মাটি ভরাট করতে শুরু করলে কয়েকজন যুবক তাতে বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন নেকোলাস মুর্মুর নামের এক যুবককে মারধর করে। খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরেন নামের এক যুবক প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাঁকেও লাঠি দিয়ে মারধর করার হুমকি দেয়। এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ফেরাতে গেলে চেয়ারম্যান তাঁর মাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার জের ধরে ঐদিনই রাত ১১টার দিকে ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে মাটির ঘরের ভেতরের আসবাব, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে গেছে। এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গতকাল শনিবার গোবিন্দগঞ্জ থানায় স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০/ ২৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে স্বাধীনতার ৫৩ বৎসরে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। কারণ হিসেবে মনে করা হয়, তারা নানাভাবে প্রতারিত ও অত্যাচারিত হয়ে দেশত্যাগ করেছে। বিরাট রাজার পুরাতন ও বহুদিনের প্রত্নতত্ব বিভাগ ও গোবিন্দগঞ্জ – জয়পুরহাট রাস্তা সংলগ্ন গ্ৰামের বংশানুক্রমিকভাবে ভোগদখল করা বেশ কয়েক একর জমি স্বেচ্ছায় প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ে জন্য দান করেছিলেন এই সাঁওতালরা। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি । এমনকি তারা যে দোকান ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছে, সেগুলোও প্রধানত বাঙ্গালি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ জোর করে ও নানা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দখল করে নিয়েছে। সাঁওতাল আদিবাসীদের গ্ৰামের মাঝখানে সরকারি খাস পুকুর রয়েছে, যা সর্ব সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য, সেটিও অভিযোগমতে বর্তমান ৪ নং রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জাল দলিলকৃত পুকুর বলে দাবি করছে। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ও বিভাজন সৃষ্টি করার মাধ্যমে জমি জবরদখল ও ভয় দেখিয়ে এই শ্রেণীর লোকেরাই কেড়ে নিয়েছে প্রায় ২৫০ একর জমি। উক্ত চেয়ারম্যান স্থানীয় বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা।
এটা তো ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত যে, পাকিস্তান আমল থেকে অন্য অঞ্চলের মতো বারংবার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের উপর প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলের নেতা বা তাদের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা সাঁওতালদের ভূসম্পত্তির দখল নিতে তৎপর থেকেছে । কখনও রাষ্ট্র তাদের জমি কেড়ে নিয়েছে চিনিকলের নামে আবার কখনও পুলিশ প্রশাসন তাদের বাড়ী ঘরে আগুন দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। সেইসাথে স্থানীয় বাঙালী প্রভাবশালীরা তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বাড়ী ঘর দখল করার ফন্দি-ফিকির বাস্তবায়ন করেছে। আজ দেশ যখন সকল বৈষম্যের শৃংখল ভাঙ্গার দাবিতে সোচ্চার তখন সাঁওতালদের উপর এমন অন্যায় অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা তীব্রতম ভাষায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। লাঞ্ছিত নারী ফিলোমিনা হাঁসদার উপর শারীরিক নির্যাতন এবং ব্রিটিশ সরেনের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
এ ঘটনায় জুলিয়াস সরেন বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ ৬ জলনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০/২৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে উক্ত চেয়ারম্যানকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি বহিষ্কার যথেষ্ট নয়, দলের শীর্ষ অবস্থান থেকে এধরনের দখলবাজির বিরুদ্ধে এবং আদিবাসী সহ সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অংগীকার ঘোষণার জন্য বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের বিশেষ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাদের সকলের প্রতি আমরা আদিবাসী ও সংখ্যালঘুসহ সকল প্রান্তিক মানুষের অধিকার হরণ তো নয়ই, বরং তাদের সুরক্ষা দিতে সুস্পষ্ট প্রত্যয় ঘোষণা দেবার জোর আহবান জানাচ্ছি।
সেইসাথে গোবিন্দগঞ্জের রাজাহার ইউনিয়নের সাঁওতালদের ২৫০ একর জমিসহ খাস পুকুর কি প্রক্রিয়ায় বেদখল হলো তারও উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। সেইসাথে বেআইনী জবর দখলকারী এবং ভূমি অফিসের কর্তাদের সহযোগী বর্তমান কর্মচারী, কর্মকর্তা কিংবা সাবেক ভূমি কর্মচারীদের মধ্যে যারা বেআইনী দখলে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
- আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
- খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
- ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
- ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং রিসার্স ফেলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
- এড. জে. আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও চেয়ারপার্সন, আসক
- ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রীব
- ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্টাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি
- ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট
- তাসলিমা ইসলাম, প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত), বেলা
- শিরীন পারভীন হক, সদস্য, নারীপক্ষ
- ড. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)
- ড. ফস্টিনা পেররা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
- ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী
- রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
- মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্রাক বিশ^বিদ্যালয়
- ড. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
- মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- অ্যাড. তবারক হোসেইন আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- অ্যাড. সালমা আলি, নির্বাহী পরিচালক, বি এন ডব্লিউ এল এ
- সাঈদ নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রনী ব্যাংক পিএলসি
- সালেহ আহমেদ,সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
- মনিন্দ্র কুমার নাথ, ভারপ্রাপ্ত সা্ধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
- রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক
- তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
- রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী
- সায়দিয়াগুলরুখ,সাংবাদিক ও গবেষক
- রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী
- জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ
- পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন
- অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
- অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- অ্যাড. এম এম খালেকুজ্জামান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- অ্যাড. নাজমুল হুদা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- অ্যাড. রেজাউল হক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রিয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
- হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী
- মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রæপ মেম্বার, সাঙ্গাত