শ্রী নিখিলনাথ রায়
অল্পদিনের মধ্যে হেষ্টিংসের অত্যাচার, অবিচার ও কোম্পানীর ক্ষতিকর কার্য্যের কথা ইংলণ্ডে আন্দোলিত হইতে লাগিল। সকলে অবগত হইলেন যে, হেষ্টিংস আপনার কতিপয় প্রিয়পাত্রের জন্য সমস্ত বিধিব্যবস্থা লঙ্ঘন করিয়াছেন এবং স্বয়ং সর্ব্বেসর্ব্বা হইয়া, যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। দেশের শাসনকর্তার এরূপ যথেচ্ছাচারিতা সর্ব্বতোভাবে দমন করা অবশ্যক; তজ্জন্ত তাহার প্রতিবিধানের চেষ্টা হইতে লাগিল।
হেষ্টিংসের এই সমস্ত অপকার্য্যের কথা ডিরেক্টারগণের কর্ণগোচর হইলে, তাঁহারা বুঝিতে পারিলেন যে, হেষ্টিংসের যথেচ্ছাচারিতায় বাস্তবিকই কোম্পানীর যথেষ্ট ক্ষতি হইতেছে। তখন তাঁহারা হেষ্টিংস সাহেবের কৈফিয়ৎ চাহিয়া পাঠান। হেষ্টিংস ১৭৭৫ খৃঃ অব্দের মার্চ মাসে তাঁহাদিগকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, কান্ত বাবু অনেক জমিদারী তাঁহার অজ্ঞাতভাবে এবং প্রায় সমস্তই তাঁহার উপদেশের বিরুদ্ধে লইয়া- ছেন; ইহাতে কোন প্রকার জুলুম বা কর্তৃত্ব প্রকাশ করা, তাঁহার অধি- কারবিরুদ্ধ।
এ দেশের অন্যান্য লোকেরা যে স্বাধীনতাটুকু ভোগ করিতেছে, কান্তবাবু তাঁহার কর্মচারী বলিয়া হেষ্টিংস তাঁহাকে তাহা হইতে বিরত করিতে পারেন না। কান্তবাবু যে সকল জমিদারী ইস্তাফা দিয়াছেন, তাহা হেষ্টিংসের অনুমতিক্রমেই। কারণ সে সকলের পরিচালনা করিতে, হয় ত, কান্তবাবুকে ক্ষমতার অতিরিক্ত কার্য্য করিতে হইবে এবং ভবিষ্যতে তজ্জন্য যে সকল গোলযোগ হইবে, তৎসমুদায়ের বিচার তাঁহার নিকট উপস্থিত হওয়া তিনি ভালবাসেন না। হেষ্টিংস সাহেবের এই সকল কথা যে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য, তাহা সকলে অনুমান করিতে পারেন।
তাঁহার উপরোক্ত কথার মধ্যে অনেকগুলি পরস্পরের বিরোধী। তাঁহার অজ্ঞাতে ও উপদেশের বিরুদ্ধে কান্ত বাবু যে, এই সকল জমিদারী লইয়াছিলেন, ইহা কে বিশ্বাস করিতে পারে? অথচ তজ্জন্য তিনি কান্ত বাবুকে কোন কথাই বলেন নাই। ডিরেক্টারেরা ইহাতে সন্তুষ্ট না হইয়া এই মর্মে লিখিয়া পাঠাই- লেন যে, ভূতপূর্ব্ব প্রেসিডেন্ট রাজস্বসংক্রান্ত বিধির বিরুদ্ধে কান্ত বাবু প্রভৃতিকে জমিদারী বা জমিদারীর জামীন হইতে অনুমতিদানে এবং পরে তাঁহাদিগকে জামীনতি হইতে নিষ্কৃতি দিয়া কোম্পানীর যে সকল ক্ষতি করিয়াছেন, তাহা অতীব গর্হিত।