শ্রী নিখিলনাথ রায়
কান্ত বাবুকে এইরূপ জমিদারী প্রদান করার জন্য হেষ্টিংসকে সেই ব্রিটিশ জাতির প্রতিনিধি- গণের সমক্ষে অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হইয়াছিল। হেষ্টিংস কান্ত বাবুর জন্য এত লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছিলেন কেন? তিনি বাস্তবিক কি কান্ত বাবুর প্রত্যুপকারের জন্মই এইরূপ অবমাননার ডালি স্বীয় মস্তকে লইতে স্বীকৃত হইয়াছিলেন? অবশ্য তাহা যে কিয়ৎ- পরিমাণে সত্য, ইহা নিঃসন্দেহই বলা যাইতে পারে। কিন্তু হেষ্টিংস সাহেব কেবলই যে কান্ত বাবুব প্রত্যুপকার স্মরণ করিয়া এরূপ লাঞ্ছনা ভোগ করিতে স্বাকৃত হইয়াছিলেন, তাহা আমরা সম্পূর্ণ রূপে বিশ্বাস করিতে পারি না।
প্রত্যুপকারের সহিত স্বার্থপরতারও মিশ্রণ ছিল। তাঁহার হৃদয় তত উচ্চ হইলে, আজ তাঁহার অত্যাচারাবলী বিভীষিকাময়ী মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বঙ্গদেশ কাশীধাম বা অযোধ্যার জনগণের মানস-নেত্রের সমক্ষে নৃত্য করিয়া বেড়াইত না। আমাদের বিবেচনায় কান্ত বাবুর সহিত যে সমস্ত জমিদারীর বন্দোবস্ত ছিল, তাহার অধিকাংশই হেষ্টিংস সাহেবের নিজের বলিয়া বোধ হয়। কান্ত বাবুর জমিদারীর সহিত হেষ্টিংস সাহেবের যে বিশেষরূপ সম্বন্ধ ছিল, তাহা মহামতি বার্ক স্পষ্টাক্ষরে বলিয়াছেন।
তিনি বলেন যে, ইউরো- পীয় কর্মচারিগণ অনেক সময়ে এই জমিদারী পর পর ৩৩৪ জনের বেনামীতে লইতেন। হেষ্টিংস কান্ত বাবুর বেনামীতে অনেক জমিদারী লইয়াছিলেন; নতুবা কান্তবাবুর প্রতি তাঁহার এত অনুগ্রহ হইবে কেন? হেষ্টিংসের সহিত কান্ত বাবুর এক বৎসরের পরিচয়ে এরূপ বন্ধুতা হইতে পারে না যে, তিনি তাঁহার এরূপ সুবিধা করিয়া দেন। পূর্ব্বে কান্ত বাবু সাইক্স সাহেবের কর্মচারী ছিলেন।
তিনিই হেষ্টিংস সাহেবের নিকট কান্ত বাবুর জন্য অনুরোধ করেন; প্রকৃত বিষয়ের অনুমান করিতে পারেন’। সুতরাং ইহা হইতে সকলে হেষ্টিংস সাহেবের সহিত কান্তবাবুর যে পূর্ব্বে পরিচয় ছিল না, বার্কের এ কথা প্রকৃত নহে। আমরা পূর্ব্বে সে সমস্ত বিষয়ের উল্লেখ করিয়াছি এবং তিনি এক সময়ে বিলাত হইতে কান্ত বাবুর নিকট কিছু টাকা চাহিয়া পাঠান, তাহাও উল্লিখিত হইয়াছে। কর্ণেল মন্দনও একস্থলে উল্লেখ করিয়াছেন যে, হেষ্টিংস প্রথমে এদেশে আসিলে, কান্তবাবু তাঁহার অধীনে ১৫।২০ টাকা বেতনে নিযুক্ত হন।