সত্যেন্দ্রকুমার বসু
এই স্থির ‘ক’রে, আরও কয়েকজন সন্ন্যাসীর সঙ্গে হিউএনচাঙ সম্রাট থাই-চুঙের কাছে আবেদন করলেন যে, তাঁদের চীনদেশ ত্যাগ ক’রে যেতে অনুমতি দেওয়া হোক। থাই-চুঙের সাম্রাজ্য তখনও ভালো ক’রে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তিনি ঐ বিপদসংকুল পথে যাত্রা করতে অনুমতি দিলেন না। হিউএনচাঙও পথের বিপদের কথা ভালো করেই জানতেন।
কিন্তু তবু নিজের মন পরীক্ষা করে বিবেচনা করলেন যে, তাঁর মতো সংসারমুক্ত পুরুষের পক্ষে নির্ভীকভাবে সমস্ত বিপদের সম্মুখীন হওয়াই উচিত হবে। সম্রাটের আদেশ অমান্য করে সীমানা ত্যাগ করাতে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। সঙ্গীরাও তাঁকে ত্যাগ করেছিল। কিন্তু তাতে কী? তিনি ফা-হি আন্ প্রমুখ পুরাতন মহাত্মা পর্যটকদের অনুসরণ করতে ইচ্ছা করলেন। মানুষের সাহায্য তুচ্ছ জ্ঞান ক’রে তিনি মনে মনে বোধিসত্ত্বদের কাছে গোপনে দেশত্যাগ করবার সংকল্প নিবেদন করলেন, আর তাঁদের কাছে প্রার্থনা করলেন যে, তাঁরা যেন তাঁকে এই যাত্রার সব সময়েই অদৃশ্যভাবে রক্ষা করেন।
৬২৯ খৃস্টাব্দে তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন, আর তাতেই তাঁর মন দৃঢ়তর হয়। স্বপ্নে সমুদ্রের মধ্যে বিচিত্র সুমেরু পর্বত দেখতে পেলেন। পর্বতের চূড়ায় উঠবার জন্যে তিনি যেন তরঙ্গসংকুল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন। সেই সময়ে এক মানসপদ্ম যেন তাঁর পায়ের তলায় আবির্ভূত হয়ে তাঁকে পর্বতের পাদদেশে পৌঁছে দিল। তবু পর্বত দূরারোহ হওয়ায় তাঁর পর্বত-শিখরে ওঠা সম্ভব হল না।
কিন্তু এই সময়ে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ঘূর্ণীবাতাস তাঁকে তুলে নিয়ে পর্বত-চূড়ায় উপস্থাপিত করল। সেখান থেকে তিনি চারিদিকে দিগন্তরাল পর্যন্ত নানা দেশ পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলেন। যেসব দেশ তিনি পর্যটন করতে যাচ্ছেন, সেই সবেরই যেন প্রতিচ্ছায়া দেখলেন। আনন্দের আতিশয্যে তিনি জেগে উঠলেন, আর এর কয়েকদিন পরেই তিনি পর্যটনে বার হলেন।
চলবে
হিউএনচাঙ (পর্ব-৮)
Sarakhon Report 



















