০৭:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 19

শশাঙ্ক মণ্ডল

বিয়ের গানঃ-

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিবাহ উপলক্ষে নানারকম ছড়া গান কবিতার প্রচলন ছিল। বরযাত্রায় পালকিতে করে বরকে নিয়ে যাবার সময় পালকির বাহকরা গান গাইতে গাইতে যেত। একে একধরনের কর্মসঙ্গীত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে – উৎসবের আনন্দের মাঝে ক্লান্তিকর করুণ সুরে তারা গান গেয়ে যেত। গানের মধ্যে কারুণ্য সমগ্র পরিবেশে সঞ্চারিত হত এটা গ্রামদেশে পালকির গান, নামে পরিচিত ছিল। এরই পাশাপাশি বরযাত্রীদের থেকে ছাপান হ্যান্ডবিল বিলি করা হত সেই হ্যান্ডবিলের মধ্য দিয়ে বর কনের পরিচয় পাওয়া যেত এবং তার সঙ্গে কবিতার ভাষায় বরের ছোট ভাই বোনরা নববিবাহিতা বধূকে সম্ভাষণ জানাত, গুরুজনরা আশীর্বাদ প্রেরণ করতেন।

ইয়ার বন্ধুরা বাংলার সাথে দু একটা ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে এই বিয়ে উপলক্ষে তাদের হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ও বন্ধুপ্রীতি প্রকাশ করত। সে যুগে মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারেও বিবাহ উপলক্ষে এটা রেওয়াজ হিসাবে প্রচলিত ছিল। (১০) বিবাহের নানা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নানা রকম গান গাইবার রীতি সে যুগে প্রচলিত ছিল। আশীর্বাদ থেকে শুরু করে গায়ে হলুদ, বানি বিয়ে পর্যন্ত নানা প্রসঙ্গে লোকগীতি প্রচলিত ছিল। জলশয়া বা জলভরা অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেয়েদের গানে শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগের ছবি ফুটে ওঠে। শয়া অর্থে নারায়ণী- বাড়ি বাড়ি গিয়ে জলশয়া এবং সেই জল সহযোগে কন্যা স্নান প্রথা সমাজ জীবনের কল্যাণকর নানা ইতিকথার ইঙ্গিত বহন করে।

-জলের ঘাটে বাঁশী বাজে গো কমলা আমরা জলে যাই ঘাট পিছল পথ পিছল আরো পিছল মাটি আছাড় খেয়ে ভেঙে গেল সুবর্ণের কলসী।

কেহ পরে নীলাম্বরী কেহ পরে ঢাকাইশাড়ী গো কমলা আমরা জলে যাই।’

একত্রে মেয়েরা জল শইতে যায় অনেকগুলি মেয়ে একত্রে সমবেত হয়। আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে যুবতীদের যৌবন রাগ প্রকাশিত হয়, জলের চটুল ছন্দে তাদের উজ্জ্বলতা গানের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে।

সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে মুসলমানদের মধ্যেও বিবাহ সঙ্গীত প্রচলিত আছে, এসব গানে রাম সীতা কিংবা রাধাকৃষ্ণের কোন উল্লেখ লক্ষ করা যায় না। বরের রূপ বর্ণনায় যোদ্ধার বেশ স্মরণ করিয়ে দেয় বিজয়ীর বেশে বর কন্যারত্বকে লাভ করার জন্য এসেছে। বরবধূর বিবাহের পর প্রথম আলাপের সলজ্জ চিত্র গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এভাবে-

তোমার সিঁথির ওপর কি সাপ দোলে লো বিবি

-ওটাতো সাপ নয় পোষাকে আমার ঝিলিক মারে

তোমার গায়ের উপর কিসের সাপ দোলে লো বিবি

-ওটা তো সাপ নয় শাড়ীতে মোর ঝলক মারে লো।

 

 

১৪ জুলাই অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৫)

১২:০০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

বিয়ের গানঃ-

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিবাহ উপলক্ষে নানারকম ছড়া গান কবিতার প্রচলন ছিল। বরযাত্রায় পালকিতে করে বরকে নিয়ে যাবার সময় পালকির বাহকরা গান গাইতে গাইতে যেত। একে একধরনের কর্মসঙ্গীত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে – উৎসবের আনন্দের মাঝে ক্লান্তিকর করুণ সুরে তারা গান গেয়ে যেত। গানের মধ্যে কারুণ্য সমগ্র পরিবেশে সঞ্চারিত হত এটা গ্রামদেশে পালকির গান, নামে পরিচিত ছিল। এরই পাশাপাশি বরযাত্রীদের থেকে ছাপান হ্যান্ডবিল বিলি করা হত সেই হ্যান্ডবিলের মধ্য দিয়ে বর কনের পরিচয় পাওয়া যেত এবং তার সঙ্গে কবিতার ভাষায় বরের ছোট ভাই বোনরা নববিবাহিতা বধূকে সম্ভাষণ জানাত, গুরুজনরা আশীর্বাদ প্রেরণ করতেন।

ইয়ার বন্ধুরা বাংলার সাথে দু একটা ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে এই বিয়ে উপলক্ষে তাদের হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ও বন্ধুপ্রীতি প্রকাশ করত। সে যুগে মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারেও বিবাহ উপলক্ষে এটা রেওয়াজ হিসাবে প্রচলিত ছিল। (১০) বিবাহের নানা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নানা রকম গান গাইবার রীতি সে যুগে প্রচলিত ছিল। আশীর্বাদ থেকে শুরু করে গায়ে হলুদ, বানি বিয়ে পর্যন্ত নানা প্রসঙ্গে লোকগীতি প্রচলিত ছিল। জলশয়া বা জলভরা অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেয়েদের গানে শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগের ছবি ফুটে ওঠে। শয়া অর্থে নারায়ণী- বাড়ি বাড়ি গিয়ে জলশয়া এবং সেই জল সহযোগে কন্যা স্নান প্রথা সমাজ জীবনের কল্যাণকর নানা ইতিকথার ইঙ্গিত বহন করে।

-জলের ঘাটে বাঁশী বাজে গো কমলা আমরা জলে যাই ঘাট পিছল পথ পিছল আরো পিছল মাটি আছাড় খেয়ে ভেঙে গেল সুবর্ণের কলসী।

কেহ পরে নীলাম্বরী কেহ পরে ঢাকাইশাড়ী গো কমলা আমরা জলে যাই।’

একত্রে মেয়েরা জল শইতে যায় অনেকগুলি মেয়ে একত্রে সমবেত হয়। আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে যুবতীদের যৌবন রাগ প্রকাশিত হয়, জলের চটুল ছন্দে তাদের উজ্জ্বলতা গানের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে।

সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে মুসলমানদের মধ্যেও বিবাহ সঙ্গীত প্রচলিত আছে, এসব গানে রাম সীতা কিংবা রাধাকৃষ্ণের কোন উল্লেখ লক্ষ করা যায় না। বরের রূপ বর্ণনায় যোদ্ধার বেশ স্মরণ করিয়ে দেয় বিজয়ীর বেশে বর কন্যারত্বকে লাভ করার জন্য এসেছে। বরবধূর বিবাহের পর প্রথম আলাপের সলজ্জ চিত্র গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এভাবে-

তোমার সিঁথির ওপর কি সাপ দোলে লো বিবি

-ওটাতো সাপ নয় পোষাকে আমার ঝিলিক মারে

তোমার গায়ের উপর কিসের সাপ দোলে লো বিবি

-ওটা তো সাপ নয় শাড়ীতে মোর ঝলক মারে লো।