সারাক্ষণ ডেস্ক
যখন জুলিয়ান ব্রেভ নয়সক্যাট ও এমিলি ক্যাসি ‘সুগারকেইন’ তৈরি করতে এগিয়ে যান, তখন তারা বুঝতেই পারেননি গল্পটি কতটা ব্যক্তিগত হয়ে উঠবে। শুটিংয়ের সময় প্রায়শ মনে হয়েছে ভাগ্যই যেন তাঁদের পথনির্দেশ করেছে: কীভাবে উইলিয়ামস লেক ফার্স্ট নেশন এই গল্পের সঙ্গে যুক্ত হলো; কীভাবে সেই পথে তারা পৌঁছে গেল সেন্ট জোসেফ মিশন রেসিডেনশিয়াল স্কুলে, যেখানে নয়সক্যাটের বাবা অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। ‘সুগারকেইন’ চলচ্চিত্রে উইলিয়ামস লেকের তদন্তের গল্পের সঙ্গে এক বাবা ও ছেলের নিরাময়ের প্রক্রিয়া মিশে গেছে—সেই তদন্তের লক্ষ্য ছিল সেন্ট জোসেফ মিশনের নিপীড়ন ও নিখোঁজ শিশুদের সন্ধান। এবারের অস্কারের সেরা ফিচার ডকুমেন্টারি বিভাগে এটি প্রধান প্রার্থীদের মধ্যে একটি; পাশাপাশি, কানাডা ও আমেরিকায় সত্য ও নিরাময়ের প্রয়াসে ছবিটি আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সুগারকেইন তৈরির ভাগ্যনির্ধারক সূচনা সম্পর্কে “আমার সহ-পরিচালক এমিলি ক্যাসি যখন আমাকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিলেন, আমি বলেছিলাম কিছুদিন সময় নিয়ে ভাবতে চাই। আমাদের পরিবারের সঙ্গে ইন্ডিয়ান রেসিডেনশিয়াল স্কুলের খুবই বেদনাদায়ক ইতিহাস জড়িত ছিল। আমি বিস্তারিত জানতাম না, কিন্তু জানতাম সেখানে কোনো গহীন গল্প আছে, এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম না সেদিকে এগোতে প্রস্তুত কিনা। সেই সময়ের মধ্যেই এমিলি উইলিয়ামস লেক ফার্স্ট নেশনের প্রধান উইলি সেলার্সকে একটি ইমেইল করেন।
প্রধান ফোনে ফিরে বললেন, ‘স্রষ্টার সময়জ্ঞান সবসময়ই ভালো।’ এমিলি যখন জানালো যে তিনি উইলিয়ামস লেকের কাছে সেন্ট জোসেফ মিশনে অনুসন্ধান ও ডকুমেন্ট করার আগ্রহী এমন একটি ফার্স্ট নেশন পেয়েছেন, আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, কানাডায় ১৩৯টি ইন্ডিয়ান রেসিডেনশিয়াল স্কুল থাকলেও আমার পরিবার যেটিতে গিয়েছিল, যেখানে আমার বাবার জন্ম হয়েছিল, সেটি ছিল ঠিক ওই স্কুলটিই। মনে হলো গল্পটি যেন তাদের খুঁজে পেয়েছিল, আর তারপর আমাদের। তখন আমি আর পিছু হটতে পারিনি।
চলচ্চিত্রের ব্যক্তিগত দিক প্রথম এক বছর আমরা আমার বা আমার পরিবারের গল্প নিয়ে কোনো শুটিং করিনি। শুরুতে আমাদের মাঝে এই বোঝাপড়া ছিল—আমি ও এমিলি সহ-পরিচালক হব, কিন্তু আমাকে সরাসরি অংশগ্রহণকারী হতে হবে না। কিন্তু গল্পটি যত সামনে এগোতে লাগল, ততই মনে হলো আমাদের এই ছবিতে আমার পারিবারিক ইতিহাস তুলে ধরাই একমাত্র সঠিক পথ। কারণ, এই ডকুমেন্টারিতে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই নিজেদের গভীর ট্রমার কথা অকপটে বলেছেন, সাংস্কৃতিক গণহত্যার ইতিহাসকে আলোকিত করার ঝুঁকি নিয়েছেন। আর তখন, আমি নিজে তো সেন্ট জোসেফ মিশনের ইনসিনারেটর থেকে জীবিত বেরিয়ে আসা একমাত্র পরিচিত বেঁচে-ফেরার সন্তানের ছেলে। সুতরাং গল্প বলার ন্যায়সংগত উপায় ছিল আমারও আমাদের পারিবারিক অধ্যায় প্রকাশ করা—তাদের সাহসকে সম্মান জানাতে। আমি কৃতজ্ঞ যে আমার জনগণ ও পরিবারের জন্য এই মুখোমুখি হওয়ার মুহূর্তটি এভাবে বেছে নিতে পেরেছি।
সীমানা পেরিয়ে জাতিগত জবাবদিহি কামলুপস রেসিডেনশিয়াল স্কুলে যে অচিহ্নিত কবরগুলোর খবর বেরিয়েছিল, সেটা আমেরিকার জন্য, অথবা অন্তত আমেরিকান মিডিয়ার জন্য, একটি সুযোগ ছিল বলেই মনে হয়েছিল—“ওহ, দেখো কানাডা কী করেছে!”—ঠিক এইভাবে দেখার। কিন্তু ঘটনাটা খুবই সংঘাতপূর্ণ,কারণ আমেরিকায় নেটিভ আমেরিকান বোর্ডিং স্কুলের সংখ্যা ছিল কানাডার ইন্ডিয়ান রেসিডেনশিয়াল স্কুলের প্রায় তিনগুণ। অনেকাংশে আমেরিকান ব্যবস্থাই ছিল কানাডার অনুপ্রেরণা। তা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সে রকম বড় কোনো জবাবদিহি বা মুখোমুখি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায় ভার অনেকখানি, কারণ কানাডায় বেশিরভাগ স্কুল গির্জার অধীনে পরিচালিত হলেও, আমেরিকায় স্কুলগুলো প্রায়শ সরাসরি সরকারের অধীনে চলত। তবে এখন একটি প্রস্তাব আছে—সত্য ও নিরাময় কমিশন গঠনের—যা মার্কিন সিনেটে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্রটি ডিসেম্বর মাসে সিনেটে প্রদর্শিত হয়েছে। এ ইতিহাস এখন ধীরে ধীরে আমেরিকান জাতীয় কথোপকথ্যের অংশ হয়ে উঠছে। ভাগ্য ভালো যে আমাদের ছবি এমন একটি সময়ে প্রকাশ পেয়েছে, যখন আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অংশ হতে পারছি।
নিরাময়ের সম্ভাবনা আমার বাবা তাঁর মায়ের কাছে বহুদিন ধরে জমে থাকা কিছু প্রশ্ন রাখতে পেরেছেন—যে প্রশ্নগুলো তাঁকে বছরের পর বছর কুরে কুরে খেয়েছে। আমিও শুধু বাবার সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ পাইনি, বরং তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েক বছর একসঙ্গে থেকেছি। আমরা একসঙ্গে স্মরণীয় এক যাত্রায় রওনা দিয়েছিলাম—ফিরে গিয়েছিলাম আমাদের রিজার্ভেশন ও সেই মিশনে, যেখানে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
অনেকবার এই ছবিটির প্রদর্শনীতে এমন ঘটনা ঘটেছে—কেউ আমাদের কাছে এসে বলেছেন, “আমি ছবিটিতে নিজেকে দেখেছি। আমার বাবাকে দেখেছি তোমার বাবার মধ্যে। আমার দাদা-নানিদের দেখেছি তোমাদের পরিবারের মধ্যে।” তাদের পরিবারের লোকজনকে এই ভয়াবহ ইতিহাস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সাহস তারা এখন পেতে শুরু করেছেন, আর আমরা এর অতি সামান্য অংশ হতে পেরেছি—এটাই আমার জীবনের বড় সম্মান। যখন আমরা দেখি এই স্কুলগুলো কী করেছে, দেখা যায় প্রায় গোটা ‘ইন্ডিয়ান কান্ট্রি’ এই ইতিহাসের জখম বহন করছে—প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এটি ছড়িয়ে গেছে। এই ক্ষত সারানোর প্রথম পদক্ষেপ হল এর সত্যি কথাগুলো উচ্চারণ করা, কথা বলা শুরু করা—সত্যকে তুলে ধরা।
Leave a Reply