সারাক্ষণ রিপোর্ট
দুবাইয়ে বড় ম্যাচ—“ ভারত বনাম পাকিস্তান”। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এই লড়াই দেখতে দুবাই পুলিশের অশ্বারোহী দল পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছিল, ভিড় সামাল দিতে। তবে রবিবার বিকেলে ম্যাচ শুরু হওয়ার সময় স্টেডিয়ামে অর্ধেকের বেশি আসন ফাঁকা ছিল। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকেরা ঢল নামে, আর তখনই মূলত ভারতীয় সমর্থকেরা আতশবাজির মতো ভারতীয় ব্যাটিং উপভোগ করেন। শেষ পর্যন্ত সেই আগ্রাসী ব্যাটিং প্রদর্শনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় জয় এনে দেয় ভারতকে।
জয়ের পথে বিরাটের সেঞ্চুরি

- কোহলির অপরাজিত ১০০: ১১১ বলে ৭টি বাউন্ডারি-সহ বিরাট কোহলির অসাধারণ শতরানে ভর করে ২৪১ রানের লক্ষ্য ৪২.৩ ওভারে পূরণ করে ভারত।
- আইসিসি রেকর্ড: ওয়ানডে বিশ্ব আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে এখন ভারতের মুখোমুখি জয়ের ধারা দাঁড়াল ১১-৩।
- সেমি-ফাইনালের পথে: এই জয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা আরও জোরালো হল ভারতের। সোমবার নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতলেই ভারতের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হবে।
পূর্ণ উদ্দীপনা, কিন্তু পাকিস্তানের পরাজয়
- তারকাসমৃদ্ধ গ্যালারি: বলিউড তারকাসহ বিশিষ্ট অতিথি ও ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের তরুণ ক্রিকেটাররাও এসেছিলেন খেলা দেখতে।
- উত্তেজনার ঘাটতি: পাকিস্তান টানা দ্বিতীয় হারের মুখে পড়ায় ম্যাচের উত্তেজনা তেমন স্থায়ী হয়নি।
- কোহলির সেঞ্চুরি নিয়ে কৌতূহল: ম্যাচ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত সবার নজর ছিল কোহলির দিকে। হার্দিক পাণ্ডিয়া শেষ দিকে দ্রুত রান তুলছিলেন, তবে শেষ বলেই কোহলি বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। আকাশের দিকে ব্যাট তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে কোহলির বাড়তি লড়াই
- স্পিনার আব্রারকে সামলানো: পাকিস্তানের মূল স্পিনার ছিলেন আব্রার আহমেদ। কোহলি পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খেলেন, কারণ তিনিই ছিলেন পাকিস্তানের বড় ভরসা।
- পেসারদের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ: হারিস রউফ বা অন্য পেসারদের বল পড়ে কোহলির বড় কোনো সমস্যা হয়নি।
- ১৪,০০০ রানের মাইলফলক: কাভারের মধ্য দিয়ে একটি বাউন্ডারি মেরে কোহলি ওয়ানডে ক্রিকেটে ছুঁলেন ১৪,০০০ রানের মাইলফলক। সমালোচকদের উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট বার্তা—সব ফরম্যাট এক করে কারও ফর্ম পর্যালোচনা না করাই ভালো!
রোহিতের দ্রুত শুরু
- প্রথম ওভারে সংযম, পরের ওভারে আগ্রাসন: রোহিত শর্মা প্রথম ওভারে সতর্ক ছিলেন। কিন্তু পরের ওভারে নাসিম শাহর বলে একের পর এক বড় শট খেলেন। পুল করতে গিয়ে স্লিপের ওপর দিয়ে বল বাউন্ডারি, আর লেংথ মিস হলে স্কোয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা।
- আফ্রিদির ইয়র্কারে বোল্ড: তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে শাহীন শাহ আফ্রিদির গতিময় ইন-সুইং ইয়র্কারে রোহিত আউট হন। ১৫ বলে ২০ রানের ইনিংস যদিও বড় ছিল না, তবে নাসিম শাহকে সামলে দলের ওপরে চাপ কমিয়ে যান তিনি।

শুবমান গিলের ঝলক
- আফ্রিদিকে চাপে ফেলা: রোহিত আউট হওয়ার পর গিল আক্রমণ চালিয়ে যান। শর্ট-আর্ম পুল, কাভার ড্রাইভ আর ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লিক—যেকোনো সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি আদায় করেন।
- ৪৬ রানের মূল্যবান ইনিংস: ৫২ বলে ৭টি বাউন্ডারিতে গড়া এই ইনিংসে তিনি ইনিংসের গতি ধরে রাখেন। পরে আব্রার আহমেদের ক্যারম বলে বোল্ড হয়ে ফিরলে কোহলি দায়িত্ব কাঁধে নেন।
পাকিস্তানের বোলিং চ্যালেঞ্জ
- পেস আক্রমণ: হ্যারিস রউফ শুরুতে শর্ট বলে শেয়াস আইয়ারকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন। তবে সে চেষ্টা ততটা কার্যকর হয়নি।
- আব্রারের প্রথম স্পেল: ৭ ওভারে ১৭ রানে ১ উইকেট নিয়ে ভালো বোলিং করলেও পুরো ১০ ওভার করাতে পারেননি। ভারত বরং তাঁকে দেখে-শুনেই খেলেছে।
- ফিল্ডিং ব্যর্থতা: পাকিস্তান দু’টি ক্যাচ ফেলে দিলে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির সুযোগ হারায়।

পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয়
- ভিত গড়া সত্ত্বেও ভাঙন: ৩২ থেকে ৩৬ ওভারের মধ্যে দ্রুত তিনটি উইকেট পড়ায় ১০৪ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি (সাউদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ান) বৃথা যায়।
- গভীরতা ও বড় শটের অভাব: লোয়ার অর্ডার থেকে কেউ বড় শট খেলতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ৪৯.৪ ওভারে ২৪১ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
- ভারতের বোলিং সাফল্য: কুলদীপ যাদব (৯-০-৪০-৩) সর্বোচ্চ উইকেট নেন। হার্দিক পাণ্ডিয়াও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সাফল্য পান।
ফলাফল ও পরিণতি
- ভারতের জয়: ৪২.৩ ওভারে অনায়াসেই ২৪১ রান তাড়া করে ফেলে ভারত। কোহলির অপরাজিত সেঞ্চুরি ভারতীয় সমর্থকদের জন্য দুর্দান্ত আনন্দের উপলক্ষ্য।
- পাকিস্তানের প্রায় বিদায়: টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পরাজিত হয়ে প্রায় ছিটকে যাওয়ার পথে পাকিস্তান।
- সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন: আরেকটি জয়ে ভারতীয় দল আশ্বাস পেল সেমি-ফাইনালের পথ নিয়ে। বিরাটের দুর্দান্ত ইনিংস ও ভারতের ব্যাটিং-শক্তি তাদের অভিযানকে আরও মজবুত করেছে।
Leave a Reply