সারাক্ষণ ডেস্ক
কন্সটান্টিনোপলের হাগিয়া সোফিয়ার বিশাল গম্বুজের তলে ধর্মানুরাগীরা একত্রিত হয়েছিল। ভক্তদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা এবং সঙ্গীতের সুর ভরিয়ে ওঠে, আর সেই মুহূর্তে ব্ল্যাচার্নাই চার্চ থেকে এক গম্ভীর যাত্রাপথ প্রবেশ করল – যাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নিজেই সাম্রাজ্ঞী থিওডোরা। তাঁর রাজকীয় উপস্থিতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
অনুষ্ঠান ও আয়োজন
বড় গির্জায় যখন ভক্তগণ প্রবেশ করল, তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইকন – মা ঈশ্বরের – খুব মর্যাদাপূর্ণভাবে বহন করা হলো। পুরো চার্চ জুড়ে এই প্রদর্শনীতে জনসাধারণ আনন্দের সাথে উদ্যাপন করল, কারণ এটি ছিল সাধারণ দিন নয়। এই দিনটি ছিল “অর্থডক্সের বিজয়” যা সেই দিনকে চিহ্নিত করেছিল, যখন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য দীর্ঘদিন ধরেই আরোপিত আইকন নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
এই পুনরুদ্ধার বহু দশকের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘর্ষের ফল। ৭৩০ সালে সম্রাট লিও তৃতীয় আইকন পূজোকে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি আদেশ জারি করেছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে এতে মূর্তিপূজা বেড়ে যাবে। তাঁর পরবর্তী শাসকগণও একই নীতি অবলম্বন করলেও সাম্রাজ্য বিভক্ত হচ্ছিল। তখন সাম্রাজ্ঞী থিওডোরা, যিনি সম্রাট থিওফিলাসের পত্নী ছিলেন, গোপনে আইকনের পূজা করতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে এগুলো খ্রিস্টান উপাসনার অপরিহার্য মাধ্যম।
থিওডোরার অবদান ও ধর্মীয় রূপান্তর
৮৪২ সালে সম্রাটের মৃত্যুর পর, তাদের তরুণ পুত্র মাইকেল তৃতীয় সিংহাসনে বসার পর থিওডোরা রাজ্যপরিচালিকা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর নতুন ক্ষমতার আলোকে তিনি আইকন নিষিদ্ধ নীতির পরিবর্তন করার সংকল্প নেন। রাজনৈতিক চাপে থাকলেও, তাঁর অবিচল বিশ্বাস তাঁকে আইকনগুলো পুনরুদ্ধার করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সাম্রাজ্যের প্রায় প্রতিটি মন্দিরের মঠে আইকন পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে আইকনবিরোধী যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল এবং থিওডোরার মর্যাদা একটি দৃঢ় অর্থডক্স খ্রিস্টধর্মের রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপসংহার
এই ঐতিহাসিক ঘটনা অর্থডক্স ধর্মের বিজয় হিসাবে যুগে যুগে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্বাসীরা আজও এই দিনকে উদ্যাপন করে, যেখানে ধর্মীয় ঐক্য এবং বিশ্বাসের পুনর্জাগরণের বার্তা প্রেরিত হয়।
Sarakhon Report 



















