সত্যেন্দ্রকুমার বসু
তুরুস্ক সম্রাট এই ভোজের সময়ে হিউএনচাঙের প্রতি যে রকম দৃষ্টি রেখেছিলেন তাতে তাঁর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাই প্রকাশ পায়। তুরুস্করা গদির উপর মাদুর পেতে বসেছিলেন, ধর্মগুরুকে বসবার জন্যে একখানা লোহার চেয়ার দেওয়া হয়। তাঁর জন্যে বিশেষ করে পবিত্র খাদ্যের ব্যবস্থা হয়- চালের তৈরী পিঠা, দুধের সর, চিনি, মধু, মনাক্কা আর মনাক্কার মদ।
আর ভোজের পর সম্রাট তাঁকে বৌদ্ধধর্মের উপদেশ দিতে অনুরোধ করলেন। অতএব সৈন্যদলের প্রধানদের সম্মুখে ধর্মগুরু তাঁর ধর্মের প্রধান প্রধান কথাগুলি ব্যাখ্যা করলেন। • দশশীল, অহিংসা, পারমিতা ও মোক্ষলাভের উপায় সম্বন্ধে উপদেশ দিলেন। উপদেশের শেষে সম্রাট দু-হাত তুলে সাষ্টাঙ্গে নত হলেন আর আনন্দের সঙ্গে উপদেশ গ্রহণ করলেন।
হিউএনচাঙকে তাঁর পছন্দ হয়ে গেল আর তুরফান রাজার মত ইনিও তাঁকে নিরস্ত করবার চেষ্টা করলেন- ‘গুরুদেব! ভারতবর্ষে যাবেন না। সেখানে এত গরম যে, গ্রীষ্মকাল শীতকালে কোনও তফাত নেই। আমার ভয় হচ্ছে যে, সে কষ্ট আপনার সহ্য হবে না। সেখান-কার মানুষ সব নগ্ন, কালো, ভব্যতা জানে না, আর আপনার সাক্ষাতের উপযুক্ত তারা নয়।’
হিউএনচাঙ জবাব দিলেন, ‘যাই বলুন, বুদ্ধের প্রকৃত ধর্মের অনুসন্ধানে যাবার জন্যে আমার মন সর্বদাই অতিশয় ব্যগ্র হয়ে রয়েছে। সেখানে পবিত্র তীর্থস্থানগুলি দেখব আর তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করব এই আমার প্রাণের ইচ্ছা।’
(চলবে)