০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

USAID-সহ বিদেশী সাহায্য কমিয়ে দেয়া

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
  • 20

সারাক্ষণ রিপোর্ট

এশিয়ায় সহায়তার ক্রমহ্রাস ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট
এশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ সত্ত্বেও, বহির্বিশ্বের সাহায্যের ওপর নির্ভরতা তুলনামূলকভাবে কমে আসছে। ২০২৩ সালে সমগ্র এশিয়া অঞ্চলে মোট ৫৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা আসে, যা অঞ্চলের সম্মিলিত জিএনআই-এর মাত্র ০.২%—যখন ১৯৯৩ সালে এই হার ছিল ০.৭%। অন্যদিকে, আফ্রিকায় এখনো ২.৪% হারে বিদেশি সাহায্য প্রবাহিত হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে USAID-এর বাজেট কমার আগেও এশিয়ায় সহায়তা প্রাপ্তির হার নিম্নমুখী ছিল। তার পরেও, আমেরিকা ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিশ্রুতি হ্রাস পাওয়ায় এশিয়ার পরিস্থিতিতে কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সহায়তা-নির্ভর দেশ: আফগানিস্তানের চ্যালেঞ্জ
অনেক দেশই যুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে বিদেশি সাহায্যের ওপর টিকে আছে। আফগানিস্তান তার মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় অর্ধেক আফগান নাগরিক বেঁচে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালে দেশটি ২.৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে, যা তাদের জিএনআই-এর প্রায় ২০%। এর অর্ধেকের বেশি অর্থ আমেরিকা থেকে এসেছে, যা প্রধানত স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক খাতে বিনিয়োগ হতো। কিন্তু তহবিল আটকে যাওয়ায় অনেক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বছরে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে—যা আগের বছরের তুলনায় ৫ লাখ বেশি।

তুলনামূলকভাবে ধনী এশিয়ান দেশেও প্রভাব
এশিয়ার কিছু দেশ তুলনামূলক ধনী এবং সামান্য পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করে। তবুও USAID-এর বাজেট ছাঁটাইয়ের প্রভাব তাদেরও স্পর্শ করবে। এর একটি কারণ হলো, USAID-এর ‘ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে’ (DHS) প্রোগ্রাম। এই কর্মসূচি ৯০টি দেশে—এশিয়ায় ১৮টি—স্বাস্থ্য, জন্মহার ও পুষ্টি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সরবরাহ করত। স্থানীয় সরকার ও গবেষকদের কাছে এই তথ্য অত্যন্ত মূল্যবান ছিল এবং স্থানীয় প্রশাসনও নিজস্ব ডেটা সংগ্রহের সামর্থ্য অর্জন করতে পেরেছিল। ২০২৩ সালে DHS-এর ভারতে পরিচালনার দায় USAID ভারতের সরকারের হাতে হস্তান্তর করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাড়তি ঝুঁকি
NASA-এর স্যাটেলাইট তথ্য ব্যবহার করে ঝুঁকি মোকাবিলার লক্ষ্যে USAID SERVIR নামে একটি স্বল্প-ব্যয়বহুল উদ্যোগ চালু করেছিল। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হতো। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে একটি ক্যাটাগরি-ফোর ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ফলে প্রাণহানি ১৪৫ জনের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হয়। অথচ দুই দশক আগের একই মাত্রার এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।যদিও বিদেশী মাধ্যম ও জাতিসংঘ, ইউএসএইড এ তথ্য তুলে ধরে। তবে এ তথ্য ও তুলনা মূলত সঠিক নয়। কারণ, বাংলাদেশ এখন গত তিরিশ বছরে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুযো‍র্গ মোকাবিলায় সক্ষম দেশ হিসেবে নিজেকে প্রমানিত করেছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় আমেরিকায় যে ক’টি ঘূর্নি ঝড় হয়েছে ওই সময়ে বাংলাদেশেও ঘূর্নি ঝড় হয়। মোকাবিলার চরিত্র’র দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিলো। ইউএসএইডের তথ্য সঠিক হলে তারা আমেরিকাতেই সফল হতো আগে।

উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে USAID-এর ভূমিকা ও সম্ভাব্য ক্ষতি
USAID-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো ‘ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন ভেনচারস’ (DIV), যা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নতুন নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালে ভারতের গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি মোবাইলভিত্তিক টুল তৈরিতে DIV-এর অনুদান ব্যবহৃত হয়েছিল। এই টুলের সহায়তায় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের স্বাস্থ্যতথ্য সহজে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করা যেত। এক দশকের মাথায় টুলটি লক্ষাধিক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে পৌঁছে যায় এবং প্রায় ৭.৫ কোটি পরিবারকে সেবা দিতে সহায়তা করে। অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমারসহ আরও কিছু বিশেষজ্ঞের গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৮২৬,০০০ ডলার প্রাথমিক অনুদানের মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত অন্তত ২০ মিলিয়ন ডলারের সমমাপের সুবিধা পেয়েছে।

সহায়তার ঘাটতি কে মেটাবে?
অনেকের ধারণা, চীন ও জাপানের মতো শক্তিশালী আঞ্চলিক অর্থদাতারা হয়তো এই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসতে পারে। তবে তাদের অর্থ বরাদ্দ সাধারণত অবকাঠামো-কেন্দ্রিক এবং প্রায়শই ঋণ আকারে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ব্যক্তিগতভাবে অনুদান দেওয়ার প্রবণতা এশিয়ায় এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন। ২০২২ সালে এশিয়ার বিলিয়নিয়ারদের দান ২৪.২ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা উত্তর আমেরিকার বিলিয়নিয়ারদের দানের এক-তৃতীয়াংশেরও কম—তবে এশিয়ায় এখন বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেশি।

বিদেশি সহায়তা নিয়ে সংশয় ও বিতর্ক
বিদেশি অনুদানের ক্ষেত্রে বৈরী মনোভাব কিংবা অসন্তোষ সবসময়ই ছিল। ১৯৭০-এর দশকে ভারতে পরিবার পরিকল্পনা এবং পুরুষ নির্বীজন কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রতিরোধের উদ্ভব হয়; তখন থেকে অনেক ভারতীয়র মধ্যে বিদেশি সাহায্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। সম্প্রতি ভারতের শাসক দল বিজেপির একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন যে, USAID-এর টাকা জর্জ সোরোসের ঘনিষ্ঠ কিছু সংগঠনের মাধ্যমে ভারতের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

দুর্নীতির ঝুঁকি
বিদেশি অনুদানের টাকা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ধাপে বণ্টন হয়, যেখানে প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের সম্ভাবনা থাকে। পশ্চিমা ঠিকাদার ও স্থানীয় অংশীদারদের মিলিত কাজের ক্ষেত্রেও অর্থ আত্মসাতের শঙ্কা থাকে। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে যে, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বড় অংশ নিজেরা নিয়ে নিয়েছেন; এমনকি “ভুতুড়ে স্কুল” দেখিয়ে খাতা-কলমে ব্যয় দেখানোর কথাও শোনা যায়।

সহায়তা এখনো কেন অপরিহার্য
বহু বিতর্ক ও অনিয়ম সত্ত্বেও, মানবিক সহায়তা যে অনেক দেশের জন্য অতি জরুরি, তা অস্বীকার করা কঠিন। আফগানিস্তানে তীব্র খাদ্য সংকট বিরাজ করছে এবং তাদের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবা এনজিওদের পরিচালনাতেই চলছে। তালেবান প্রশাসনের হাতে এত বড় পরিসরে সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই, আবার অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকেও বড় আকারের সহায়তা নিশ্চিত নয়। ফলে অনেক রাষ্ট্রের জন্য এটি শুধু কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক বিষয় নয়—বরং বেঁচে থাকার প্রশ্ন।

USAID-সহ বিদেশী সাহায্য কমিয়ে দেয়া

০৭:০০:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

এশিয়ায় সহায়তার ক্রমহ্রাস ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট
এশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ সত্ত্বেও, বহির্বিশ্বের সাহায্যের ওপর নির্ভরতা তুলনামূলকভাবে কমে আসছে। ২০২৩ সালে সমগ্র এশিয়া অঞ্চলে মোট ৫৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা আসে, যা অঞ্চলের সম্মিলিত জিএনআই-এর মাত্র ০.২%—যখন ১৯৯৩ সালে এই হার ছিল ০.৭%। অন্যদিকে, আফ্রিকায় এখনো ২.৪% হারে বিদেশি সাহায্য প্রবাহিত হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে USAID-এর বাজেট কমার আগেও এশিয়ায় সহায়তা প্রাপ্তির হার নিম্নমুখী ছিল। তার পরেও, আমেরিকা ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিশ্রুতি হ্রাস পাওয়ায় এশিয়ার পরিস্থিতিতে কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সহায়তা-নির্ভর দেশ: আফগানিস্তানের চ্যালেঞ্জ
অনেক দেশই যুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে বিদেশি সাহায্যের ওপর টিকে আছে। আফগানিস্তান তার মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় অর্ধেক আফগান নাগরিক বেঁচে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালে দেশটি ২.৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে, যা তাদের জিএনআই-এর প্রায় ২০%। এর অর্ধেকের বেশি অর্থ আমেরিকা থেকে এসেছে, যা প্রধানত স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক খাতে বিনিয়োগ হতো। কিন্তু তহবিল আটকে যাওয়ায় অনেক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বছরে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে—যা আগের বছরের তুলনায় ৫ লাখ বেশি।

তুলনামূলকভাবে ধনী এশিয়ান দেশেও প্রভাব
এশিয়ার কিছু দেশ তুলনামূলক ধনী এবং সামান্য পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করে। তবুও USAID-এর বাজেট ছাঁটাইয়ের প্রভাব তাদেরও স্পর্শ করবে। এর একটি কারণ হলো, USAID-এর ‘ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে’ (DHS) প্রোগ্রাম। এই কর্মসূচি ৯০টি দেশে—এশিয়ায় ১৮টি—স্বাস্থ্য, জন্মহার ও পুষ্টি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সরবরাহ করত। স্থানীয় সরকার ও গবেষকদের কাছে এই তথ্য অত্যন্ত মূল্যবান ছিল এবং স্থানীয় প্রশাসনও নিজস্ব ডেটা সংগ্রহের সামর্থ্য অর্জন করতে পেরেছিল। ২০২৩ সালে DHS-এর ভারতে পরিচালনার দায় USAID ভারতের সরকারের হাতে হস্তান্তর করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাড়তি ঝুঁকি
NASA-এর স্যাটেলাইট তথ্য ব্যবহার করে ঝুঁকি মোকাবিলার লক্ষ্যে USAID SERVIR নামে একটি স্বল্প-ব্যয়বহুল উদ্যোগ চালু করেছিল। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হতো। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে একটি ক্যাটাগরি-ফোর ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ফলে প্রাণহানি ১৪৫ জনের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হয়। অথচ দুই দশক আগের একই মাত্রার এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।যদিও বিদেশী মাধ্যম ও জাতিসংঘ, ইউএসএইড এ তথ্য তুলে ধরে। তবে এ তথ্য ও তুলনা মূলত সঠিক নয়। কারণ, বাংলাদেশ এখন গত তিরিশ বছরে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুযো‍র্গ মোকাবিলায় সক্ষম দেশ হিসেবে নিজেকে প্রমানিত করেছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় আমেরিকায় যে ক’টি ঘূর্নি ঝড় হয়েছে ওই সময়ে বাংলাদেশেও ঘূর্নি ঝড় হয়। মোকাবিলার চরিত্র’র দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিলো। ইউএসএইডের তথ্য সঠিক হলে তারা আমেরিকাতেই সফল হতো আগে।

উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে USAID-এর ভূমিকা ও সম্ভাব্য ক্ষতি
USAID-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো ‘ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন ভেনচারস’ (DIV), যা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নতুন নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালে ভারতের গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি মোবাইলভিত্তিক টুল তৈরিতে DIV-এর অনুদান ব্যবহৃত হয়েছিল। এই টুলের সহায়তায় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের স্বাস্থ্যতথ্য সহজে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করা যেত। এক দশকের মাথায় টুলটি লক্ষাধিক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে পৌঁছে যায় এবং প্রায় ৭.৫ কোটি পরিবারকে সেবা দিতে সহায়তা করে। অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমারসহ আরও কিছু বিশেষজ্ঞের গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৮২৬,০০০ ডলার প্রাথমিক অনুদানের মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত অন্তত ২০ মিলিয়ন ডলারের সমমাপের সুবিধা পেয়েছে।

সহায়তার ঘাটতি কে মেটাবে?
অনেকের ধারণা, চীন ও জাপানের মতো শক্তিশালী আঞ্চলিক অর্থদাতারা হয়তো এই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসতে পারে। তবে তাদের অর্থ বরাদ্দ সাধারণত অবকাঠামো-কেন্দ্রিক এবং প্রায়শই ঋণ আকারে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ব্যক্তিগতভাবে অনুদান দেওয়ার প্রবণতা এশিয়ায় এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন। ২০২২ সালে এশিয়ার বিলিয়নিয়ারদের দান ২৪.২ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা উত্তর আমেরিকার বিলিয়নিয়ারদের দানের এক-তৃতীয়াংশেরও কম—তবে এশিয়ায় এখন বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেশি।

বিদেশি সহায়তা নিয়ে সংশয় ও বিতর্ক
বিদেশি অনুদানের ক্ষেত্রে বৈরী মনোভাব কিংবা অসন্তোষ সবসময়ই ছিল। ১৯৭০-এর দশকে ভারতে পরিবার পরিকল্পনা এবং পুরুষ নির্বীজন কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রতিরোধের উদ্ভব হয়; তখন থেকে অনেক ভারতীয়র মধ্যে বিদেশি সাহায্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। সম্প্রতি ভারতের শাসক দল বিজেপির একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন যে, USAID-এর টাকা জর্জ সোরোসের ঘনিষ্ঠ কিছু সংগঠনের মাধ্যমে ভারতের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

দুর্নীতির ঝুঁকি
বিদেশি অনুদানের টাকা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ধাপে বণ্টন হয়, যেখানে প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের সম্ভাবনা থাকে। পশ্চিমা ঠিকাদার ও স্থানীয় অংশীদারদের মিলিত কাজের ক্ষেত্রেও অর্থ আত্মসাতের শঙ্কা থাকে। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে যে, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বড় অংশ নিজেরা নিয়ে নিয়েছেন; এমনকি “ভুতুড়ে স্কুল” দেখিয়ে খাতা-কলমে ব্যয় দেখানোর কথাও শোনা যায়।

সহায়তা এখনো কেন অপরিহার্য
বহু বিতর্ক ও অনিয়ম সত্ত্বেও, মানবিক সহায়তা যে অনেক দেশের জন্য অতি জরুরি, তা অস্বীকার করা কঠিন। আফগানিস্তানে তীব্র খাদ্য সংকট বিরাজ করছে এবং তাদের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবা এনজিওদের পরিচালনাতেই চলছে। তালেবান প্রশাসনের হাতে এত বড় পরিসরে সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই, আবার অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকেও বড় আকারের সহায়তা নিশ্চিত নয়। ফলে অনেক রাষ্ট্রের জন্য এটি শুধু কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক বিষয় নয়—বরং বেঁচে থাকার প্রশ্ন।