মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে ‘হবেকি’ গ্রাফিতি, গাধার পিঠের ‘ভাবুক’ নিয়ে কৌতূহল

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৬.৩৪ পিএম
ছবি:আর্টকন

২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্যে প্রতিরোধ ও সামাজিক ভাবনার মাধ্যম হিসেবে নিজের গুরুত্ব ফিরে পেয়েছে গ্রাফিতি। এরইমধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় একটি নতুন গ্রাফিতি শিল্পকর্ম—যা বিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর আগুস্ত রোঁদ্যার ‘দ্য থিঙ্কারের’ বা ভাবুকের প্রতিরূপ—নতুন করে কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছে। বিখ্যাত এই ভাস্কর্য জ্ঞান বা দর্শনের রূপক হিসেবে পরিচিত বিশ্বজুড়ে। একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদেরও প্রতীক দেখা হয় এটিকে।

মজার বিষয় হল, গাধার পিঠে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন ভাবুক। ছবির পেছনে রোমান হরফে ‘হবেকি’ (HOBEKI?) লেখা। যা ২০১৭ সালে ঢাকায় সাড়া জাগানো ‘সুবোধ’ গ্রাফিতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।

একটু নিবিড় দৃষ্টিতে চোখ রাখলে চট্টগ্রামের সিআরবি রোডের শিরীষতলায় অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত ভবন কাঠামোর ২০ ফুট প্রস্থ এবং ১২ ফুট উঁচু চুনকাম করা দেয়ালে আঁকা এই শিল্পকর্মটি সরাসরি রোঁদ্যার বিখ্যাত ভাস্কর্য, দ্য থিঙ্কারকে মনে করিয়ে দেয়।। যা গভীর চিন্তাভাবনার সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত প্রতীক। তবে, গাধার ওপর স্থাপনাটি একটি ব্যঙ্গাত্মক রহস্য যোগ করে কৌতূহলী দর্শক এবং পর্যবেক্ষকদের এটিকে বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা হিসাবে ব্যাখ্যা করতে উৎসাহিত করে।

এই রহস্যময়তা আরও গভীর করে ‘হবেকি’ লোগো। যা ২০১৭ সালে ঢাকার দেয়ালে আবির্ভূত রহস্যময় সুবোধ গ্রাফিতির প্রতিফলন এটি। সুবোধ সিরিজটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হয়ে সবার মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে লেখা ছিল, ‘ সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় তোর পক্ষে না’; ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা তোর ভাগ্যে কিছু নেই’; যা এর সূক্ষ্ম রাজনৈতিক অন্তর্নিহিততার কারণে অনেকের কাছে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছিল।

এখন, ‘হোবেকি?’ (হোবেকি?) শিরোনামযুক্ত গ্রাফিতিটি চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হচ্ছে। এই চিন্তা-উদ্দীপক কাজের পিছনে একই বেনামি শিল্পী বা গোষ্ঠীর হাত আছে কিনা তা নিয়ে জল্পনা চলছে। গ্রাফিতি শিল্পীদের রীতি অনুযায়ী এ শিল্পকর্মের স্রষ্টা নিজের নাম গোপন রেখেছেন।

স্থানীয় শিল্পী, সামাজিক ভাষ্যকার এবং শিল্পপ্রেমীরা বিশ্বাস করেন যে নতুন গ্রাফিতিটি বর্তমান সমাজে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকার সমালোচনা হিসেবে কাজ করে। যদিও ‘দ্য থিঙ্কার’ দার্শনিক গভীরতা এবং প্রজ্ঞার প্রতীক, এটিকে একটি গাধার ওপর স্থাপন করার মাধ্যমে—যা প্রায়শই একগুঁয়েমি এবং বুদ্ধিমত্তার ঘাটতির সাথে যুক্ত—মনে হচ্ছে যে বুদ্ধিজীবীরা, তাদের অন্তর্দৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও শক্তিহীন বা বিপথগামী হতে পারে, তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের শক্তির ওপর তারা নির্ভর করে।

ছবি:আর্টকন

গ্রাফিতি দীর্ঘকাল ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ব্যাঙ্কসির মতো বিখ্যাত আন্তর্জাতিক শিল্পীরা সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য রাস্তার শিল্প ব্যবহার করেন। বিশ্বের কিছু অংশে, এই ধরনের কাজকে সাংস্কৃতিক শিল্পকর্ম হিসেবে গ্রহণ এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে।

‘হবেকি’ শিল্পকর্ম এরইমধ্যে সিআরবিকে একটি উন্মুক্ত গ্যালারিতে পরিণত করেছে। বার্তাটি বোঝার জন্য উৎসুক জনতাকে ভিড় করতে দেখা গেছে। সামাজিকমাধ্যমেও ছবিটি ছড়িয়ে পড়ছে। নেটিজেনরা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন।

সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়ে হবেকি মোটিফের পুনরুত্থান বাংলাদেশে রাজনৈতিক নতুন চিন্তার বিকাশকেই তুলে ধরছে।

শিল্প সমালোচকরা বলছেন, গাধার পিঠে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বসিয়ে ভিন্ন এক তাৎপর্য আনতে চেয়েছেন শিল্পী। তীব্র বিদ্রূপে ভরা এই চিত্রে দেখানো হয়েছে সূক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী লোকজন বসে আছেন গাধার পিঠে। অর্থাৎ ‘ভাবুকদের’ ভরসা গাধার বুদ্ধির ওপর, গাধা যেখানে নিয়ে যাবে, সেটিই তাদের গন্তব্য।

ইউএনবি

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024