সারাক্ষণ রিপোর্ট
বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমস্যাযুক্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক-কে টাকা ছেপে অতিরিক্ত ২৫০০ কোটি টাকা লিকুইডিটি সহায়তা প্রদান করা হবে।
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ১৫০০ কোটি টাকা
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ১০০০ কোটি টাকা
এই পদক্ষেপের ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মোট ২৯,৯১০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করা হয়েছে।
ঋণের বিস্তারিত বণ্টন
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ৫৫০০ কোটি টাকা
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ৬৫০০ কোটি টাকা
- ন্যাশনাল ব্যাংক: ৫০০০ কোটি টাকা
- ইউনিয়ন ব্যাংক: ২০০০ কোটি টাকা
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক: ২০০ কোটি টাকা
- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক: ১০ কোটি টাকা
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ২০০০ কোটি টাকা
- এক্সিম ব্যাংক: ৮৫০০ কোটি টাকা
- এবি ব্যাংক: ২০০ কোটি টাকা

ব্যাংকিং সেক্টরের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান সমস্যা
২০২২ সালের শেষের দিকে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির খবর প্রকাশ পেতে শুরু করে। এর ফলে:
- গ্রাহকরা তাদের জমা টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখায়, যা লিকুইডিটির অভাব সৃষ্টি করে।
- ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত নগদ সংরক্ষণ অনুপাত ও সরকারি সিকিউরিটিজ নীতিতে ব্যর্থ হতে দেখা যায়।
পূর্বের ও বর্তমান নীতিমালা
- পূর্বের নীতি:
পূর্বের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বেআইনি সুবিধা প্রদান করে ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্যে মুদ্রণ করে লিকুইডিটি সরবরাহ এবং চলতি একাউন্টের ঘাটতি পূরণ করা ছিল।
- বর্তমান নীতি:
বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর সরাসরি টাকা মুদ্রণের মাধ্যমে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে, ব্যাংকগুলোর সংকটের মোকাবিলায় বিভিন্ন সময়ে টাকা ছেপে ঋণ প্রদান করছেন:
- গত নভেম্বর: ২২,৫০০ কোটি টাকা
- জানুয়ারি: ৪,৯১০ কোটি টাকা
- ১৩ মার্চ: অতিরিক্ত ২৫০০ কোটি টাকা
এ ঋণগুলো কোনো জামানত ছাড়াই সরাসরি প্রদান করা হয়েছে।

বাজারে প্রভাব ও অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া
- মূল্যস্ফীতি:
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক, সরাসরি ব্যাংকে টাকা ঋণ প্রদান করলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।
- বন্ড ইস্যুর পরিকল্পনা:
গত নভেম্বরের এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ঘোষণা করেছিলেন যে, মুদ্রণ করা হবে না; বরং বাজার থেকে সমপরিমাণ বন্ড ইস্যু করে লিকুইডিটি ব্যালেন্স বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।
- বাজার থেকে টাকা প্রত্যাহার:
৯০ ও ১৮০ দিনের বাংলাদেশ ব্যাংকের বিল চালু করে অতিরিক্ত টাকা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হলেও, গত দুই মাসে ১০টি নিলামের মাধ্যমে শুধুমাত্র ৩১৫৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা ঘোষণার সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ব্যাংকিং সেক্টরে চলমান সংকট মোকাবেলায় সরাসরি টাকা মুদ্রণের মাধ্যমে লিকুইডিটি প্রদান করা হলেও, এই পদক্ষেপটি অর্থনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। গবর্নরের বন্ড ইস্যুর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
Leave a Reply