সারাক্ষণ রিপোর্ট
বর্তমান বিশ্বে অভিবাসনের প্রথাগত ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। সীমাবদ্ধ সীমান্ত, কঠিন ভিসা নীতি এবং বিদেশি-বিরোধী মনোভাবের মাঝে অনেক অভিবাসী নতুন আশার সন্ধানে দুবাইয়ের দিকে মুখ ফিরিয়েছে। এখানে তারা নতুন জীবন গড়ে তুলছে, যেখানে দক্ষতা ও স্বপ্নের মূল্য এখন পূর্বের চাইতে অনেক বেশি।
নতুন অভিবাসন প্রবণতা
আধুনিক যুগের শিক্ষিত, মধ্য ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত জনগণ – আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে – সুযোগের সন্ধানে পারস্য উপসাগরের দিকে এগিয়ে আসছে। পশ্চিমে কঠোর অভিবাসন নীতি ও অনিচ্ছুকতা মোকাবেলার বদলে, তারা দুবাইয়ে আরও উষ্ণ স্বাগতম ও দীর্ঘমেয়াদী সুযোগ দেখতে পাচ্ছে।
লরিন ফ্রেডাহ এর যাত্রা
ক্যাম্পালার একটি সুসংগঠিত পরিবার থেকে আগত লরিন ফ্রেডাহ, যিনি একসময় বিমান বাহিনীর সহকারী ছিলেন, দুবাইয়ে তার নতুন জীবনের সূচনা করেন। যখন তাকে এয়ারএমস নামে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট পদের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন সে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ হিসেবে দেখেছিল। সেই চাকরি তাকে ভালো মজুরি, বিদেশে পড়াশোনা ও জেট-এজ গ্ল্যামারের স্বপ্নে পৌঁছানোর পথ খুলে দেয়। পরবর্তীতে, আইন শিক্ষায় প্রবেশ করে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
দুবাই: দক্ষ অভিবাসনের নতুন গন্তব্য
দুবাই শুধুমাত্র উঁচু-আকাশচুম্বী ভবন ও আধুনিক শপিং মলের শহর নয়, বরং দক্ষ অভিবাসনের গল্পই পুনর্লিখনের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে। একসময় কম দক্ষ শ্রমিকদের প্রাধান্য থাকলেও এখন এখানে অভিবাসন নীতি উদারীকরণ পেয়েছে। দেশটির সরকার দীর্ঘমেয়াদী থাকার সুযোগ, ‘গোল্ডেন ভিসা’ এবং স্পনসর ছাড়াই দক্ষ কর্মীদের বাসস্থানের সুবিধা প্রদান করে, যা তাদেরকে নতুন দেশে স্থায়ীভাবে অবস্থান করার জন্য উৎসাহিত করছে।
পরিবর্তিত অভিবাসন নীতি ও ‘গোল্ডেন ভিসা’
আর্থিক বৈচিত্র্যের সাথে সাথে, দুবাই ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো এখন উদ্দ্যোগী, প্রকৌশলী, শিল্পী, শেফ, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং অন্যান্য দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করছে। বিশেষ করে ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রোগ্রামটি, যা উচ্চ দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে পাঁচ বা দশ বছরের জন্য বাসস্থান প্রদান করে, শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত অভিবাসীদের আকর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নীতিমালা শুধু ভালো কাজের সুযোগ নয়, বরং জীবনের মান, সাশ্রয়ী খরচ এবং সহজ যোগাযোগের সুবিধাও প্রদান করছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দিশা
দুবাইতে দীর্ঘমেয়াদী থাকার সুবিধা থাকলেও নাগরিকত্ব প্রাপ্তির দিকটি অত্যন্ত কঠিন। অনেক অভিবাসী, যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছে, তারা বুঝতে পারছেন—যেখানে তারা ভালো কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার সুবিধা পাচ্ছে, সেখানে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি প্রায় অসম্ভব। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায়, যেখানে স্থায়ী বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের পথ থাকে, এখানে শুধু দেশীয় জনগণেই নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে। এর ফলে, অভিবাসীদের মাঝে নিরাপত্তা, সন্তানদের শিক্ষার মান এবং সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অভিবাসী তাদের ভিসার জটিল প্রক্রিয়া ও কঠোর নিয়মাবলীর কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন, এমনকি সফল ব্যবসায়ীরা ক্ষেত্রবিশেষে বিদেশে কাজ করতে বাধা অনুভব করেছেন।
উপসংহার
বিশ্বের জন্মহার হ্রাসের সাথে সাথে অনেক দেশ কর্মী সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এর প্রেক্ষাপটে, দক্ষ ও উচ্চমেধাবী অভিবাসীদের জন্য প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। দুবাই ও উপসাগরীয় দেশগুলো, যদিও নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, তারা একটি উজ্জ্বল, বহুমুখী ও গতিশীল জীবনযাত্রার আশ্বাস দিচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যত সেই দিন, যেখানে আমরা গভীরভাবে শিকড় বেঁধে বসে না, বরং চলমান অংশগ্রহণ এবং চলমান অভিবাসনের মধ্যেই নিজেদের গড়ে তুলব।
Leave a Reply