সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
সিডনিতে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান কৃষকরা বহু বছর ধরে অনিশ্চিত আবহাওয়ার সাথে মোকাবিলা করে আসছেন। এখন তারা একটি চঞ্চল বাণিজ্য পরিবেশে নজর রাখছেন, যা বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়াতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক ও চীনের প্রভাব
কমনওয়েলথ ব্যাংকের কৃষি অর্থনীতিবিদ ডেনিস ভোজনেসেনস্কি বলেছেন, মার্কিন কৃষি রপ্তানির উপর চীনের ১৫% প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করার ফলে অস্ট্রেলিয়ার গম, বার্লি এবং সরগম (সোরঘাম) এর রপ্তানি এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিতে বাড়তে পারে – তবে তা তৎক্ষণাৎ হবে না। চীন বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে শস্যের সঞ্চয় সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং চাহিদাও কম হওয়ায় গম ও বার্লি আমদানি যথাক্রমে ৭৫% ও ৫৪% হ্রাস পেয়েছে। তবে, এই সঞ্চয় শেষ হলে অস্ট্রেলিয়ান রপ্তানিকারকদের পক্ষে সুযোগ উন্মুক্ত হতে পারে।
ডেনিস ভোজনেসেনস্কি যোগ করেন,”প্রশ্ন হলো, তারা কখন কেনা শুরু করবে? হয়তো তা এখনই নয়, বরং বছরের পরবর্তীতে হতে পারে।”
অস্ট্রেলিয়ার কৃষি রপ্তানি ও বাজারের অবস্থা
অস্ট্রেলিয়ার কৃষি রপ্তানি ২০২৪ অর্থবছরে ৭১ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের অধীনে মূল্যায়িত হয়েছিল, যা দেশের মোট পণ্য ও সেবা রপ্তানির ১০%। ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্কের ফলে বাণিজ্যিক অস্থিরতা দেখা দিলেও এই খাতে কিছু ইতিবাচক দিক ও সম্ভাব্য ঝুঁকি বিদ্যমান।
বীফ রপ্তানি ও নতুন সুযোগ
গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিফ রপ্তানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে, AU$১.৯ বিলিয়ন থেকে AU$৩.৩ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে, কারণ দীর্ঘস্থায়ী খরা মার্কিন গবাদি পশু পুনর্নবীকরণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
ডেনিস ভোজনেসেনস্কি আরও উল্লেখ করেন,”ট্রাম্পের ২৫% শুল্ক মেক্সিকো ও কানাডার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে, যা মার্কিন বাজার থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে একটি স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।”
তবে, শুল্কের পুনর্বিবেচনা ও সাময়িক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন মার্কিন-মেক্সিকো-কানাডা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতাধীন পণ্যের জন্য আগস্ট ২ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাবোব্যাঙ্কের সিনিয়র এনালিস্ট এঙ্গাস গিডলি-বার্ড জানান,”প্রাথমিকভাবে সম্ভাবনা আছে, তবে সরবরাহ চেইনের জটিলতা ও বিভিন্ন কাটের বিফের কারণে এটি একটি বিশাল লাভ হিসেবে দেখা যাবে কিনা, তা সন্দেহজনক। সম্ভবত পণ্যের বিনিময়ে একটি পুনর্বিন্যাস ঘটবে।”
বাজারের ভবিষ্যৎ দিক
রেঞ্জার্স ভ্যালি ক্যাটল স্টেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিথ হাউ বলছেন, “মার্কিন বিফের দাম ইতিমধ্যেই উচ্চ, তাই চীনে পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ আমাদের জন্য সুযোগ এনে দিতে পারে।”
তবে, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি প্রিমিয়াম বাজারে কাজ করে, বাণিজ্যিক সংঘর্ষের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা হলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের মন্তব্য
গত সপ্তাহে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লিখেছেন,”মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহান কৃষকদের: যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিক্রয়ের জন্য প্রচুর কৃষি পণ্য তৈরির প্রস্তুতি নিন। ২রা এপ্রিলে বহির্বিশ্বের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ শুরু হবে। মজা করুন!”
মোটামুটি বক্তব্য
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ফার্মার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ডেভিড জোচিঙ্কে উল্লেখ করেন,”দেশের ৭০% কৃষিপণ্য রপ্তানি হওয়ায় শিল্পের সাফল্য মুক্ত বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। যদিও কিছু স্বল্পমেয়াদী চাহিদার পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, আমরা বিশ্বাস করি মুক্ত ও খোলা বাজার গ্লোবাল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।”
উপসংহার
বাণিজ্য ও শুল্ক নীতি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ার কৃষি খাত ভবিষ্যতে উভয় ধরণের প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে – সম্ভাব্য লাভ এবং ঝুঁকির সমন্বয়ে।
Leave a Reply