সারাক্ষণ রিপোর্ট
আজ শুক্রবার, বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি জসীমউদ্দীনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। পল্লীকবি হিসেবে পরিচিত এই মহান সাহিত্যিককে স্মরণ করতে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
ফরিদপুরে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ
ফরিদপুরের আম্বিকাপুর এলাকায় কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হয়। সকাল ১০টায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জসীমউদ্দীন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল জলিলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান
পরে, জেলা প্রশাসন ও জসীমউদ্দীন ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে কবির বাড়ির প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার আবদুল জলিল এবং জসীমউদ্দীনের পুত্র খুরশিদ আনোয়ারসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
জসীমউদ্দীনের জীবন ও কর্ম
জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯২৪ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ সালে বিএ এবং ১৯৩১ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
ফোকলোর সংগ্রহ ও সাহিত্যকর্ম
১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্রখ্যাত বাঙালি লেখক ও শিক্ষাবিদ দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোকসাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। এই সময়ে তিনি পূর্ববঙ্গের গীতিকা সংগ্রহ করেন এবং ১০,০০০-এরও বেশি লোকগান সংগ্রহ করেন, যা পরবর্তীতে ‘জারি গান’ ও ‘মুর্শিদা গান’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রসিদ্ধ সাহিত্যকর্ম
জসীমউদ্দীনের দুটি বিখ্যাত রচনা ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ও ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী অনূদিত হয়েছে। তিনি কবিতা, পালা, গান, নাটক, উপন্যাস, গল্প, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনীসহ বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যকর্মে সমৃদ্ধ অবদান রেখেছেন।
গীতিকার ও সমাজকর্মী
গীতিকার হিসেবে জসীমউদ্দীন ‘আমার সোনার ময়না পাখি’, ‘প্রাণ সখি রে’, ‘আমায় এত রাতে’, ‘নিশিতে যাইও ফুলবনে’, ‘আমার হার কালা করলাম রে’, ‘আমায় ভাসাইলি রে’ প্রভৃতি জনপ্রিয় বাংলা গান রচনা করেছেন। এছাড়াও, তিনি সমাজতন্ত্র ও বাংলা ভাষা আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড ফর প্রাইড অব পারফরম্যান্স, ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি, ১৯৭৬ সালে একুশে পদক এবং ১৯৭৮ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলা একাডেমি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করে, যা বাংলা সাহিত্যে আজীবন অবদানের জন্য দ্বিবার্ষিক পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়।
মৃত্যু ও সমাধিস্থল
১৯৭৬ সালের এই দিনে ৭৩ বছর বয়সে ঢাকায় জসীমউদ্দীন মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ফরিদপুরের গোবিন্দপুরে তার পৈতৃক বাড়িতে সমাহিত করা হয়।