সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
-
উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের অভাব, দক্ষ শ্রমিকের সংকট, সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং প্রতিযোগিতার অভাবের কারণে বাংলাদেশের হস্তশিল্প খাত প্রত্যাশিত রপ্তানি আয় অর্জন করতে পারছে না।
-
চীনের উচ্চ করের কারণে মার্কিন ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছেন, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জাপানে জিএসপি সুবিধার ফলে রপ্তানি বাড়ছে।
-
হস্তশিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি, দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা, নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করার প্রয়োজন।
বাংলাদেশের হস্তশিল্প খাত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের অভাব, নতুন ডিজাইনের সংকট এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাবের কারণে এই খাত প্রত্যাশিত রপ্তানি আয় অর্জন করতে পারছে না।এছাড়া, সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, প্রতিযোগিতার অভাব ও দেশের ব্র্যান্ডিং সমস্যাও এই খাতের স্থবিরতার অন্যতম কারণ।
সম্ভাবনা ও বাজার পরিস্থিতি
উচ্চ উৎপাদন ব্যয়ের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতা চীন ও ভিয়েতনামের পরিবর্তে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সরবরাহকারী হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা শ্রম এই খাতকে শক্তিশালী করতে পারে, যদি যথাযথ নীতি সহায়তা পাওয়া যায়।
হস্তশিল্প রপ্তানির ওঠানামা
গত পাঁচ অর্থবছরে (২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪) বাংলাদেশের হস্তশিল্প রপ্তানি আয় পরিবর্তিত হয়েছে।
- ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৪২.৮৩ মিলিয়ন ডলার।
- কোভিড-১৯ মহামারির সময় পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক পণ্যের চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল।
- তবে পরবর্তী দুই অর্থবছরে আয় কমে গেছে।
উৎপাদন ব্যবস্থা ও প্রধান উপাদান
বাংলাদেশের হস্তশিল্প খাত প্রধানত পাট, বাঁশ ও বেত-নির্ভর। পাশাপাশি, মৃৎশিল্প, পাপেট্রি, সূচিকর্ম ও টেপেস্ট্রিও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ অনুসারে:
- ৪৪% হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান বাঁশ ও বেত ব্যবহার করে।
- দেশজুড়ে ৭৩,৫৪২টি হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার ৯৭.৬% গৃহভিত্তিক।
- নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানায় রয়েছে ৫১.২% প্রতিষ্ঠান।
রপ্তানির নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
এফবিসিসিআই-এক জন সাবেক পরিচালক মনে করেন, চ্যালেঞ্জগুলো দূর করতে পারলে হস্তশিল্প খাত থেকে আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তন
- জার্মানির অ্যাম্বিয়েন্ট ফেয়ার মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে মুননা জানান, চীনের উচ্চ করের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বিকল্প দেশ খুঁজছেন।
- মার্কিন ক্রেতাদের এখন চীন থেকে আমদানি করতে ৫০% বেশি কর দিতে হয়, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জাপানে বাংলাদেশের হস্তশিল্প রপ্তানি জিএসপি সুবিধার কারণে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উৎপাদন ও শ্রম চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের শ্রম ব্যয় কম হলেও উৎপাদনশীলতা চীনের তুলনায় চার গুণ কম।
মুননার মতে:
- চীনারা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে।
- বাংলাদেশকে বৃহৎ উৎপাদন সুবিধা স্থাপন, ডিজাইন উদ্ভাবন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
বৈশ্বিক বাজার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশ ৫০টিরও বেশি দেশে হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে রয়েছে:
হাতে তৈরি পোশাক
মাটির সামগ্রী
পাট, বেত ও সামুদ্রিক আগাছা দিয়ে তৈরি গৃহস্থালি পণ্য
বৈশ্বিক বাজারের প্রসার
গবেষণা সংস্থার মতে
- ২০২২ সালে বৈশ্বিক হস্তশিল্প বাজারের মূল্য ছিল ১০০৫.৪৯ বিলিয়ন ডলার।
- ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ২৩১৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।
- ২০২৩-২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার হবে ১১%।
উপসংহার: করণীয় কী?
বাংলাদেশের হস্তশিল্প খাতের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন:
উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি
দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা
নতুন ডিজাইন ও উদ্ভাবন
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করা
যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক হস্তশিল্প বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে সক্ষম হবে।