সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্ট এলাকায় পর্যটন বরাবরই অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পর্বতারোহীদের ভিড়, পরিবেশগত ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নেপাল সরকার নতুন ও আরও কঠোর নিয়মকানুন প্রণয়ন করতে শুরু করেছে।
পেম্বা শেরপার অভিজ্ঞতা
২০১৮ সালে পেম্বা শেরপা ইউরোপের দুই পর্বতারোহীকে এভারেস্টের চূড়ায় সহায়তা করতে গিয়ে ‘দ্য ব্যালকনি’ (৮,৪৩০ মিটার) পর্যন্ত উঠেছিলেন। কিন্তু নতুন জুতোর অস্বস্তি ও তীব্র ব্যথার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি আর সামনে এগোননি। যদিও এর আগে এক দশকের মধ্যে তিনি আটবার এভারেস্ট জয় করেছেন।
এভারেস্টের বাড়তি ঝুঁকি
নেপালে এভারেস্ট ‘সগরমাথা’ নামেও পরিচিত। গত কয়েক বছরে এখানে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
শুধু ২০২৩ সালের আরোহন মৌসুমেই এভারেস্টে ১৮ জন মারা গেছেন— যা এক বর্ষপঞ্জি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিদেশি হলেও শেরপা ও অন্যান্য নেপালি গাইডরা উচ্চঝুঁকিতে থাকেন।
নতুন বিধিনিষেধ ও সম্ভাব্য প্রভাব
নেপালের সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালের এপ্রিলে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, এভারেস্ট-আরোহণ ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আরও কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে ২০২৫ সালের প্রধান আরোহণ মৌসুম শেষ হওয়ার পর (সেপ্টেম্বরের দিকে) কিছু নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
অতিরিক্ত পারমিট ফি ও মৌসুমভেদে মূল্য
নেপালের অর্থনীতিতে পর্যটন বিশাল অবদান রাখে, যেখানে এভারেস্ট-পর্যটন অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ২০২৩ সালে নেপালে আসা ১.০১ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটকের মধ্যে ১,৫৪,২৬২ জন পাহাড়ি ট্রেকিং ও পর্বতারোহণে এসেছিলেন, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এভারেস্ট অঞ্চলে যান।
সরকার আশা করছে, এর মাধ্যমে বছরের অন্যান্য সময়েও এভারেস্টে আরোহণের চাপ ছড়িয়ে পড়বে। তবে অনেকে আবহাওয়ার কারণে অফ-সিজনে উঠতে অনাগ্রহী হতে পারেন, আবার কিছু অভিজ্ঞ পর্বতারোহী ভিড় এড়াতে এই সময়কে বেছে নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেস ক্যাম্পের ভোগবিলাস ও নিয়ন্ত্রণ
২০১৫ সালের পর থেকে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে আরামদায়ক সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে— বড় বড় কোম্পানি কফি মেশিন থেকে টেবিল গেম পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে।
গাইড ও সমর্থনকর্মীদের নিরাপত্তা
নতুন নিয়মে গাইডদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ৩৫০ নেপালি রুপি থেকে বেড়ে ১,২০০ রুপিতে উন্নীত হবে। এ ছাড়া জীবনবিমার সর্বোচ্চ সীমা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ লাখ নেপালি রুপি। যদিও অনেকে মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতি ও কাজের ঝুঁকির তুলনায় এটিও যথেষ্ট নয়।
সরকারি নিয়ম বাস্তবায়নের ফাঁক-ফোকর
নেপাল সরকার অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, পর্বতারোহণ পর্যবেক্ষণের জন্য ‘লিয়াজোঁ অফিসার’ নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে অনেক কর্মকর্তা শহরেই থেকে যান এবং বেস ক্যাম্পে উপস্থিত হন না।
চীনের কঠোর নিয়ম ও তুলনা
এভারেস্টের উত্তর পার্শ্ব (তিব্বত) চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। সেখানে:
এ ছাড়া প্রতিটি দলের কাছ থেকে ১,৫০০ ডলার ফি নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়।
এভারেস্টে নেপালের ভূমিকা অব্যাহত
নতুন নিয়মে খরচ ও আনুষ্ঠানিকতা কিছুটা বেড়ে গেলেও, এভারেস্টের দক্ষিণ দিক (নেপাল) এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট।
উপসংহার
নেপাল সরকার এভারেস্টকে নিরাপদ ও টেকসই রাখতে নতুন নিয়ম, বাড়তি পারমিট ফি এবং কঠোর নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে। এ পরিবর্তনগুলো কার্যকর হবে কি না, তা দেখতে সময় লাগবে। তবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতকে রক্ষা ও সুরক্ষিত রাখতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, স্থানীয় সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটন ক্ষেত্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন।
Leave a Reply