মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

কার ঘা্ড়ে দোষ পড়বে আলুর ওপর -না, যাদের আলুর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা নেই

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ২.৪০ পিএম

প্রণব বড়ুয়া 

‘ আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।’ শ্লোগান বা প্রপাগন্ডা যাই বলুন এমন কথার জোর প্রচার এখন আর চলে না,যদিও এখন দেশের আলুর উৎপাদন হয়েছে চাহিদার থেকে বেশি। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন ( কেউ কেউ একে সুগারকোটেড মার্শাল ল বলেও অভিহিত করেন) সরকারের সময় হোটেল রেডিসনে আলুর অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ে গেলো। ঐ অনুষ্ঠানের মধ্যমনি জেনারেল মঈন উ আহমেদের আলু নিয়ে বক্তৃতা প্রশংসিত হয়েছিল ,এখন অবশ্য সেই সরকারের সমালোচনাই বেশি। এবারের অর্ন্তবর্তী সরকারে তো শুধু কৃষি মন্ত্রনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট উপদেষ্টাই নেই, বেশি আলু ফলিয়ে  বিপাকে পড়া কৃষকের স্বার্থ রক্ষার কথা কে বলবে ? দ্রব্যমূল্য কমানো নিয়ে হিমশিম খাওয়া সরকার তো আলুর দাম বাড়ানোর কথা বলতে পারে না ! কিন্তু এবার যদি আলু উৎপাদন খরচ তুলতে না পারে আলুচাষীরা,তবে কিন্তু আগামী বছর এতো আলু রাস্তায় গড়াগড়ি খাবে না , তখন ভারত থেকে, থুক্কু মিয়ানমার বা পাকিস্তান এমনকি চীন থেকেও আনতে হতে পারে আলু। যদিও আলু রপ্তানীর অভিজ্ঞতাও কিন্তু আছে বাংলাদেশের ,তাও আবার মালয়েশিয়া এমনকি রাশিয়াতেও।

২০২৩ সালের আলুর কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রী শুরু হলে তখন ভারত থেকে আলু আমদানীর অনুমতি দিতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতায় কোমর বেধে মাঠে নেমেছিল আলুচাষীরা। বেশি দামের বীজ কিনেছিল, এখন অধিক ফলন ফলিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে কারন কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে করেছিল মন প্রতি ৮ টাকা,সরকারের কৃষি বিপনন অধিদপ্তর তা কমিয়ে নির্ধারণ করেছে ৬ টাকা ৪৫ পয়সায় । রোজার মাসে আলুর দাম কম থাকায় লাভ হচ্ছে রেস্তারা ব্যবসায়ীদের কারন গতবারের চেয়ে আলুর চপের দাম কমাননি তারা। বাড়ির গৃহকর্তীও খুশি, প্রতিদিনই চপ বানাচ্ছেন,ভেতরে ডিমসহ। কারন ডিমের ডজনও নেমেছে ১২০ টাকায়। শুধু সয়াবিনটাই উধাও হয়েছিল রোজার আগে থেকে, এখন কিছুটা সরবরাহ বাড়লেও আগের বাড়তি দাম কিন্তু আর কমেনি।

গনমাধ্যমে দেখছি আলু নিয়ে নানান খবর। শুধু প্রথম আলোতেই ফেব্রুয়ারি আর মার্চের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ১৪টি খবর,সম্পাদকীয় ও মতামত ছাপা হয়েছে।

খবরেগুলোর শিরোনাম এমন , রংপুরের ৭০ শতাংশ আলু রাখার হিমাগার নেই । হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ । হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে তিন ঘন্টা সড়ক অবরোধ। মালয়েশিয়াসহ ছয় দেশে রপ্তানি হচ্ছে বগুড়ান আলু। ক্ষেতে আলু, আগেই হিমাগারের সংক্ষেণের স্লিপ শেষ,বিপাকে কৃষক। যৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে,দাবি হিমাগার সমিতির। হিমাগারের অন্যায্য ও অযৌক্তিক ভাড়া বাড়ানোর দাবি হিমাগার সমিতির। প্রথম আলোতে প্রকাশিত জহির রায়হানের লেখার শিরোনাম “ আলুচাষীরা দুশ্চিন্তায় : এত বড় লোকসানের বোঝা সইবেন কী করে ? আলুর দাম এবছর কমেছে, আমাদের খুশি বেড়েছে। তেলের দাম কম থাকলে প্রতিদিনই আলু ভর্তা আর আলুর দম খেতাম। আলুর তরকারিতে টমেটো দিলেও মজা লাগে,সেই টমেটো তো মাত্র ২০/৩০ টাকা কেজি । কিন্তু বাড়তি তেলের দাম, আর কোন কোন মিনিকেটের দাম নাকি শতটাকা কেজি বলে শুনলাম টিভির খবরে !

আসলে সমস্যাটা আলুর , তবে সমস্যা তো আর  আলুর হতে পারে না, আলু তো একটি ফসল। সমস্যা যারা আলু নিয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেননি। যার ফলে কেন বেশি আলু ফলিয়ে এখন কৃষক হাহাকার করছে? বছরে ৮০/৯০ লাখ টন আলু লাগে, ফলন হয়েছে নাকি ১ কোটি ১০ টনের বেশি। সুযোগ বুঝেই কি কোল্ড স্টেরেজের মালিকরা ভাড়া বাড়ালো ? আলু উৎপাদন ভালো হয় উত্তরের নঁওগা জেলায় । এই জেলায় কোল্ডস্টেরেজগুলোতে ধারন ক্ষমতা ৭০ হাজার মেট্রিক টন । আলুর উৎপাদন প্রায় সাড়ে চার লাখ টন ।এই জেলা কিন্তু ধানেরও জেলা , তবে কি নওগার লোক ভাত কম খেয়ে বেশি দামে বিক্রী করে আলু খাওয়া বাড়াবে ? কে নিবে এই উদ্যোগ ? দেশে তো এখন কোনো জনপ্রতিনিধি নাই ? সরকার ও প্রশাসনও ব্যস্ত সংস্কারে !

গত ১১ মার্চ বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে “ এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে । তবে বাম্পার ফলনের কারনে মৌসুমের শুরুতেই দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে ক্ষেতেই ১৩/১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রী করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। অথচ প্রতি কেজিতে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ১৫ টাকা। ’’

শুধু বগুড়া নয়, বলা যায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি বাজার বগুড়ার মহাস্থানহাট । এখানে প্রতিদিন শত মত মন আলু কেনাবেচা,আসেন সারাদেশের পাইকাররা। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানালেন , গত বছর ২০২৪ সালের মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারির মাঝামাঝি আলুর দাম ছিল মণপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ৭০০ টাকায় নেমে যায়। কিন্তু এবার ২০২৫ সালের আলু উত্তোলনের শুরুতে ১ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে কেনা-বেচা হলেও বর্তমানে জানুয়ারির পর থেকে জাতভেদে তা ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় নেমে আসে।

গত মাসে একজন বৃটিশ ফুড ব্লগার এসেছিলেন বাংলাদেশে । ঢাকার বাইরে কোথায় যেতে পারেন, ঐতিহাসিক নিদর্শণ বা আদিবাসী সংস্কৃতি নয় এদেশের খাবার ও খাদ্য সংস্কৃতি দেখাই তার প্রধান লক্ষ্য। স্বাভাবিকই এসেছিল বগুড়ার ঐতিহ্যবাহি দইয়ের কথা। আর যখন বগুড়ায় যাবেন তখন সেখানকার ঐতিহ্যবাহি খাবার “ আলু ঘাটির “ কথা বলেছিলেন একজন স্থানীয় সাংবাদিক। নাগরিক সমাজে আলু খাবার নানান পদ আছে, তারা সেভাবে  আলু খান বটে, কিন্তু বেশিরভাগই জানে না “আলু-ঘাটি” কথা আর কজনই বা মনে রাখছে যে উদ্বৃত্ত আলুর দেশ বাংলাদেশ এখন রপ্তানী ছেড়ে নেমেছে আলু আমদানীতে। আর এখন আলু সংরক্ষণে যে কোল্ড স্টেরেজের ভাড়া প্রতি কেজি ৪ থেকে ৬ টাকার বেশি হলো, অর্থাৎ দেড়গুন হয়ে গেলো, ৬০ টাকার আলু ২০/২৫ এ কিনতে পেরে আর ভবিষ্যতের কথাও ভাবছে না কেউ, কৃষকের ক্ষতির কথা বা কোল্ডস্টেরেজে আলুর ভাড়া বাড়ানোর আন্দোলনে কৃষক যে রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ করছে তাই বা কজন খেয়াল করছে। এখনতো তেলের সংকট, আলু ভাজা নিয়ে চিন্তায় সবাই কিন্তু আলুর দাম নিয়ে নয় । কিন্তু কিছুদিন পরে আলুর দাম বাড়লে কিন্তু আলুরই দোষ হবে, যারা আগাম কোনো ব্যবস্থা নিলনা তাদের কি হবে ?

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024