১২:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন” ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫২) শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত: ডিএসই-তে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড এনসিপি বুলেট নিয়েও প্রস্তুত- নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭৬)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • 146
শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাহাতে সুসভ্য ইংরেজ জাতির সুসভ্য গবর্ণর লিখিয়া পাঠান যে, রাজমাতা হয় ত সৈন্যদিগকে বঞ্চনা করিবার জন্য বিজয়গড় হইতে অনেক ধনসম্পত্তি, মণিমুক্তা লইয়া পলায়ন করিবেন। তাঁহাদিগকে বিনা পরীক্ষায় যাইতে দেওয়া সঙ্গত নহে। এ বিষয়ে তুমি যাহা হয় বিবেচনা করিও। ইহা অপেক্ষা আর স্পষ্ট আদেশ কি হইতে পারে? এই সময়ে হেষ্টিংস, কান্তবাবুকেও বিজয়গড়ে প্রেরণ করিয়াছিলেন। রাজমাতা কান্তবাবুকে বিশেষ অনুনয়বিনয় করিয়া ও তাঁহাকে কয়েকখানি বহুমূল্য অলঙ্কার প্রদানপূর্ব্বক এই অনুরোধ করেন যে, যদি তাঁহার ও তাঁহার সহচরীবর্গের প্রতি কোনরূপ অত্যাচার বা অবমাননা করা না হয়, তাহা হইলে তিনি বিজয়গড় দুর্গ ও যাবতীয় ধনসম্পত্তি ইংরেজহস্তে সমর্পণ করিতে ইচ্ছুক আছেন। হেষ্টিংস রাজমাতার এ কথা নিজমুখে ব্যক্ত করিয়াছেন।
হেষ্টিংস কান্তবাবুর নিকট হইতে এ সংবাদ পাইয়া বলিয়া পাঠান যে, রাজমাতা যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাদিগের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যতীত অন্যান্য মূল্যবান্ সমস্ত দ্রব্য সমর্পণ করেন, তাহা হইলে তাঁহার প্রার্থনা সম্বন্ধে বিবেচনা করা যাইতে পারে। সময়াভাবেই হউক, অথবা যে কারণেই হউক, রাজমাতা গবর্ণর জেনারেলের আদেশ পালন করিয়া উঠিতে পারেন নাই; কাজেই পরিণামে তাঁহাকে অত্যাচার ও অবমাননা ভোগ করিতে হইল। সৈনিকগণ সেনাপতির নিষেধসত্ত্বেও রাজমাতা ও তাঁহার সহচরীবর্গকে আক্রমণ করিয়া লাঞ্ছনার একশেষ করিল। তাহারা তাঁহাদিগের অঙ্গস্পর্শ করিয়া আপনাদিগের লুণ্ঠনযোগ্য মণিমুক্তার অনুসন্ধান করিতে লাগিল। রাজ-মাতা, রাজরাণী আজ সহায়হীনা।
যবনের অত্যাচারে সংজ্ঞাহীনা হইলেন। নিকটে কেহ নাই যে, তাঁহাদিগকে সাহায্য করে। কান্ত বাবু অনেক চেষ্টা করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। পপহাম সাহেবের অনেক চেষ্টায় পরিশেষে তাঁহারা নিষ্কৃতি লাভ করেন। সৈন্য-দিগের এই অত্যাচারকাহিনী পপহাম, সাহেব নিজে হেষ্টিংসকে লিখিয়া পাঠান। কেবলই গবর্ণরের কঠোরতার জন্য যে, এই লোমহর্ষণ ঘটনা সংঘটিত হয়, তাহা বোধ হয় কাহারও বুঝিতে বিলম্ব ঘটিবে না। অনেক দিন হইতে হিন্দুর অস্তিত্ব রসাতলে নিমগ্ন হইয়াছে, নতুবা সতীশিরোমণি তাহাদের জননী ভগিনীর প্রতি কে সাহস করিয়া এরূপ অত্যাচার করিতে সমর্থ হয়? চেৎসিংহের পরিবারবর্গ অনাথার ন্যায় একদিক্ দিয়া চলিয়া গেলেন।
গবর্ণর হেষ্টিংস এই সমস্ত লুণ্ঠন দ্রব্যের অংশ চাহিলে, সৈনিকগণ তাঁহাকে এক কপর্দকও প্রদান করে নাই। তথাপি এই ভীষণ কাণ্ডে একেবারে হেষ্টিংস সাহেব যে কিছু লাভ করিতে পারেন নাই, তাহা বিশ্বাস করিতে পারা যায় না। এতদঞ্চলে এক গল্প প্রচলিত আছে যে, হেষ্টিংস সাহেব কাশীক্ষেত্রে রাজা চেৎসিংহের প্রাসাদ আক্রমণ করিলে, সৈন্যগণ যৎকালে রাজ-রাণীকে আক্রমণ করিতে ধাবিত হয়, সেই সময়ে কান্তবাবু মহত্ত্বের পরিচয় প্রদানে সৈনিকগণকে নিবৃত্ত করিয়া, তাঁহাদিগকে রক্ষা করিয়া-ছিলেন। আমরা ইহার যথাসাধ্য আলোচনা করিতেছি।
জনপ্রিয় সংবাদ

নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন”

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭৬)

১১:০০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাহাতে সুসভ্য ইংরেজ জাতির সুসভ্য গবর্ণর লিখিয়া পাঠান যে, রাজমাতা হয় ত সৈন্যদিগকে বঞ্চনা করিবার জন্য বিজয়গড় হইতে অনেক ধনসম্পত্তি, মণিমুক্তা লইয়া পলায়ন করিবেন। তাঁহাদিগকে বিনা পরীক্ষায় যাইতে দেওয়া সঙ্গত নহে। এ বিষয়ে তুমি যাহা হয় বিবেচনা করিও। ইহা অপেক্ষা আর স্পষ্ট আদেশ কি হইতে পারে? এই সময়ে হেষ্টিংস, কান্তবাবুকেও বিজয়গড়ে প্রেরণ করিয়াছিলেন। রাজমাতা কান্তবাবুকে বিশেষ অনুনয়বিনয় করিয়া ও তাঁহাকে কয়েকখানি বহুমূল্য অলঙ্কার প্রদানপূর্ব্বক এই অনুরোধ করেন যে, যদি তাঁহার ও তাঁহার সহচরীবর্গের প্রতি কোনরূপ অত্যাচার বা অবমাননা করা না হয়, তাহা হইলে তিনি বিজয়গড় দুর্গ ও যাবতীয় ধনসম্পত্তি ইংরেজহস্তে সমর্পণ করিতে ইচ্ছুক আছেন। হেষ্টিংস রাজমাতার এ কথা নিজমুখে ব্যক্ত করিয়াছেন।
হেষ্টিংস কান্তবাবুর নিকট হইতে এ সংবাদ পাইয়া বলিয়া পাঠান যে, রাজমাতা যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাদিগের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যতীত অন্যান্য মূল্যবান্ সমস্ত দ্রব্য সমর্পণ করেন, তাহা হইলে তাঁহার প্রার্থনা সম্বন্ধে বিবেচনা করা যাইতে পারে। সময়াভাবেই হউক, অথবা যে কারণেই হউক, রাজমাতা গবর্ণর জেনারেলের আদেশ পালন করিয়া উঠিতে পারেন নাই; কাজেই পরিণামে তাঁহাকে অত্যাচার ও অবমাননা ভোগ করিতে হইল। সৈনিকগণ সেনাপতির নিষেধসত্ত্বেও রাজমাতা ও তাঁহার সহচরীবর্গকে আক্রমণ করিয়া লাঞ্ছনার একশেষ করিল। তাহারা তাঁহাদিগের অঙ্গস্পর্শ করিয়া আপনাদিগের লুণ্ঠনযোগ্য মণিমুক্তার অনুসন্ধান করিতে লাগিল। রাজ-মাতা, রাজরাণী আজ সহায়হীনা।
যবনের অত্যাচারে সংজ্ঞাহীনা হইলেন। নিকটে কেহ নাই যে, তাঁহাদিগকে সাহায্য করে। কান্ত বাবু অনেক চেষ্টা করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। পপহাম সাহেবের অনেক চেষ্টায় পরিশেষে তাঁহারা নিষ্কৃতি লাভ করেন। সৈন্য-দিগের এই অত্যাচারকাহিনী পপহাম, সাহেব নিজে হেষ্টিংসকে লিখিয়া পাঠান। কেবলই গবর্ণরের কঠোরতার জন্য যে, এই লোমহর্ষণ ঘটনা সংঘটিত হয়, তাহা বোধ হয় কাহারও বুঝিতে বিলম্ব ঘটিবে না। অনেক দিন হইতে হিন্দুর অস্তিত্ব রসাতলে নিমগ্ন হইয়াছে, নতুবা সতীশিরোমণি তাহাদের জননী ভগিনীর প্রতি কে সাহস করিয়া এরূপ অত্যাচার করিতে সমর্থ হয়? চেৎসিংহের পরিবারবর্গ অনাথার ন্যায় একদিক্ দিয়া চলিয়া গেলেন।
গবর্ণর হেষ্টিংস এই সমস্ত লুণ্ঠন দ্রব্যের অংশ চাহিলে, সৈনিকগণ তাঁহাকে এক কপর্দকও প্রদান করে নাই। তথাপি এই ভীষণ কাণ্ডে একেবারে হেষ্টিংস সাহেব যে কিছু লাভ করিতে পারেন নাই, তাহা বিশ্বাস করিতে পারা যায় না। এতদঞ্চলে এক গল্প প্রচলিত আছে যে, হেষ্টিংস সাহেব কাশীক্ষেত্রে রাজা চেৎসিংহের প্রাসাদ আক্রমণ করিলে, সৈন্যগণ যৎকালে রাজ-রাণীকে আক্রমণ করিতে ধাবিত হয়, সেই সময়ে কান্তবাবু মহত্ত্বের পরিচয় প্রদানে সৈনিকগণকে নিবৃত্ত করিয়া, তাঁহাদিগকে রক্ষা করিয়া-ছিলেন। আমরা ইহার যথাসাধ্য আলোচনা করিতেছি।