০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা – জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

  • Sarakhon Report
  • ০৪:১০:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
  • 29

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • খাদ্য, জ্বালানি ও বাসস্থানের সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়বে
  • মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য রেশন কমে যেতে পারে
  • মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অনিরাপত্তা ও খাদ্যসংকটের কারণে ২০২৪ সালেও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে
  • জাতিসংঘ সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে

জাতিসংঘের দুইটি সংস্থা সম্প্রতি সতর্ক করেছে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে গেলে বাংলাদেশে মানবিক পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

যৌথভাবে বহু-বার্ষিক তহবিলের আহ্বান

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) এবার প্রথমবারের মতো একসাথে বহু-বার্ষিক অর্থায়নের আবেদন জানিয়েছে।
এই তহবিলের লক্ষ্য হলো—বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে।

দুই সংস্থা তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছে:

“খাদ্য, জ্বালানি ও বাসস্থানের সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়বে এবং অনেকেই নিরাপত্তা খোঁজার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রায় বেরিয়ে পড়বে।”

২০২৫-২০২৬ সাল পর্যন্ত এই কর্মপরিকল্পনার প্রথম বছরে তারা ৯৩৪.৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে, যা ১১৩টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

খাদ্য সহায়তা কমার আশঙ্কা

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) মার্চে জানিয়েছে, মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য রেশন কমে যেতে পারে।
এর ফলে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্যসংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমানোর নীতিরও প্রভাব থাকতে পারে। এক জ্যেষ্ঠ বাংলাদেশি কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র আগে রোহিঙ্গা সহায়তায় প্রধান দাতা ছিল, তাই এই সিদ্ধান্তের প্রভাব স্পষ্ট।

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কঠিন জীবন

কক্সবাজারের দক্ষিণাঞ্চলে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করছে।
তারা মূলত ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এখানে:

  • কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় নেই
  • শিক্ষা ব্যবস্থা সীমিত
  • খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা নির্ভর করে অনুদানের উপর

রয়টার্স জানায়, ২০২৪ সালেও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, বিশেষ করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অনিরাপত্তা ও খাদ্যসংকটের কারণে।

সংকট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মতে, অনুদান হ্রাসের ফলে রোহিঙ্গারা আরও অনিরাপদ হবে এবং অনেকে জীবন ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে দেশত্যাগ করতে পারে।
তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়ন নিশ্চিত করা হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক মহলকে দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই ও সম্মানজনক সমাধান খোঁজার দিকেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল ও মারাত্মক রূপ নিতে পারে।

রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা – জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

০৪:১০:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • খাদ্য, জ্বালানি ও বাসস্থানের সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়বে
  • মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য রেশন কমে যেতে পারে
  • মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অনিরাপত্তা ও খাদ্যসংকটের কারণে ২০২৪ সালেও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে
  • জাতিসংঘ সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে

জাতিসংঘের দুইটি সংস্থা সম্প্রতি সতর্ক করেছে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে গেলে বাংলাদেশে মানবিক পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

যৌথভাবে বহু-বার্ষিক তহবিলের আহ্বান

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) এবার প্রথমবারের মতো একসাথে বহু-বার্ষিক অর্থায়নের আবেদন জানিয়েছে।
এই তহবিলের লক্ষ্য হলো—বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে।

দুই সংস্থা তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছে:

“খাদ্য, জ্বালানি ও বাসস্থানের সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়বে এবং অনেকেই নিরাপত্তা খোঁজার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রায় বেরিয়ে পড়বে।”

২০২৫-২০২৬ সাল পর্যন্ত এই কর্মপরিকল্পনার প্রথম বছরে তারা ৯৩৪.৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে, যা ১১৩টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

খাদ্য সহায়তা কমার আশঙ্কা

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) মার্চে জানিয়েছে, মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য রেশন কমে যেতে পারে।
এর ফলে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্যসংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমানোর নীতিরও প্রভাব থাকতে পারে। এক জ্যেষ্ঠ বাংলাদেশি কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র আগে রোহিঙ্গা সহায়তায় প্রধান দাতা ছিল, তাই এই সিদ্ধান্তের প্রভাব স্পষ্ট।

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কঠিন জীবন

কক্সবাজারের দক্ষিণাঞ্চলে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করছে।
তারা মূলত ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এখানে:

  • কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় নেই
  • শিক্ষা ব্যবস্থা সীমিত
  • খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা নির্ভর করে অনুদানের উপর

রয়টার্স জানায়, ২০২৪ সালেও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, বিশেষ করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অনিরাপত্তা ও খাদ্যসংকটের কারণে।

সংকট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মতে, অনুদান হ্রাসের ফলে রোহিঙ্গারা আরও অনিরাপদ হবে এবং অনেকে জীবন ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে দেশত্যাগ করতে পারে।
তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়ন নিশ্চিত করা হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক মহলকে দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই ও সম্মানজনক সমাধান খোঁজার দিকেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল ও মারাত্মক রূপ নিতে পারে।