ইউ এন বি
রমজান মাসে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলেও, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কর্মকর্তারা আগামী গ্রীষ্মকাল নিয়ে শঙ্কিত। তাদের মতে, এপ্রিলে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা গ্রীষ্মের চূড়ান্ত সময়ে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াট ছাড়ালে প্রায় ৩,০০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে।
বর্তমানে রমজান মাসে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শীতল থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৫,০০০ মেগাওয়াটের মধ্যে সীমিত রয়েছে।
চাহিদা ও সরবরাহের বর্তমান চিত্র
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি’র অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী, ২০ মার্চ বিকেল ৪টায় চাহিদা ১৩,৭০০ মেগাওয়াটে পৌঁছালে ২১৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল।
পাওয়ার গ্রিডের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ঘাটতি ২০০ মেগাওয়াটের নিচেই থাকছে, তবে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ঘাটতি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
১৯ মার্চ সন্ধ্যার পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১৪,৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড করা হয়, যেখানে সরবরাহ ছিল প্রায় ১৪,৫০০ মেগাওয়াট।
গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার সহায়তা
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তারা জানান, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহ বড় ধরনের সহায়তা করেছে। বর্তমানে এসব কেন্দ্র থেকে ৬,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রতিদিন ১,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) এর বেশি গ্যাস পাচ্ছি বলেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, কয়লাভিত্তিক ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে গ্রীষ্মের সময় চাহিদা বেড়ে গেলে, গ্যাস সরবরাহ ১,২০০ এমএমসিএফডি না বাড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে।
গ্রীষ্মের জন্য গ্যাস আমদানিতে সীমাবদ্ধতা
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন ও খনি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, রমজানে সরকার অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছিল। “আমরা অতিরিক্ত পাঁচটি এলএনজি কার্গো আমদানি করেছি,” তিনি বলেন।
তিনি আরও জানান, গ্রীষ্মকালে আরও বেশি গ্যাস আমদানি প্রয়োজন হবে, কিন্তু দেশের পুনরায় গ্যাসিকরণ সক্ষমতা (রিগ্যাসিফিকেশন) সীমিত হওয়ায় তা সম্ভব নাও হতে পারে।
বর্তমানে দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনালের সম্মিলিত রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ১,১০০ এমএমসিএফডি, অথচ গ্রীষ্মে চাহিদা ১,২০০ এমএমসিএফডি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, “সরকার চাইলেও প্রতিমাসে ৯টির বেশি এলএনজি কার্গো আমদানি সম্ভব নয়—যার মধ্যে ৫টি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ও ৪টি স্পট মার্কেট থেকে।”
গ্যাস সরবরাহ বনাম চাহিদার ফারাক
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় ২,৮৭৭ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে, যেখানে চাহিদা প্রায় ৩,৮০০ থেকে ৪,০০০ এমএমসিএফডি।
এই সরবরাহের মধ্যে প্রায় ১,০০০ এমএমসিএফডি আসছে আমদানি করা এলএনজি থেকে, বাকি ১,৮৭৭ এমএমসিএফডি দেশীয় উৎপাদন।
ঘাটতি মোকাবেলায় বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তুতি
বিপিডিবির এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, গ্যাস সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে কয়লাভিত্তিক ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, “বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে গড়ে ৫,৬০০ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪,৫০০ মেগাওয়াট এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ২,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি ২,৫০০ মেগাওয়াট আসছে আমদানি ও অন্যান্য উৎস থেকে।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রীষ্মকালে যদি গ্যাস সরবরাহ না বাড়ে, তাহলে কয়লাভিত্তিক ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।”
তবে সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তিনি স্বীকার করেন, গ্রীষ্মে অন্তত ২,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি বা লোডশেডিং দেখা দিতেই পারে।
(ইউএনবি ইংরেজি সাভির্স থেকে অনূদিত)