সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রতিবছর ১৭ মার্চ সেন্ট প্যাট্রিকস ডে উদযাপন করা হয় আয়ারল্যান্ডের খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তকের স্মরণে। এই উৎসব এখন বিশ্বজুড়ে বড় একটি সাংস্কৃতিক উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। গিনেস, আইরিশ কালো বিয়ার, এই দিনে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। ২০২৫ সালের সেন্ট প্যাট্রিকস ডে-তে সারা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পিন্ট গিনেস পান করা হয়েছে।
মার্চ মাস গিনেসের বিক্রির জন্য বরাবরই লাভজনক, কারণ একই সময়ে ইউরোপের জনপ্রিয় রাগবি টুর্নামেন্ট সিক্স নেশনস চলে, যার স্পনসর নিজেই গিনেস। কিন্তু এখন গিনেস শুধুমাত্র মৌসুমী নয়—সারা বছরই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এমনকি নেটফ্লিক্স গিনেসের ইতিহাস নিয়ে একটি ড্রামা সিরিজ তৈরি করছে।
বিক্রি বেড়েছে, চাহিদা সামলানো কঠিন
২০২৪ সালের শেষার্ধে, যুক্তরাজ্যে সামগ্রিকভাবে বিয়ার বিক্রি ১% কমলেও, গিনেসের বিক্রি ২১% বৃদ্ধি পায়। গিনেসের মূল কোম্পানি ডায়াজিও জানায়, ডিসেম্বরে এত চাহিদা ছিল যে কিছু কিছু এলাকায় গিনেস সংকট দেখা দেয়।
ডিসেম্বরে গিনেসের বিক্রি মার্চের তুলনায় ৪৫ লাখ পিন্ট বেশি হয়। এই চাপ সামাল দিতে কিছু পাবে রেশনিং করতে হয়—মানে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বিক্রি করা হয়নি।
‘মাইন্ডফুল ড্রিংকিং’-এ গিনেসের জায়গা
আজকের ভোক্তারা পানীয় বেছে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য ও ভারসাম্য বিবেচনায়। গিনেস এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, কারণ:
গিনেসের পুরনো বিজ্ঞাপনেও একে বলা হতো “শক্তি বাড়ায়”। আগে ভুল ধারণা ছিল, গিনেসে প্রচুর আয়রন আছে, তাই গর্ভবতী নারীদের এটি খাওয়ানো হতো।
স্বাদ বদলের যুগে গিনেসের গ্রহণযোগ্যতা
আজকের প্রজন্ম কফি ও ডার্ক চকলেটের মতো তীব্র স্বাদ পছন্দ করে। গিনেসের ধোঁয়াটে, ভাজা যবের স্বাদ এই প্রবণতার সঙ্গে মিলে যায়।
এছাড়া, আগে যেটি মূলত পুরুষদের পানীয় হিসেবে দেখা হতো, এখন নারীদের মধ্যেও গিনেস জনপ্রিয়। ডায়াজিও জানায়, নারীদের গিনেস পান করার হার বছরে ৫০% পর্যন্ত বেড়েছে। এর গাঢ় রঙ, ঘন ফেনা, আর ভিন্ন ভিজ্যুয়াল স্টাইল সোশ্যাল মিডিয়াতেও গিনেসকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির নতুন সংযোজন
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন “Splitting the G” নামের একটি খেলা ভাইরাল—যেখানে লক্ষ্য থাকে গ্লাসে থাকা “G” অক্ষরের মাঝ বরাবর ফেনার রেখা মেলানো।
মহামারির সময় গিনেস চালু করে একটি আল্ট্রাসনিক ডিভাইস, যার সাহায্যে ঘরেই রেস্টুরেন্ট-মানের গিনেস তৈরি সম্ভব। এছাড়া যারা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলেন, তাদের জন্য ২০২১ সালে চালু হয় গিনেস ০%, যেটি বাজারে টিকে গেছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
উপসংহার: ঐতিহ্য ও উদ্ভাবনের মিলন
প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো ব্র্যান্ড গিনেস নতুন প্রজন্মের পছন্দ, সামাজিক প্রবণতা ও প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আবারো শীর্ষে উঠে এসেছে। ডাবলিনে আর্থার গিনেসের হাতে শুরু হওয়া এই পানীয় এখনো বিশ্বজুড়ে তার ঐতিহ্য, স্বাদ ও উদ্ভাবনের সংমিশ্রণে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে চলেছে।
Leave a Reply