০৫:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তে নৌকাডুবিতে রোহিঙ্গারা নিখোঁজ,মানবতার আরেক ট্র্যাজেডি আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদ আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ১২, আহত ২৭ গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পাকিস্তান ২৭তম সংশোধনী বিল অনুমোদিত, বাড়বে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাও বিচার বিভাগে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ মোহাম্মদপুরে ছাত্রদল নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জামিয়াতে উলেমা-ই-ইসলাম প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান মুদ্রাস্ফীতির সময় টিআইপিএস বন্ডের সীমাবদ্ধতা  আফগান-পাকিস্তান আলোচনায় অচলাবস্থা: সীমান্তে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দুবাই মেট্রোর ব্লু লাইন নির্মাণে নতুন ১০টির বেশি সড়ক পরিবর্তন

ক্রমেই লাভ কমছে তৈরি পোশাক খাতে

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০৩:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
  • 71

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গত দশকে তৈরি পোশাক খাতে ‘ওপেন কস্টিং’ পদ্ধতির ব্যবহার ১০% থেকে বেড়ে ৬০%-এ পৌঁছেছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রেতারা সরাসরি উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে নিজেরাই পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন। ফলে পোশাক কারখানা মালিকদের লাভের সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়েছে, অনেক সময় লোকসানেও পড়তে হচ্ছে।

কী এই ওপেন কস্টিং’?

‘ওপেন কস্টিং’ এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে কাঁচামাল, শ্রম, উৎপাদন, পরিবহন, এমনকি লাভ—সব খরচ বিশ্লেষণ করে দাম নির্ধারণ করে ক্রেতারা।
এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত খরচ—যেমন সরবরাহ সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, দুর্নীতির ব্যয়—ধরে নেওয়া হয় না, যার ভার পড়ে কারখানা মালিকদের ওপরেই।

লাভ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১-৪ শতাংশে

বর্তমানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানিতে লাভের হার ১% থেকে ৪%-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।
চরম প্রতিযোগিতার কারণে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।
এমনকি সরকারি প্রণোদনা ও কর সুবিধাও ক্রেতারা দাম নির্ধারণে হিসেব করে ফেলে, ফলে এগুলোর প্রকৃত সুবিধাও রপ্তানিকারকদের হাতে থাকছে না।

‘FOB’ (Free on Board) পদ্ধতির মতো অতিরিক্ত লাভের সুযোগ ‘ওপেন কস্টিং’-এ নেই—কারণ সবকিছুর দাম অগ্রিম নির্ধারিত থাকে।

কেন বাংলাদেশে এটি বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছে?

ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মতো দেশে ওপেন কস্টিং থাকলেও সেখানে লাভের সীমা তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশে সাধারণ ও কমদামী পণ্যের উৎপাদন বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতা তীব্র, লাভ কম।

এই পদ্ধতি সাধারণত এইচঅ্যান্ডএম, প্রাইমার্ক, ইউনিক্লো-এর মতো বড় ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
১ লাখ পিসের বেশি অর্ডার হলে ওপেন কস্টিং চালু হয় এবং সর্বোচ্চ লাভ থাকে মাত্র ৩%।

দাম নিয়ে বাড়ছে দর-কষাকষি

মহাখালি এলাকার একজন স্বনামধণ্য গার্মন্টেস মালিক বলেন,

“ধরা যাক একটি টি-শার্টের ওপেন কস্টিং অনুযায়ী দাম ১ ডলার, কিন্তু ক্রেতা তখন আরও ৩-৪ জন সাপ্লায়ারকে জিজ্ঞেস করে—কে কম দামে দিতে পারবে। কেউ ০.৯৮, কেউ ০.৯৬—এইভাবে সবচেয়ে কম দামদাতাকে অর্ডার দেয়।”

তিনি আরও বলেন, কাজ কম থাকলে অনেক কারখানা ‘ব্রেক-ইভেন’ বা লোকসানে কাজ নিতে বাধ্য হয়।

ঐক্য থাকলে কি পরিবর্তন সম্ভব?

একজন গার্মেন্টস মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,

“সব কারখানা যদি একসাথে ১০% দাম বাড়ায়, তাহলে ক্রেতারা বাংলাদেশ ছাড়বে না।”

তিনি জানান, এখনো বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা পোশাক সরবরাহকারী দেশ, অথচ অনেক কারখানা লোকসানে কাজ করছে।

তুলনামূলক দাম: বাংলাদেশ এখনো সবার নিচে

ইউকে ট্রেড ইনফো বলছে,

২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির গড় দাম ছিল—

  • চীনের চেয়ে ২১.৩৯% কম
  • তুরস্কের চেয়ে ৩২% কম
  • ভারতের চেয়ে ২৬.৭৫% কম

সারাংশ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বর্তমানে ওপেন কস্টিংয়ের চাপে রয়েছে।

এই পদ্ধতিতে ক্রেতারা দাম নির্ধারণ করায় রপ্তানিকারকদের লাভ কমে যাচ্ছে এবং অনেকে ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তে নৌকাডুবিতে রোহিঙ্গারা নিখোঁজ,মানবতার আরেক ট্র্যাজেডি

ক্রমেই লাভ কমছে তৈরি পোশাক খাতে

০৪:০৩:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গত দশকে তৈরি পোশাক খাতে ‘ওপেন কস্টিং’ পদ্ধতির ব্যবহার ১০% থেকে বেড়ে ৬০%-এ পৌঁছেছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রেতারা সরাসরি উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে নিজেরাই পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন। ফলে পোশাক কারখানা মালিকদের লাভের সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়েছে, অনেক সময় লোকসানেও পড়তে হচ্ছে।

কী এই ওপেন কস্টিং’?

‘ওপেন কস্টিং’ এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে কাঁচামাল, শ্রম, উৎপাদন, পরিবহন, এমনকি লাভ—সব খরচ বিশ্লেষণ করে দাম নির্ধারণ করে ক্রেতারা।
এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত খরচ—যেমন সরবরাহ সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, দুর্নীতির ব্যয়—ধরে নেওয়া হয় না, যার ভার পড়ে কারখানা মালিকদের ওপরেই।

লাভ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১-৪ শতাংশে

বর্তমানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানিতে লাভের হার ১% থেকে ৪%-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।
চরম প্রতিযোগিতার কারণে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।
এমনকি সরকারি প্রণোদনা ও কর সুবিধাও ক্রেতারা দাম নির্ধারণে হিসেব করে ফেলে, ফলে এগুলোর প্রকৃত সুবিধাও রপ্তানিকারকদের হাতে থাকছে না।

‘FOB’ (Free on Board) পদ্ধতির মতো অতিরিক্ত লাভের সুযোগ ‘ওপেন কস্টিং’-এ নেই—কারণ সবকিছুর দাম অগ্রিম নির্ধারিত থাকে।

কেন বাংলাদেশে এটি বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছে?

ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মতো দেশে ওপেন কস্টিং থাকলেও সেখানে লাভের সীমা তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশে সাধারণ ও কমদামী পণ্যের উৎপাদন বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতা তীব্র, লাভ কম।

এই পদ্ধতি সাধারণত এইচঅ্যান্ডএম, প্রাইমার্ক, ইউনিক্লো-এর মতো বড় ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
১ লাখ পিসের বেশি অর্ডার হলে ওপেন কস্টিং চালু হয় এবং সর্বোচ্চ লাভ থাকে মাত্র ৩%।

দাম নিয়ে বাড়ছে দর-কষাকষি

মহাখালি এলাকার একজন স্বনামধণ্য গার্মন্টেস মালিক বলেন,

“ধরা যাক একটি টি-শার্টের ওপেন কস্টিং অনুযায়ী দাম ১ ডলার, কিন্তু ক্রেতা তখন আরও ৩-৪ জন সাপ্লায়ারকে জিজ্ঞেস করে—কে কম দামে দিতে পারবে। কেউ ০.৯৮, কেউ ০.৯৬—এইভাবে সবচেয়ে কম দামদাতাকে অর্ডার দেয়।”

তিনি আরও বলেন, কাজ কম থাকলে অনেক কারখানা ‘ব্রেক-ইভেন’ বা লোকসানে কাজ নিতে বাধ্য হয়।

ঐক্য থাকলে কি পরিবর্তন সম্ভব?

একজন গার্মেন্টস মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,

“সব কারখানা যদি একসাথে ১০% দাম বাড়ায়, তাহলে ক্রেতারা বাংলাদেশ ছাড়বে না।”

তিনি জানান, এখনো বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা পোশাক সরবরাহকারী দেশ, অথচ অনেক কারখানা লোকসানে কাজ করছে।

তুলনামূলক দাম: বাংলাদেশ এখনো সবার নিচে

ইউকে ট্রেড ইনফো বলছে,

২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির গড় দাম ছিল—

  • চীনের চেয়ে ২১.৩৯% কম
  • তুরস্কের চেয়ে ৩২% কম
  • ভারতের চেয়ে ২৬.৭৫% কম

সারাংশ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বর্তমানে ওপেন কস্টিংয়ের চাপে রয়েছে।

এই পদ্ধতিতে ক্রেতারা দাম নির্ধারণ করায় রপ্তানিকারকদের লাভ কমে যাচ্ছে এবং অনেকে ক্ষতির মুখে পড়ছেন।