মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাস্তবতা

  • Update Time : রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৩.৪১ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার হলেও প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু সেখানে নিয়মিত চিকিৎসক থাকে মাত্র দুই তিনজন। এর মধ্যে কারও ছুটি বা অন্য কোনো কাজে অনুপস্থিতি দেখা দিলে সেবা পেতে রোগীদের আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আর এ দৃশ্য বা  এ সমস্যা দেশের বেশির ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই।

ফলে অনেকে সরকারি হাসপাতালে সেবা না পেয়ে শেষমেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দ্বারস্থ হন। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায় এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতে দেখা যায় বড় ধরনের ফাঁকফোকর।

সরকারি পরিসংখ্যান: শূন্য পদ ও সংকট

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রায় ৫৯ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। বিভাগভিত্তিক চিত্র নিম্নরূপ—

  • বরিশাল: ৭৩.৬% পদ শূন্য
  • রংপুর: ৭০% পদ শূন্য
  • খুলনা: ৬৭.৫% পদ শূন্য
  • রাজশাহী: ৬৩.৭% পদ শূন্য
  • সিলেট: ৬১.৬% পদ শূন্য

ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে কিছুটা ভালো অবস্থা থাকলেও সেখানেও যথাক্রমে ৫৮.৩% ও ৫১.৬% পদ খালি।

ঢাকা বিভাগে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে সেখানে এখনো ৪২.৮% চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। সব মিলিয়ে উপজেলাগুলোর গড়ে ৫৮.৫% পদে কোনো চিকিৎসক নেই। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক শূন্য পদ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা চালানো হচ্ছে।

গ্রামীণ মানুষের চিকিৎসা থেকে বঞ্চনা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসংকট চলে আসছে। এতে গ্রামের রোগীরা বাধ্য হয়ে শহর বা বড় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সাধারণ শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেও রোগীকে জেলা সদর অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হয়। ফলে সদর হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়।

বিশেষজ্ঞের অভাবে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হলে, অনেক সময় উপজেলা হাসপাতাল নির্ভরযোগ্য সেবা দিতে পারে না। এতে রোগীকে দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ঝামেলায় পড়তে হয়, যা কখনো কখনো প্রাণঘাতীও হয়ে দাঁড়ায়।

সরকারি পরিকল্পনা: নিয়োগের উদ্যোগ

নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক এবং আগের বিসিএস থেকে আরও সাড়ে তিন হাজার জনকে নিতে চায় কর্তৃপক্ষ। একাডেমিক পদায়নের জন্য সুপারনিউমারারি পদ তৈরির বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অবস্থান সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আজিজ  মনে করেন, দেশের মোট জনসংখ্যা ও সেবার চাহিদা বিবেচনা করে কতজন চিকিৎসক প্রয়োজন— এ বিষয়ে সরকারের একটি স্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা দরকার। তিনি বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান মাধ্যম। জনবল সংকটের কারণে এই সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক এমবিবিএস চিকিৎসক বেকার অবস্থায় রয়েছেন, আবার কেউ কেউ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তাই পরিকল্পিত নিয়োগ ও পদায়ন এখন সময়ের দাবী।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024