মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

বাংলাদেশের ৮১টি নদী বিলুপ্তির পথে

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ৪.৪৯ পিএম

ইউএনবি থেকে অনূদিত

বাংলাদেশের নদীগুলো বর্তমানে ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মুখে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের ৮১টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।

নদী ও ডেল্টা গবেষণা কেন্দ্র (River and Delta Research Centre – RDRC) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদীসমূহ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময় যেসব নদী স্থানীয় অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখত, সেগুলোর অনেকগুলো এখন বিলীন হওয়ার পথে অথবা পলি পড়ে গভীরতা হারিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহ

খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে এই সংকট সবচেয়ে ভয়াবহ। দূষণ, পলি জমা ও দ্রুত নগরায়ণের কারণে নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

RDRC জানায়, খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৫টি নদী শুকিয়ে গেছে। এরপর রাজশাহীতে ২০টি, রংপুরে ১৫টি, চট্টগ্রামে ৬টি, ময়মনসিংহে ৫টি, ঢাকায় ৪টি এবং বরিশাল ও সিলেটে ৩টি করে নদী শুকিয়ে গেছে।

প্রভাবিত নদীগুলোর তালিকা

এই ৮১টি নদীর মধ্যে রয়েছে:

আলায়, আত্রাই, বাগবতি, বাঙালি, বড়াল, বেতনা, ভৈরব, ভদ্রাবতী, ভোলা, ভুল্লি, বিলাশ, বুড়িখোড়া, চন্দনা, চন্দ্রাবতী, চিকনাই,

চিত্রা, চুনা, ঢালাই, ধলেশ্বরী, ধরলা, ঢেপা, দুধকুমার, ফটকি, গালঘেসিয়া, গাংনাই, ঘাঘাট, গোমতি, গণেশ্বরী, গড়াই ও গুমানী।

এছাড়া, হানু, হরিহর, হীষ্ণা, হোয়া, হুরা সাগর, ইছামতি, যমুনার শাখা

নদীগুলো, কহুয়া, কাকশিয়ালি, কালিগঙ্গা, কালপানি, করতোয়া, কাটাখালি, খাকদোন, খোলপেটুয়া, কহেলিয়া, কপোতাক্ষ

, কুলিক, কুমার, কুশিয়ারা, মহানন্দা, মানস, মথাভাঙ্গা, মহিষাবান, মরিচাপ, ময়ূর, মুহুরি এবং মুরাদিয়া নদীও বিপন্ন।

আরও রয়েছে নবগঙ্গা, নাগর, নারদ, নরসুন্দা, পদ্মার কিছু শাখা

নদী, পাগলা, পুনর্ভবা, সন্ধ্যা, সেলোনিয়া, সাগরখালী, শালিখা, শিব, শোলমারী, শুক, সোমেশ্বরী, সোনাই, সুখদাহ, সুরমা, টাংগন,

তিস্তা, তিতাস, তুলসীগঙ্গা ও লেঙ্গা।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা অববাহিকায় সংকট

গবেষণায় বিশেষভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা (BGM) অববাহিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে উজানে বাঁধ ও পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কারণে নদীর স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি, মাছ ধরা এবং নৌযান চলাচলের ওপর।

“পানির স্তর অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামা করছে, যার ফলে পুরো জনগোষ্ঠী বিপর্যস্ত। শুধু মানুষ নয়, বন্যপ্রাণী, আবাসস্থল এবং প্রকৃতির ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,” প্রতিবেদনে বলা হয়।

সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি

RDRC এর মতে, নদী রক্ষায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন রোধ ও জলজ পরিবেশ পুনরুদ্ধারে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবে জাতীয় পর্যায়ে একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “অনেক নদী আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাংলাদেশকে উজানের দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। একমাত্র যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নদীগুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব।”

বাংলাদেশের নদী নেটওয়ার্ক: এক নজরে

বাংলাদেশে প্রায় ২৪,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী, খাল ও শাখা-উপশাখার নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক নদী নেটওয়ার্ক।

বর্ষাকালে প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার নদীপথ চলাচলের উপযোগী থাকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩,৮০০ কিলোমিটারে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024