১১:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব বেতনা নদী: সাতক্ষীরার প্রাণ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৪) মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন সাংবিধানিক সংশোধনী বিল নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোট, বিরোধীদের ওয়াকআউট ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,১৩৯ জন এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকির সতর্কতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ আমদানি সুবিধা: রমজানের ১০ পণ্য সহজে আমদানির নির্দেশনা নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়: ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান মিরপুরে শতাব্দী পরিবহনের বাসে আগুন

পাট চাষে খরচ বেড়েছে ফরিদপুরে, কৃষকদের লোকসানের আশঙ্কা

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৩৩:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • 86

পাট এখন আর সোনালি আঁশ নয়

এক সময় ‘সোনালি আঁশ’ নামে খ্যাত পাট ছিল কৃষকের গর্ব। কিন্তু ফরিদপুরের কৃষকদের কাছে এই পেশা এখন অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, অথচ বাজারে দাম বাড়েনি—ফলে লাভ তো দূরের কথা, খরচই তুলতে পারছেন না অনেকে।

ফরিদপুরের কৃষকরা জানাচ্ছেন, এবছর পাট চাষে খরচ আগের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই বাড়তি খরচের পেছনে রয়েছে খরাপ্রবণ আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি ও দিনমজুরদের মজুরি বেড়ে যাওয়া।

গত বছর প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ২,৫০০ থেকে ২,৮০০ টাকা। এবার উৎপাদন খরচই প্রায় সমান হয়ে যাওয়ায় চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।

মাঠে চাষ চললেও মন ভরছে না কৃষকের

সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী ও ভাঙ্গা—এই উপজেলাগুলোর কৃষকরা বর্তমানে পুরোদমে পাটের বীজ বপন, জমি প্রস্তুত ও সেচে ব্যস্ত। তবে তাদের মুখে শঙ্কা স্পষ্ট—ফলন হলেও ন্যায্য দাম কী আদৌ পাবেন?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুরে এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৮৬,৫২৫ হেক্টর।

কিন্তু খরার কারণে সেচের খরচ বেড়েছে তিন গুণ পর্যন্ত। কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পাম্প চালাতে হচ্ছে বেশি সময়, বারবার।

প্রতিদিনই বাড়ছে ব্যয়

বোয়ালমারীর দাদুর বিল এলাকার কৃষকরা জানান, “অনেক জায়গায় পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না। সার, কীটনাশক, সেচ, দিনমজুর—সব কিছুর খরচই প্রতিদিন বাড়ছে। এভাবে আমরা আর পারছি না।”

মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা গেছে—কেউ বীজ বুনছেন, কেউ জমিতে পানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। তবে সবার মুখেই ক্লান্তি আর হতাশা।

ঘোষপুর ইউনিয়নের কৃষক অশ্বত্থ মল্ল, ফারুক জোসেন ও মনিরুজ্জামান বলেন, “উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে, কিন্তু বাজারে দাম আগের মতোই। সরকার যদি সহায়ক উপকরণে ভর্তুকি না দেয় বা পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত না করে, তাহলে পাট চাষ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”

আবহাওয়াঅনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতের ভাবনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামানও স্বীকার করেছেন যে এবছর খরচ বেড়েছে। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া অনির্দেশ্য হয়ে গেছে। তবে সঠিক পরিচর্যা হলে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে, যা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—ফলন ভালো হলেও যদি দাম না বাড়ে, তাহলে সেই লাভ কোথায়? আবহাওয়ার ভেতরে থাকা অনিশ্চয়তা এবং বাজারমূল্যের অস্থিরতা মিলিয়ে ফরিদপুরের অনেক কৃষকই ভাবছেন—পাট চাষ আর টিকিয়ে রাখা যাবে তো?

সরকার যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এক সময় সত্যিই হারিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’-এর গৌরবময় দিন।

ইউএনবি থেকে অনূদিত

জনপ্রিয় সংবাদ

সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব

পাট চাষে খরচ বেড়েছে ফরিদপুরে, কৃষকদের লোকসানের আশঙ্কা

০৩:৩৩:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

পাট এখন আর সোনালি আঁশ নয়

এক সময় ‘সোনালি আঁশ’ নামে খ্যাত পাট ছিল কৃষকের গর্ব। কিন্তু ফরিদপুরের কৃষকদের কাছে এই পেশা এখন অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, অথচ বাজারে দাম বাড়েনি—ফলে লাভ তো দূরের কথা, খরচই তুলতে পারছেন না অনেকে।

ফরিদপুরের কৃষকরা জানাচ্ছেন, এবছর পাট চাষে খরচ আগের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই বাড়তি খরচের পেছনে রয়েছে খরাপ্রবণ আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি ও দিনমজুরদের মজুরি বেড়ে যাওয়া।

গত বছর প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ২,৫০০ থেকে ২,৮০০ টাকা। এবার উৎপাদন খরচই প্রায় সমান হয়ে যাওয়ায় চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।

মাঠে চাষ চললেও মন ভরছে না কৃষকের

সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী ও ভাঙ্গা—এই উপজেলাগুলোর কৃষকরা বর্তমানে পুরোদমে পাটের বীজ বপন, জমি প্রস্তুত ও সেচে ব্যস্ত। তবে তাদের মুখে শঙ্কা স্পষ্ট—ফলন হলেও ন্যায্য দাম কী আদৌ পাবেন?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুরে এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৮৬,৫২৫ হেক্টর।

কিন্তু খরার কারণে সেচের খরচ বেড়েছে তিন গুণ পর্যন্ত। কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পাম্প চালাতে হচ্ছে বেশি সময়, বারবার।

প্রতিদিনই বাড়ছে ব্যয়

বোয়ালমারীর দাদুর বিল এলাকার কৃষকরা জানান, “অনেক জায়গায় পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না। সার, কীটনাশক, সেচ, দিনমজুর—সব কিছুর খরচই প্রতিদিন বাড়ছে। এভাবে আমরা আর পারছি না।”

মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা গেছে—কেউ বীজ বুনছেন, কেউ জমিতে পানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। তবে সবার মুখেই ক্লান্তি আর হতাশা।

ঘোষপুর ইউনিয়নের কৃষক অশ্বত্থ মল্ল, ফারুক জোসেন ও মনিরুজ্জামান বলেন, “উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে, কিন্তু বাজারে দাম আগের মতোই। সরকার যদি সহায়ক উপকরণে ভর্তুকি না দেয় বা পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত না করে, তাহলে পাট চাষ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”

আবহাওয়াঅনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতের ভাবনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামানও স্বীকার করেছেন যে এবছর খরচ বেড়েছে। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া অনির্দেশ্য হয়ে গেছে। তবে সঠিক পরিচর্যা হলে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে, যা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—ফলন ভালো হলেও যদি দাম না বাড়ে, তাহলে সেই লাভ কোথায়? আবহাওয়ার ভেতরে থাকা অনিশ্চয়তা এবং বাজারমূল্যের অস্থিরতা মিলিয়ে ফরিদপুরের অনেক কৃষকই ভাবছেন—পাট চাষ আর টিকিয়ে রাখা যাবে তো?

সরকার যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এক সময় সত্যিই হারিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’-এর গৌরবময় দিন।

ইউএনবি থেকে অনূদিত