সারাক্ষণ রিপোর্ট
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে আজ ১৬ এপ্রিল।
ওই চিঠিতে বিএনপি মনে করিয়ে দিয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসীবাদী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। সেই সময়ে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন এবং নিখোঁজ হয়েছেন। এই সংগ্রামের ইতিহাসকে তারা দেশের গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি
চিঠিতে বলা হয়েছে, ফ্যাসীবাদ পতনের পর জাতির আশা ছিল অপরাধীদের বিচার, সম্পদ পুনরুদ্ধার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বকে সমর্থন জানিয়েছে ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
দ্রুত নির্বাচন ও সংস্কারের দাবি
বিএনপি বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র ছাড়া জনগণের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব নয়। তারা মনে করে, “আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র” একটি বিভ্রান্তিকর কৌশল। তাদের মতে, সংস্কার ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিএনপির উদ্যোগেই দেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এসেছে—বহুদলীয় গণতন্ত্র, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দুর্নীতি দমন কমিশন, নারী শিক্ষা, কৃষি ও শিল্পোন্নয়ন ইত্যাদি।
বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবনা ও দায়বদ্ধতা
বিএনপি উল্লেখ করেছে তাদের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচির কথা, যেখানে তারা অন্যান্য দলের পরামর্শ নিয়েও প্রস্তাব তৈরি করেছে। তারা বলেছে, কেউ যদি এর চেয়েও ভালো প্রস্তাব দেয়, তা গ্রহণে তারা প্রস্তুত। তবে শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থে সংস্কার বিলম্ব করে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলের বিরোধিতা করে বিএনপি।
পূর্বের চিঠির প্রতিক্রিয়া নেই, প্রশাসনে বৈষম্যের অভিযোগ
চিঠিতে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পূর্বে দেওয়া ২১ নভেম্বর ২০২৪ ও ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর পরামর্শের বিষয়ে সরকারের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হলেও এখনো পদায়ন না করায় সরকারি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
সরকারের অভ্যন্তরীণ অসামঞ্জস্যতা নিয়ে উদ্বেগ
চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের বক্তব্য ও আচরণে সমন্বয় জরুরি। কিন্তু কিছু ব্যক্তির বিবৃতি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিএনপি আশা করে, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ও আইনি সংস্কারের তাগিদ
বিএনপি মনে করে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি রাখার দাবি এবং নির্বাচনী এলাকার সীমা পুনর্নির্ধারণের আইনি জটিলতা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
ফ্যাসিবাদী সরকারের অপরাধ বিচারের আহ্বান
চিঠিতে আরও বলা হয়, ১/১১-এর অগণতান্ত্রিক সরকার ও পতিত ফ্যাসীবাদী সরকারের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে নিহতদের ক্ষতিপূরণ, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ, এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে তৎপর হতে হবে।
শেষ আহ্বান: বিভ্রান্তি দূর করতে রোডম্যাপ
বিএনপি স্পষ্টভাবে বলেছে, তারা সরকারের সব ইতিবাচক উদ্যোগকে সমর্থন দেবে। তবে নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা না করলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Leave a Reply