দুই পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বীর দুই দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ
স্টাফ রিপোর্ট, রয়টার্স, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
বুধবার শ্রীনগরের একটি সড়কে ভারতীয় আধা‑সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছিলেন; নয়াদিল্লি পারমাণবিক প্রতিপক্ষ পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়।
প্রধান হামলা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
ভারত বুধবার পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একযোগে হামলা চালায়, আর ইসলামাবাদ জানায় যে তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে—পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই শত্রুর মধ্যে দুই দশকের মধ্যে এটিই সর্বাধিক তীব্র লড়াই।
ভারত জানায়, তারা পাকিস্তানের নয়টি “সন্ত্রাসী অবকাঠামো” লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে; এর কয়েকটি গত মাসে ভারতীয় কাশ্মীরে ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়া জঙ্গি হামলার সঙ্গে যুক্ত।
পাকিস্তান বলেছে, ছয়টি বেসামরিক স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে; অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন। ভারতীয় সূত্রের দাবি, জইশ‑ই‑মোহাম্মদ ও লস্কর‑ই‑তইয়বার সদর দপ্তরগুলো ছিল মূল লক্ষ্য।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, “টার্গেট বাছাই ও হামলা পদ্ধতিতে ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।”
পাকিস্তানের মতে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র তিনটি স্থাপনা ধ্বংস করেছে; তাদের দাবি, পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হয়েছে—যা ভারত নিশ্চিত করেনি।
ভারতীয় কাশ্মীরের চারটি সরকারি সূত্র জানায়, রাতে হিমালয়ের তিনটি অঞ্চলে তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে; তিন পাইলটই হাসপাতালে।
স্থানীয় মিডিয়ায় ছড়ানো ছবিতে একটি বড় রূপালি সিলিন্ডার ধ্বংসাবশেষ মাঠে পড়ে থাকতে দেখা যায়; ছবির সত্যতা তাৎক্ষণিক যাচাই হয়নি।
ইসলামাবাদ এ হামলাকে “যুদ্ধের স্পষ্ট ঘোষণা” আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, পাকিস্তান প্রয়োজনে উপযুক্ত জবাব দেবে। সেনা মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “দেশের সম্মান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে‑কোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত।”
সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও উত্তেজনা
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে দু‑দেশ তীব্র গোলাগুলি চালায় বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। হিন্দু‑প্রধান ভারত ও মুসলিম পাকিস্তান ১৯৪৭‑এ স্বাধীনতার পর কাশ্মীর নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি লড়েছে; উভয়েই অঞ্চলটির পূর্ণ দাবিদার।
২০০৩‑এর যুদ্ধবিরতির পর, বিশেষত পাকিস্তানি কাশ্মীরের বাইরে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতীয় হামলা অত্যন্ত বিরল।
বিশ্লেষকদের মতে, নয়াদিল্লির “অপারেশন সিন্দুর”‑এর মাত্রা এ বার এতটাই বড় যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ছে।হিন্দিতে “সিন্দুর” হল বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁদুর।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংঘর্ষকে “দুঃখজনক” বলে দ্রুত সমাপ্তির আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন, উত্তেজনা কমাতে যোগাযোগ চালু রাখার অনুরোধ করেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া সতর্ক করে দেন, পরিস্থিতি “পূর্ণ সামরিক সংঘর্ষে” রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতির স্বার্থে জাপান উভয় পক্ষকে সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানায়।” জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও প্রতিবেশী চীনও সংযম চেয়েছেন।
ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক প্রভাব
ভারতীয় সেক্টরে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে সাত বেসামরিক নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন।ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো পাকিস্তান ও পাকিস্তানি কাশ্মীরের নানা স্থানে বিস্ফোরণ, আগুন ও ধোঁয়ার ছবি দেখালেও এগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই হয়নি।
পাকিস্তানি কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে ভোরে এক মসজিদের মিনার ধসে পড়েছে। পাকিস্তানি কাশ্মীর,ইসলামাবাদ, ভারতীয় কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফরওয়ার্ড কাহুটায় মর্টার আঘাতে দু’জন নিহত ও কয়েক নারী‑শিশু আহত; আরেক গ্রামে গুলিতে একজন নিহত। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানান, পাকিস্তান জবাব দিচ্ছে; পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ও হাসপাতালগুলো হাই অ্যালার্টে।
পাকিস্তান জানায়, ভারতের হামলায় দু’টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; সব লক্ষ্যই বেসামরিক—কোনটিই সন্ত্রাসী শিবির নয়।
পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও আকাশপথ বন্ধ
পাকিস্তানকে “বিচার” দেওয়া হয়েছে—এক্স‑এ (সাবেক টুইটার) এমন মন্তব্য করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস দাবি করে, এপ্রিলের পর্যটক হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান‑ভিত্তিক জঙ্গিদের জড়িত থাকার “স্পষ্ট প্রমাণ” আছে।
ভারত বলে, ওই হামলার তিন সন্দেহভাজনের দু’জন পাকিস্তানি, যদিও বিস্তারিত প্রমাণ প্রকাশ করেনি; পাকিস্তান সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে। এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, কাতার এয়ারওয়েজ, কোরিয়ান এয়ার, থাই এয়ারওয়েজ ও ইভিএ এয়ারের মতো কয়েকটি সংস্থা আকাশসীমা ও বিমানবন্দর বন্ধের কারণে ফ্লাইট বাতিল বা রুট পরিবর্তন করেছে।
ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রুবিওর সঙ্গে কথা বলেন; ভারত ব্রিটেন, রাশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অবহিত করেছে।
পূর্ববর্তী ঘটনার তুলনা ও সম্ভাব্য জবাব
এই হামলা ২০১৯‑এর বালাকোট বিমান হামলা ও ২০১৬‑র সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের তুলনায় অনেক বড়।ওয়াশিংটন‑ভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “২০১৯‑এর তুলনায় ভারতের হামলার পরিসর অনেক বেশি;তাই পাকিস্তানের শক্তিশালী জবাব আশা করা যায়।”