০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
ডেমোক্র্যাটদের নীতির ব্যর্থতা যেভাবে মামদানিকে জয়ী করল মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে ডিআরসি-রুয়ান্ডা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর কংগ্রেসের বহু নেতা ইন্দিরা জি ও জেপি-র সংলাপ চেয়েছিলেন, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল তা হতে দেয়নি হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২) ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি

কাকরাইলের কান্না—আবাসন সংকটে জগন্নাথ, দমন আর ‘জলক্যান’–এর তীব্র অভিঘাত

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 58

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • বাসা ভাড়া বেশি হওয়ায় প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী নানা সমস্যায় জর্জরিত
  • শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা লংমার্চ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে রওনা হলে কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়
  • এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বর্ডার গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে,শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশেও পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে
  • পুলিশি হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রাইসা আক্তার জলকামান ও লাঠির আঘাতের শিকার

পুরোনো সংকটনতুন বিস্ফোরণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার পর প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসসংলগ্ন কোনো আবাসিক হল এখনো নির্মিত হয়নি। রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলে কম ভাড়ায় বাসা পাওয়া কঠিনফলে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই মেসভাড়াদূরপাল্লার যাতায়াত কিংবা স্বজনের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার আশ্বাস মিললেও কাজ এগোয়নিঅবশেষে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এই দীর্ঘসূত্রতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীশিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়।

তিন দফা দাবি কী?

১) স্থায়ী হল নির্মাণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা ২০২৫২৬ অর্থবছর থেকেই চালু করতে হবে।
২) ২০২৫২৬ অর্থবছরের জন্য জবির পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন করতে হবে।
৩) শুরুর অপেক্ষায় থাকা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাজধানীর কেন্দ্রেই দীর্ঘ সিট-ইন

১৪ মে দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা লংমার্চ’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতেই কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জকাঁদানে গ্যাসসাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্তত অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। সেদিন বিকেল থেকে আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মোড়ে লাগাতার অবস্থান শুরু করেনযা এখনো চলছে।

সরকারের হার্ড লাইন’ ও দমনযন্ত্র

পুলিশি অভিযানের পর থেকে কাকরাইল ও আশপাশের সড়কে স্থায়ী যানজটরমনা জোন পুলিশের অতিরিক্ত দলজলকামান ও সশস্ত্র বর্ডার গার্ড মোতায়েন আছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেনশান্তিপূর্ণ সমাবেশেও পুলিশ বারবার শো-ডাউন’ করে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক লিখিত আশ্বাস আসেনিবরং আইনের শাসন’ রক্ষার কথা বলে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত মিলছে।

অপ্রত্যাশিত জলক্যান’: তথ্য উপদেষ্টার মাথায় বোতল

১৫ মে রাত ১০টার দিকে তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। তাঁর ভাষণ শুরুর মুহূর্তে জনতার ভিড় থেকে পানির বোতল ছুড়ে মারলে তা সরাসরি উপদেষ্টার মাথায় লাগেসামাজিক মাধ্যমে এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। উপদেষ্টা দলীয় অবরোধকারীদের’ দায়ী করে তদন্তের আহ্বান জানানশিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করলেও ঘটনার দায় অস্বীকার করে। পুলিশের দাবিসিসিটিভি দেখে এক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

নির্যাতনের গল্প: আহত শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে

জীববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাইসা আক্তার বলেন, “জলকামানের পানিতে চোখ-মুখ জ্বলতে থাকেপরে লাঠি দিয়ে পিটিয়েও তাড়িয়েছে।” একই রাতেই ১০-এর বেশি ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছিলপরে তাঁদের মুগদা ও রমনা থানায় আটক অবস্থায় পাওয়া যায় বলে সহপাঠীরা জানান। অনেকে ট্রমা কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেনতবু মামলা আতঙ্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না।

আন্দোলনের নতুন ছক: গণ-অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি

প্রথম দফার পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ১৬ মে সকাল ১০টায় কাকরাইলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ ও জুমার পর গণ-অনশন শুরু হয়েছে। দাবি না মানা পর্যন্ত মৃত্যু অবধি অনশন চলবে”—ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইস উদ্দীন। প্রাক্তন ছাত্রশিক্ষক ও বিভিন্ন জেলার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও যোগ দিচ্ছেন।

বিশ্লেষণ: সংকটের শিকড় কোথায়?

• অর্থনৈতিক বৈষম্যঢাকায় একক কক্ষে ভাড়া ৬৮ হাজার টাকানিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন।
• পরিকল্পনার ব্যর্থতা২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর ৬ বার হল প্রকল্প প্রস্তাব এলেও প্রতিবারই অর্থ ও জমি জটিলতায় আটকে গেছে।
• রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির ঘাটতিকেন্দ্রীয় অংশে সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব ও বিদ্যমান বাণিজ্যিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকল্প থমকে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রায়শই ফান্ড নেই’ অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমনে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মত

বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি সেলিনা হোসেন - খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সেলিনা হোসেন বললেন, “আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো বাস্তবসম্মত। আবাসন ভাতা সাময়িক সমাধানস্থায়ী হল ছাড়া শিক্ষা ও মানসিক নিরাপত্তা দুইই ব্যাহত হয়।” মানবাধিকার আইনজীবী জাভেদ করিমের ভাষ্য, “পুলিশি জলকামান ব্যবহার সংবিধানের ৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘন করে।

সম্ভাব্য পথসমাধান হবেই?

১) প্রশাসন চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো কারাগার-সংলগ্ন সরকারি খাসজমিতে দ্রুত ছয়তলা প্রস্তুতি হল’ নির্মাণ করতে পারে।
২) অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ১ শিক্ষাবর্ষের মেয়াদে আবাসনভাতা চালু করে শিক্ষার্থীদের ভাড়া-চাপ কমানো প্রয়োজন।
৩) স্বচ্ছ টেন্ডার ও তদারকি কমিটি করে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে বার্ষিক সময়সীমা বেঁধে দিলে জনগণ অগ্রগতি দেখতে পাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন আন্দোলন এখন কেবল একটি ক্যাম্পাসের সংকট নয়ঢাকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়মঅবকাঠামো বৈষম্য আর গণতান্ত্রিক অধিকারবিষয়ক বড় প্রশ্নে রূপ নিয়েছে। প্রশাসন আলোচনায় না বসলে জলকামানলাঠিচার্জ ও জলক্যান’-এর খবর আরও বাড়বেযা কারও কাম্য নয়। দ্রুত ও আন্তরিক সমাধানই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে পারে এবং রাজধানীর রাস্তাও মুক্ত করবে লাগাতার অবরোধ থেকে।

ডেমোক্র্যাটদের নীতির ব্যর্থতা যেভাবে মামদানিকে জয়ী করল

কাকরাইলের কান্না—আবাসন সংকটে জগন্নাথ, দমন আর ‘জলক্যান’–এর তীব্র অভিঘাত

০৬:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • বাসা ভাড়া বেশি হওয়ায় প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী নানা সমস্যায় জর্জরিত
  • শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা লংমার্চ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে রওনা হলে কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়
  • এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বর্ডার গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে,শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশেও পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে
  • পুলিশি হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রাইসা আক্তার জলকামান ও লাঠির আঘাতের শিকার

পুরোনো সংকটনতুন বিস্ফোরণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার পর প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসসংলগ্ন কোনো আবাসিক হল এখনো নির্মিত হয়নি। রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলে কম ভাড়ায় বাসা পাওয়া কঠিনফলে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই মেসভাড়াদূরপাল্লার যাতায়াত কিংবা স্বজনের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার আশ্বাস মিললেও কাজ এগোয়নিঅবশেষে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এই দীর্ঘসূত্রতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীশিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়।

তিন দফা দাবি কী?

১) স্থায়ী হল নির্মাণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা ২০২৫২৬ অর্থবছর থেকেই চালু করতে হবে।
২) ২০২৫২৬ অর্থবছরের জন্য জবির পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন করতে হবে।
৩) শুরুর অপেক্ষায় থাকা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাজধানীর কেন্দ্রেই দীর্ঘ সিট-ইন

১৪ মে দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা লংমার্চ’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতেই কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জকাঁদানে গ্যাসসাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্তত অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। সেদিন বিকেল থেকে আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মোড়ে লাগাতার অবস্থান শুরু করেনযা এখনো চলছে।

সরকারের হার্ড লাইন’ ও দমনযন্ত্র

পুলিশি অভিযানের পর থেকে কাকরাইল ও আশপাশের সড়কে স্থায়ী যানজটরমনা জোন পুলিশের অতিরিক্ত দলজলকামান ও সশস্ত্র বর্ডার গার্ড মোতায়েন আছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেনশান্তিপূর্ণ সমাবেশেও পুলিশ বারবার শো-ডাউন’ করে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক লিখিত আশ্বাস আসেনিবরং আইনের শাসন’ রক্ষার কথা বলে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত মিলছে।

অপ্রত্যাশিত জলক্যান’: তথ্য উপদেষ্টার মাথায় বোতল

১৫ মে রাত ১০টার দিকে তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। তাঁর ভাষণ শুরুর মুহূর্তে জনতার ভিড় থেকে পানির বোতল ছুড়ে মারলে তা সরাসরি উপদেষ্টার মাথায় লাগেসামাজিক মাধ্যমে এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। উপদেষ্টা দলীয় অবরোধকারীদের’ দায়ী করে তদন্তের আহ্বান জানানশিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করলেও ঘটনার দায় অস্বীকার করে। পুলিশের দাবিসিসিটিভি দেখে এক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

নির্যাতনের গল্প: আহত শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে

জীববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাইসা আক্তার বলেন, “জলকামানের পানিতে চোখ-মুখ জ্বলতে থাকেপরে লাঠি দিয়ে পিটিয়েও তাড়িয়েছে।” একই রাতেই ১০-এর বেশি ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছিলপরে তাঁদের মুগদা ও রমনা থানায় আটক অবস্থায় পাওয়া যায় বলে সহপাঠীরা জানান। অনেকে ট্রমা কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেনতবু মামলা আতঙ্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না।

আন্দোলনের নতুন ছক: গণ-অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি

প্রথম দফার পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ১৬ মে সকাল ১০টায় কাকরাইলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ ও জুমার পর গণ-অনশন শুরু হয়েছে। দাবি না মানা পর্যন্ত মৃত্যু অবধি অনশন চলবে”—ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইস উদ্দীন। প্রাক্তন ছাত্রশিক্ষক ও বিভিন্ন জেলার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও যোগ দিচ্ছেন।

বিশ্লেষণ: সংকটের শিকড় কোথায়?

• অর্থনৈতিক বৈষম্যঢাকায় একক কক্ষে ভাড়া ৬৮ হাজার টাকানিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন।
• পরিকল্পনার ব্যর্থতা২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর ৬ বার হল প্রকল্প প্রস্তাব এলেও প্রতিবারই অর্থ ও জমি জটিলতায় আটকে গেছে।
• রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির ঘাটতিকেন্দ্রীয় অংশে সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব ও বিদ্যমান বাণিজ্যিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকল্প থমকে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রায়শই ফান্ড নেই’ অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমনে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মত

বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি সেলিনা হোসেন - খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সেলিনা হোসেন বললেন, “আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো বাস্তবসম্মত। আবাসন ভাতা সাময়িক সমাধানস্থায়ী হল ছাড়া শিক্ষা ও মানসিক নিরাপত্তা দুইই ব্যাহত হয়।” মানবাধিকার আইনজীবী জাভেদ করিমের ভাষ্য, “পুলিশি জলকামান ব্যবহার সংবিধানের ৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘন করে।

সম্ভাব্য পথসমাধান হবেই?

১) প্রশাসন চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো কারাগার-সংলগ্ন সরকারি খাসজমিতে দ্রুত ছয়তলা প্রস্তুতি হল’ নির্মাণ করতে পারে।
২) অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ১ শিক্ষাবর্ষের মেয়াদে আবাসনভাতা চালু করে শিক্ষার্থীদের ভাড়া-চাপ কমানো প্রয়োজন।
৩) স্বচ্ছ টেন্ডার ও তদারকি কমিটি করে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে বার্ষিক সময়সীমা বেঁধে দিলে জনগণ অগ্রগতি দেখতে পাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন আন্দোলন এখন কেবল একটি ক্যাম্পাসের সংকট নয়ঢাকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়মঅবকাঠামো বৈষম্য আর গণতান্ত্রিক অধিকারবিষয়ক বড় প্রশ্নে রূপ নিয়েছে। প্রশাসন আলোচনায় না বসলে জলকামানলাঠিচার্জ ও জলক্যান’-এর খবর আরও বাড়বেযা কারও কাম্য নয়। দ্রুত ও আন্তরিক সমাধানই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে পারে এবং রাজধানীর রাস্তাও মুক্ত করবে লাগাতার অবরোধ থেকে।