তাঁহার সহিত মনোবিবাদ থাকায় তাঁহাতে ভয় দেখাইবার জন্য আজি লিখিয়াছিল এবং মহারাজ নন্দকুমার ও ফাউক সাহেবকে কাউন্সিলে আর্জি দাখিল করিতে নিষেধ করিয়াছিল। মুন্সী সদর উদ্দীন তাহাদের বিবাদ মিটাইতে প্রতিশ্রুত হন। তিনি অনুপস্থিত থাকায়, যতদিন তিনি উপস্থিত না হন, ততদিন আর্জি কাউন্সিলে পাঠাইতে সে নিষেধ করিয়াছিল বলিয়া প্রকাশ করে। সে এইরূপ বলে যে, গঙ্গাগোবিন্দও তাহার নিকট ১৬ হাজার টাকা পাইতেন। মুন্সী সদর উদ্দীন উভয়ের দেনা পাওনা মিটাইয়া সমস্ত বিষয়ের মীমাংসা করিয়া দিয়াছেন। সুতরাং গঙ্গাগোবিন্দের প্রতি এক্ষণে তাহার কোন বিরুদ্ধ ভাব নাই।
এই রূপ অনেক স্থলে গঙ্গাগোবিন্দ হেষ্টিংস সাহেবের জন্ম লাঞ্ছনার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পাইয়াছিলেন। আর এক সময়ে গঙ্গাগোবিন্দ ও তাঁহার পুত্র প্রাণকৃষ্ণ এক জাল ব্যাপারে লিপ্ত ছিলেন বলিয়া অভিযুক্ত হন। কিন্তু ভাগ্যবলে সেবারও লাঞ্ছনা ও অবমাননার হস্ত হইতে উভয়েই নিষ্কৃতি পাইয়াছিলেন। ১৭৮২ খৃঃ অব্দে হিজলীর ফৌজদারের উকীল গোলাম আশরফ নবাব মহম্মদ, রেজা খাঁ মজঃফর জঙ্গের নামে কতকগুলি দাখিলা জাল করায় ধৃত হয়। রেজা খাঁ যে সময়ে ফৌজদারী আদালতের প্রধান কর্তা ছিলেন, সেই সময়ে তাঁহার অধীন কর্মচারীদিগের বেতনের জন্য ঐ সকল দাখিলা দেওয়া হয় বলিয়া জাল করা হয়।
গোলাম আশরফ, ইহাতে প্রাণকৃষ্ণকে বিজড়িত করিয়া ফেলে। তৎকালে সরকারপক্ষের ফৌজদারী বিচারের তত্ত্বাবধায়ক উইলেস সাহেব এক মাসের উপর এই বিষয়ের অনুসন্ধান করিয়া সমিতির নিকট আপনার মন্তব্য প্রেরণ করেন। তাহাতে প্রাণকৃষ্ণকে অব্যাহতি দিয়া গোলাম আশরফকেই দোষী স্থির করা হয়। তাঁহার মন্তব্যানুসারে গোলাম আশরফ দাওরা সোপর্দ হয়। গোলাম আশরফ, তাহার হাজতে অবস্থানকালে পুনর্ব্বার প্রাণকৃষ্ণ ও গঙ্গা-গোবিন্দ উভয়ের বিরুদ্ধে গবর্ণর জেনারেলের নিকট এক আবেদনপত্র প্রেরণ করে।
এই বিষয়ের অনুসন্ধানের জন্য রাজস্ব-সমিতির সভ্যগণের মধ্যে চার্লস উইল কিন্স, জেম্ম্ গ্রান্ট, জোনাথান ডঙ্কান এবং জন হোয়া-ইটকে লইয়া একটি অনুসন্ধান-সমিতি গঠিত হয়। ১২ই এপ্রিল হইতে তাঁহারা এ বিষয়ের তদন্ত আরম্ভ করেন। তাঁহারা গোলাম আশরফের প্রত্যেক সাক্ষীকে জেরার উপর জেরা করিয়া তাহাদের সাক্ষ্য অগ্রাহ্য করিয়া ২৩শে গোলাম আশরফের নিকট প্রকাশ করেন যে, ১৫ দিনের মধ্যে যদি সে অন্য সাক্ষী আনয়ন করিতে না পারে, তাহা হইলে তাঁহারা তাঁহাদিগের মন্তব্য রাজস্বসমিতির নিকট পাঠাইতে বাধ্য হইবেন।