০৯:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৬) চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ

পর্ব ২: চুয়াডাঙ্গার আলুচাষির ঈদ — কোরবানির স্বপ্ন আর খরচের অংক

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলার মাঠে এখন সুনসান। আলু ওঠে গেছে বহু আগেই। কৃষকেরা এখন বসে আছেন হাতে খাতা-কলম নিয়ে—হিসাব কষছেন। ঈদের কোরবানি দেবেন, নাকি সেই টাকায় সার, বীজ আর আগাম চাষের খরচ চালাবেন?

রুহুল আমিন (৫২), একজন পুরোনো চাষি, জানালেন, “এই বছর আলু ফলন মোটামুটি হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে মাথা খারাপ। ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। অথচ প্রতি কেজির খরচ উঠেছে ১৫ টাকা।”

ধার-কর্জে ঈদের ভাবনা

রুহুলের পরিবারে তিন মেয়ে, এক ছেলে। স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, “বড় মেয়েটা বলেছে ঈদের জামা চাই। আমি দোকান থেকে এনে শুধু কাপড়টা ছুঁয়েছি। কিনিনি। দাম জিজ্ঞেস করতেই রুহুল চুপ করে রইল।”

তাঁর চোখে জল চলে আসে, “গত বছর ঈদে গরু কেটেছিলাম। এবার বলছে, হয় গরু, না হয় পরের ফসল।”

বাজারে বিক্রিহৃদয়ে হতাশা

দামুড়হুদার আরেক কৃষক মতিউর রহমান বলেন, “হিমাগারে আলু রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম দাম উঠবে। কিন্তু পাইকাররা দল বেঁধে এসে ১২-১৩ টাকার বেশি দিচ্ছে না।”

তিনি যোগ করলেন, “তাদের হাতে দাম, ওজনে ঠকানো, গাড়িভাড়া আলাদা—সব মিলে লোকসান।”

গরু নয়ভাগের কোরবানি

আলমডাঙ্গার কৃষক দেলোয়ার হোসেন এবার তাঁর ভাই ও ভায়রা ভাইদের সঙ্গে মিলে একটি গরু কোরবানি করছেন। তিনি বলেন, “নিজে গরু কিনতে পারিনি। জমির জন্য টাকা রেখে দিতে হয়েছে। না হলে হেমন্তে আবার ধার করতে হবে।”

সামাজিক চাপআত্মসম্মান

চুয়াডাঙ্গার গ্রামে ঈদের কোরবানি এক ধরনের সামাজিক মান-মর্যাদার ব্যাপার। প্রতিবেশীর গরু দেখে নিজের ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন করে—“আমরা কেন পারছি না?”

এই প্রশ্ন শুনেই রুহুল আমিন বলেন, “বাচ্চার মুখে যখন দুঃখ দেখি, তখন নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। আল্লাহ তো নিপীড়ন করেন না, আমাদের চেষ্টা দেখেন। তাই ছাগল কোরবানি করলেও অন্তত কিছু দিতে পারছি—এই শান্তনাটুকু বড়।”

নতুন চাষের টানাপোড়েন

ঈদের পরে শুরু হবে মাটির প্রস্তুতি। রুহুল বললেন, “আমার হাতে এখন ২৫ হাজার টাকা আছে। গরু কিনলে তা শেষ। তখন কী দিয়ে জমিতে সার দিব? কী দিয়ে শ্রমিক দিব?”

চুয়াডাঙ্গার কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, “আমরা কৃষকদের পাশে আছি। উৎপাদন খরচ কমাতে কীটনাশক ও বীজে ভর্তুকির ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে হিমাগার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা দরকার।”

ঈদের আনন্দ — সীমিততবু আন্তরিক

যদিও গরু নেই, তবু রুহুলদের ঘরে খিচুড়ি রান্না হবে, ছেলেমেয়েরা নতুন জামা না পেলেও ধুতি-পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যাবে।

জেসমিন বললেন, “আমরা বড় কিছু দিতে পারছি না, কিন্তু ভালোবাসা তো কম নয়। একসঙ্গে খেয়ে, হাসিমুখে ঈদ পালন করলেই তো ঈদ হয়ে যায়।”

চুয়াডাঙ্গার অনেক কৃষক এভাবেই সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও হৃদয়ের পূর্ণতায় ঈদ পালন করতে চাইছেন। কোরবানি হয়তো ছোট, কিন্তু আত্মত্যাগের অনুভূতি বড়। তাঁদের চোখে ঈদ মানেই পরিবার, সম্মান আর পরবর্তী চাষের টিকে থাকার প্রার্থনা।

ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা

পর্ব ২: চুয়াডাঙ্গার আলুচাষির ঈদ — কোরবানির স্বপ্ন আর খরচের অংক

০৫:০০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলার মাঠে এখন সুনসান। আলু ওঠে গেছে বহু আগেই। কৃষকেরা এখন বসে আছেন হাতে খাতা-কলম নিয়ে—হিসাব কষছেন। ঈদের কোরবানি দেবেন, নাকি সেই টাকায় সার, বীজ আর আগাম চাষের খরচ চালাবেন?

রুহুল আমিন (৫২), একজন পুরোনো চাষি, জানালেন, “এই বছর আলু ফলন মোটামুটি হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে মাথা খারাপ। ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। অথচ প্রতি কেজির খরচ উঠেছে ১৫ টাকা।”

ধার-কর্জে ঈদের ভাবনা

রুহুলের পরিবারে তিন মেয়ে, এক ছেলে। স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, “বড় মেয়েটা বলেছে ঈদের জামা চাই। আমি দোকান থেকে এনে শুধু কাপড়টা ছুঁয়েছি। কিনিনি। দাম জিজ্ঞেস করতেই রুহুল চুপ করে রইল।”

তাঁর চোখে জল চলে আসে, “গত বছর ঈদে গরু কেটেছিলাম। এবার বলছে, হয় গরু, না হয় পরের ফসল।”

বাজারে বিক্রিহৃদয়ে হতাশা

দামুড়হুদার আরেক কৃষক মতিউর রহমান বলেন, “হিমাগারে আলু রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম দাম উঠবে। কিন্তু পাইকাররা দল বেঁধে এসে ১২-১৩ টাকার বেশি দিচ্ছে না।”

তিনি যোগ করলেন, “তাদের হাতে দাম, ওজনে ঠকানো, গাড়িভাড়া আলাদা—সব মিলে লোকসান।”

গরু নয়ভাগের কোরবানি

আলমডাঙ্গার কৃষক দেলোয়ার হোসেন এবার তাঁর ভাই ও ভায়রা ভাইদের সঙ্গে মিলে একটি গরু কোরবানি করছেন। তিনি বলেন, “নিজে গরু কিনতে পারিনি। জমির জন্য টাকা রেখে দিতে হয়েছে। না হলে হেমন্তে আবার ধার করতে হবে।”

সামাজিক চাপআত্মসম্মান

চুয়াডাঙ্গার গ্রামে ঈদের কোরবানি এক ধরনের সামাজিক মান-মর্যাদার ব্যাপার। প্রতিবেশীর গরু দেখে নিজের ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন করে—“আমরা কেন পারছি না?”

এই প্রশ্ন শুনেই রুহুল আমিন বলেন, “বাচ্চার মুখে যখন দুঃখ দেখি, তখন নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। আল্লাহ তো নিপীড়ন করেন না, আমাদের চেষ্টা দেখেন। তাই ছাগল কোরবানি করলেও অন্তত কিছু দিতে পারছি—এই শান্তনাটুকু বড়।”

নতুন চাষের টানাপোড়েন

ঈদের পরে শুরু হবে মাটির প্রস্তুতি। রুহুল বললেন, “আমার হাতে এখন ২৫ হাজার টাকা আছে। গরু কিনলে তা শেষ। তখন কী দিয়ে জমিতে সার দিব? কী দিয়ে শ্রমিক দিব?”

চুয়াডাঙ্গার কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, “আমরা কৃষকদের পাশে আছি। উৎপাদন খরচ কমাতে কীটনাশক ও বীজে ভর্তুকির ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে হিমাগার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা দরকার।”

ঈদের আনন্দ — সীমিততবু আন্তরিক

যদিও গরু নেই, তবু রুহুলদের ঘরে খিচুড়ি রান্না হবে, ছেলেমেয়েরা নতুন জামা না পেলেও ধুতি-পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যাবে।

জেসমিন বললেন, “আমরা বড় কিছু দিতে পারছি না, কিন্তু ভালোবাসা তো কম নয়। একসঙ্গে খেয়ে, হাসিমুখে ঈদ পালন করলেই তো ঈদ হয়ে যায়।”

চুয়াডাঙ্গার অনেক কৃষক এভাবেই সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও হৃদয়ের পূর্ণতায় ঈদ পালন করতে চাইছেন। কোরবানি হয়তো ছোট, কিন্তু আত্মত্যাগের অনুভূতি বড়। তাঁদের চোখে ঈদ মানেই পরিবার, সম্মান আর পরবর্তী চাষের টিকে থাকার প্রার্থনা।