০৩:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তানের মানব কল্যানের বেশিভাগ সূচকগুলো আরো নেমে গেছে

পাকিস্তানের মানব সম্পদ উন্নয়নের ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী কোনো পদক্ষেপ সরকারি এজেন্ডার শীর্ষে নেই।সাক্ষরতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্যসহ মানব কল্যাণের বেশির ভাগ সূচক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবনতি ঘটেছে, কিন্তু সংসদীয় আলোচনা কিংবা জনপরিসরের বিতর্কে এসব বিষয় খুব কমই আলোচিত হয়। বাজেট নিয়ে সাম্প্রতিক টকশোগুলোর কথোপকথনেও দেখা গেছে, সামাজিক খাতে সরকারের অপ্রতুল ব্যয়কে টিভি পর্দায় প্রায় কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় না।

নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট ও বাড়তে থাকা ঋণের চাপ সরকারকে ব্যস্ত রেখেছে এবং মানব উন্নয়নে মনোযোগ ও সম্পদ ঢালার সুযোগ সীমিত করেছে। তবে এতে স্পষ্ট হয় যে, মানব পুঁজিতে বিনিয়োগ ছাড়া স্থায়ী অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন-সম্ভাবনাকে গুরুতরভাবে সীমিত করছে, যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে।

মানব উন্নয়নের নানা সূচকের সামগ্রিক চিত্র উদ্বেগজনক। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২৫-এর বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে পাকিস্তান ‘নিম্ন’ মানব উন্নয়ন শ্রেণিতে, ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৬৮-তম স্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩-এর Pakistan Human Capital Review পাকিস্তানকে “নীরব, গভীর মানব পুঁজি সংকট”-এর মুখোমুখি বলে চিহ্নিত করেছে, যা দেশের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক গতিপথকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

দেশের ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার বিস্তৃতি ও মানের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। অথচ পাকিস্তানে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ—২৬ মিলিয়নেরও বেশি (পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী) শিশু এখনো স্কুলের বাইরে, যাদের অর্ধেরও বেশি কন্যাশিশু। অর্থাৎ ওই বয়সী ৪৫ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না—যা সংবিধানের ধারা ২৫-এ বর্ণিত “পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে বিনা মূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা”-সংক্রান্ত সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন। যারা স্কুলে যায়, তাদের মাঝেও ঝরেপড়ার হার ও শেখার ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

পাকিস্তান যদি নিজের জনগণের ওপর বিনিয়োগ না করে, অর্থনৈতিক অগ্রগতির বাস্তব মানে থাকবে না।

২০২৪-এর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সারা দেশে শিক্ষা-জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রদেশগুলোর সঙ্গে মিলে ২৬ মিলিয়ন স্কুলবিমুখ শিশুকে ভর্তি করানোর অঙ্গীকার করেন। একই বছরের মে মাসেও তিনি একই ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রয়োজন স্বীকারের এই দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব নীতিতে রূপ নেয়নি—প্রমাণ করে যে, শুধু কথামালা প্রায়ই নীতির বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।

গত ডিসেম্বরে ঘোষিত সরকারের ‘উড়ান’ অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় মানব পুঁজিতে “জরুরি বিনিয়োগ”-এর কথা বলা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফেডারেল ও প্রাদেশিক স্তরে শিক্ষা-ব্যয় জিডিপির মাত্র ০.৮ শতাংশে নেমে এসেছে (২০১৮-তে ছিল ২ শতাংশ)—যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্নের অন্যতম।

ফলে সাক্ষরতার হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোখে পড়ার মতো বাড়েনি। সর্বশেষ Pakistan Economic Survey-এ সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশ ধরা হয়েছে, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ নাগরিক এখনো নিরক্ষর। এত বিপুল নিরক্ষরতা নিয়ে কোনো দেশই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তরুণ জনসংখ্যার দেশ হিসেবে শিক্ষার ঘাটতি আরও ভয়াবহ চিত্র দেখায়—মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই ৩০ বছরের নিচে। তারা যদি অশিক্ষিত ও বেকার থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চিত, তেমনি দেশও অগ্রগতির সুযোগ হারাবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেতে হলে তরুণদের শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে; না হলে এর গভীর অর্থনৈতিক-সামাজিক খেসারত দিতে হবে।

দারিদ্র্যের মাত্রাও উদ্বেগজনক। বিশ্বব্যাংকের সংশোধিত আয়সীমা অনুযায়ী দারিদ্র্য ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে। কম প্রবৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ও সীমিত কর্মসংস্থানের কারণে দারিদ্র্য শুধু বেড়েই চলেছে। চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের হার ৪.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬.৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

স্বাস্থ্য সূচকও সমান ভয়াবহ। জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়—অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। অপুষ্টিজনিত শিশুর বিকলাঙ্গতা (স্টান্টিং)-কে Pakistan Human Capital Review “জনস্বাস্থ্য সংকট” বলেছে; পাঁচ বছর বয়সের নিচে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু স্টান্টেড—একটি বিপজ্জনক সত্য। এর ফলে শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে; মূল কারণ অপুষ্টি, যা দারিদ্র্যেরই প্রতিফলন।

সামান্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, লিঙ্গ-ক্ষমতায়নের অগ্রযাত্রা স্থবির। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আর্থিক সেবা, তথ্য, রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগে লিঙ্গ বৈষম্য এখনো ব্যাপক। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের Global Gender Gap Index ২০২৫-এ পাকিস্তান ১৪৮টি দেশের মধ্যে সর্বশেষ স্থানে রয়েছে। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ২২ শতাংশ, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশেরও বেশি—মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম নিম্ন, আর সমপর্যায়ের আয়ের দেশের তুলনায় অনেক কম। অথচ স্বীকৃত সত্য হলো, নারীর উচ্চ অংশগ্রহণ অর্থনীতিকে গতিময় করে এবং মাথাপিছু জিডিপি বাড়ায়; তাই লিঙ্গ-ক্ষমতায়নে এখনো বিরাট কাজ বাকি।

দ্রুত, টেকসই নয় এমন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার—দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ—সরকারের অগ্রাধিকার দাবি করে। সীমিত সম্পদ, অবকাঠামো, সঙ্কুচিত চাকরি ও শিক্ষার সুযোগে এটি প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যা পরিকল্পনা সরকারি এজেন্ডায় প্রায় অনুপস্থিত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৮-তে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গঠিত জনসংখ্যা টাস্কফোর্স বহু বছর অকর্মণ্য পড়ে আছে। কার্যকর হতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এটিকে সচল করতে হবে। সুপরিচিত উপাদানসমৃদ্ধ একটি সমন্বিত জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন না করলে দেশকে ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

মানব উন্নয়নের এই দুর্বল চিত্র পাকিস্তানের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়ন একে অন্যকে শক্তিশালী করে; মানুষের ওপর যথাযথ বিনিয়োগ ছাড়া দেশ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলতে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম হতে এবং জনগণের প্রত্যাশিত-যোগ্য রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না।

লেখিকা যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত

পাকিস্তানের মানব কল্যানের বেশিভাগ সূচকগুলো আরো নেমে গেছে

০৪:১২:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তানের মানব সম্পদ উন্নয়নের ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী কোনো পদক্ষেপ সরকারি এজেন্ডার শীর্ষে নেই।সাক্ষরতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্যসহ মানব কল্যাণের বেশির ভাগ সূচক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবনতি ঘটেছে, কিন্তু সংসদীয় আলোচনা কিংবা জনপরিসরের বিতর্কে এসব বিষয় খুব কমই আলোচিত হয়। বাজেট নিয়ে সাম্প্রতিক টকশোগুলোর কথোপকথনেও দেখা গেছে, সামাজিক খাতে সরকারের অপ্রতুল ব্যয়কে টিভি পর্দায় প্রায় কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় না।

নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট ও বাড়তে থাকা ঋণের চাপ সরকারকে ব্যস্ত রেখেছে এবং মানব উন্নয়নে মনোযোগ ও সম্পদ ঢালার সুযোগ সীমিত করেছে। তবে এতে স্পষ্ট হয় যে, মানব পুঁজিতে বিনিয়োগ ছাড়া স্থায়ী অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন-সম্ভাবনাকে গুরুতরভাবে সীমিত করছে, যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে।

মানব উন্নয়নের নানা সূচকের সামগ্রিক চিত্র উদ্বেগজনক। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২৫-এর বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে পাকিস্তান ‘নিম্ন’ মানব উন্নয়ন শ্রেণিতে, ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৬৮-তম স্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩-এর Pakistan Human Capital Review পাকিস্তানকে “নীরব, গভীর মানব পুঁজি সংকট”-এর মুখোমুখি বলে চিহ্নিত করেছে, যা দেশের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক গতিপথকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

দেশের ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার বিস্তৃতি ও মানের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। অথচ পাকিস্তানে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ—২৬ মিলিয়নেরও বেশি (পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী) শিশু এখনো স্কুলের বাইরে, যাদের অর্ধেরও বেশি কন্যাশিশু। অর্থাৎ ওই বয়সী ৪৫ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না—যা সংবিধানের ধারা ২৫-এ বর্ণিত “পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে বিনা মূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা”-সংক্রান্ত সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন। যারা স্কুলে যায়, তাদের মাঝেও ঝরেপড়ার হার ও শেখার ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

পাকিস্তান যদি নিজের জনগণের ওপর বিনিয়োগ না করে, অর্থনৈতিক অগ্রগতির বাস্তব মানে থাকবে না।

২০২৪-এর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সারা দেশে শিক্ষা-জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রদেশগুলোর সঙ্গে মিলে ২৬ মিলিয়ন স্কুলবিমুখ শিশুকে ভর্তি করানোর অঙ্গীকার করেন। একই বছরের মে মাসেও তিনি একই ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রয়োজন স্বীকারের এই দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব নীতিতে রূপ নেয়নি—প্রমাণ করে যে, শুধু কথামালা প্রায়ই নীতির বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।

গত ডিসেম্বরে ঘোষিত সরকারের ‘উড়ান’ অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় মানব পুঁজিতে “জরুরি বিনিয়োগ”-এর কথা বলা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফেডারেল ও প্রাদেশিক স্তরে শিক্ষা-ব্যয় জিডিপির মাত্র ০.৮ শতাংশে নেমে এসেছে (২০১৮-তে ছিল ২ শতাংশ)—যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্নের অন্যতম।

ফলে সাক্ষরতার হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোখে পড়ার মতো বাড়েনি। সর্বশেষ Pakistan Economic Survey-এ সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশ ধরা হয়েছে, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ নাগরিক এখনো নিরক্ষর। এত বিপুল নিরক্ষরতা নিয়ে কোনো দেশই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তরুণ জনসংখ্যার দেশ হিসেবে শিক্ষার ঘাটতি আরও ভয়াবহ চিত্র দেখায়—মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই ৩০ বছরের নিচে। তারা যদি অশিক্ষিত ও বেকার থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চিত, তেমনি দেশও অগ্রগতির সুযোগ হারাবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেতে হলে তরুণদের শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে; না হলে এর গভীর অর্থনৈতিক-সামাজিক খেসারত দিতে হবে।

দারিদ্র্যের মাত্রাও উদ্বেগজনক। বিশ্বব্যাংকের সংশোধিত আয়সীমা অনুযায়ী দারিদ্র্য ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে। কম প্রবৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ও সীমিত কর্মসংস্থানের কারণে দারিদ্র্য শুধু বেড়েই চলেছে। চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের হার ৪.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬.৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

স্বাস্থ্য সূচকও সমান ভয়াবহ। জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়—অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। অপুষ্টিজনিত শিশুর বিকলাঙ্গতা (স্টান্টিং)-কে Pakistan Human Capital Review “জনস্বাস্থ্য সংকট” বলেছে; পাঁচ বছর বয়সের নিচে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু স্টান্টেড—একটি বিপজ্জনক সত্য। এর ফলে শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে; মূল কারণ অপুষ্টি, যা দারিদ্র্যেরই প্রতিফলন।

সামান্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, লিঙ্গ-ক্ষমতায়নের অগ্রযাত্রা স্থবির। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আর্থিক সেবা, তথ্য, রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগে লিঙ্গ বৈষম্য এখনো ব্যাপক। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের Global Gender Gap Index ২০২৫-এ পাকিস্তান ১৪৮টি দেশের মধ্যে সর্বশেষ স্থানে রয়েছে। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ২২ শতাংশ, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশেরও বেশি—মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম নিম্ন, আর সমপর্যায়ের আয়ের দেশের তুলনায় অনেক কম। অথচ স্বীকৃত সত্য হলো, নারীর উচ্চ অংশগ্রহণ অর্থনীতিকে গতিময় করে এবং মাথাপিছু জিডিপি বাড়ায়; তাই লিঙ্গ-ক্ষমতায়নে এখনো বিরাট কাজ বাকি।

দ্রুত, টেকসই নয় এমন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার—দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ—সরকারের অগ্রাধিকার দাবি করে। সীমিত সম্পদ, অবকাঠামো, সঙ্কুচিত চাকরি ও শিক্ষার সুযোগে এটি প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যা পরিকল্পনা সরকারি এজেন্ডায় প্রায় অনুপস্থিত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৮-তে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গঠিত জনসংখ্যা টাস্কফোর্স বহু বছর অকর্মণ্য পড়ে আছে। কার্যকর হতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এটিকে সচল করতে হবে। সুপরিচিত উপাদানসমৃদ্ধ একটি সমন্বিত জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন না করলে দেশকে ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

মানব উন্নয়নের এই দুর্বল চিত্র পাকিস্তানের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়ন একে অন্যকে শক্তিশালী করে; মানুষের ওপর যথাযথ বিনিয়োগ ছাড়া দেশ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলতে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম হতে এবং জনগণের প্রত্যাশিত-যোগ্য রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না।

লেখিকা যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত