১১:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

পারিবারিক আদালতের জটিলতা দূর করতে প্রধান বিচারপতির আহ্বান

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা দক্ষতা, জবাবদিহি ও নাগরিকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ‘পরিবার আদালতে পদ্ধতিগত জটিলতা: সময়মতো ন্যায়বিচার’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটি ব্র্যাকের সোশ্যাল এম্পাওয়ারমেন্ট ও লিগ্যাল প্রোটেকশন (সেল্প) কর্মসূচির আয়োজনে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

বিচারপতির মূল বক্তব্য

প্রধান বিচারপতি জানান, সাম্প্রতিক আইন সংস্কার শুধু আধুনিকীকরণেই সীমাবদ্ধ নয়; নাগরিকের কাছে ন্যায় সহজলভ্য করা এর মুখ্য লক্ষ্য। আইনি সহায়তা আইনের সংশোধনের মাধ্যমে মামলা দায়েরের আগেই বাধ্যতামূলক সমঝোতা ধাপ সংযোজন বড় পরিবর্তন, যা বৈরিতার বদলে সমঝোতায় উৎসাহ জোগাবে।

পরিবার আদালতের চ্যালেঞ্জ ও পরিসংখ্যান

৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত পরিবার আদালতে ৭৪,২৫৯টি মামলা ঝুলে আছে; এর মধ্যে ৫,০৩৪টি পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১০,০৮৯টি মামলা নিষ্পত্তিকে তিনি বিচারক ও আইনজীবীদের সক্রিয় ভূমিকা এবং ‘প্রক্রিয়াকেন্দ্রিক’ থেকে ‘মানবকেন্দ্রিক’ দৃষ্টিভঙ্গির ফল বলে উল্লেখ করেন।

প্রক্রিয়াগতসংস্কার

সিভিল প্রক্রিয়াবিধির সাম্প্রতিক সংশোধনে মামলার ধাপ কমানো, একই মামলায় রায় কার্যকর ব্যবস্থা সংযুক্ত করা, এবং মুলতবি আবেদনের সংখ্যা কড়াকড়িভাবে সীমিত করা হয়েছে। এতে বিলম্ব ও জটিলতা কমার আশা করা হচ্ছে।

ডিজিটালউদ্ভাবন

ডিজিটাল কজ লিস্ট, মুলতবি ট্র্যাকিং ও এসএমএস সমন ব্যবস্থার পাইলট সফল হওয়ায় পরিবার আদালতেও প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালুর প্রস্তুতি চলছে। জাতীয় পরিচয়পত্র-সংযুক্ত ডিজিটাল সমন ও বিচার সহায়তা হেল্পডেস্ক শিগগিরই যুক্ত হবে।

অবকাঠামো ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য

পুরোনো সমন পদ্ধতি, অনিয়ন্ত্রিত মুলতবি, কাঠামোবিহীন কেস ম্যানেজমেন্ট, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার অভাব এবং আদালত ভবনের অপ্রতুল সুবিধাকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্র্যাকের সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্টে স্বাস্থ্যকর, জেন্ডার-সংবেদনশীল শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে; পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় ও মহানগর আদালতেও এটি প্রসারিত হবে। প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

বিশেষ অতিথিদের মতামত

আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, পরিবার আদালতের ন্যায়বিচার জয়ের নয়, আরোগ্যের ব্যাপার। তাই বিচারপ্রক্রিয়াকে সহমর্মী ও দ্রুততর করতে হবে। তিনি কর্মশালাকে সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপের গতি সঞ্চারক হিসেবে দেখেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের একত্রিত করার জন্য ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানান।

ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, নারীর পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন ছাড়া ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়া অসম্ভব। সমাজে প্রচলিত ক্ষতিকর রীতি ভাঙতে সচেতনতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতিগত সমর্থনসহ বহুমুখী কাজ চালাচ্ছে ব্র্যাক।

সমাপনীমূল্যায়ন

কর্মশালায় নীতি-প্রণয়নকারী, বিচারক, সরকারি কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ আইনজীবীরা অংশ নেন। ৫১ জেলার ১১৭ জন বিচারক ও ১০ জন আইনজীবীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত পাঁচটি আঞ্চলিক পরামর্শ সভার সুপারিশগুলো মূল্যায়ন করা হয়, যেখানে সমন প্রক্রিয়ার বিলম্বকে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত, সহমর্মী ও নাগরিককেন্দ্রিক পরিবার আদালত গড়ে তুলতে সমন্বিত সংস্কারের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

পারিবারিক আদালতের জটিলতা দূর করতে প্রধান বিচারপতির আহ্বান

০৩:০৮:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা দক্ষতা, জবাবদিহি ও নাগরিকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ‘পরিবার আদালতে পদ্ধতিগত জটিলতা: সময়মতো ন্যায়বিচার’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটি ব্র্যাকের সোশ্যাল এম্পাওয়ারমেন্ট ও লিগ্যাল প্রোটেকশন (সেল্প) কর্মসূচির আয়োজনে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

বিচারপতির মূল বক্তব্য

প্রধান বিচারপতি জানান, সাম্প্রতিক আইন সংস্কার শুধু আধুনিকীকরণেই সীমাবদ্ধ নয়; নাগরিকের কাছে ন্যায় সহজলভ্য করা এর মুখ্য লক্ষ্য। আইনি সহায়তা আইনের সংশোধনের মাধ্যমে মামলা দায়েরের আগেই বাধ্যতামূলক সমঝোতা ধাপ সংযোজন বড় পরিবর্তন, যা বৈরিতার বদলে সমঝোতায় উৎসাহ জোগাবে।

পরিবার আদালতের চ্যালেঞ্জ ও পরিসংখ্যান

৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত পরিবার আদালতে ৭৪,২৫৯টি মামলা ঝুলে আছে; এর মধ্যে ৫,০৩৪টি পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১০,০৮৯টি মামলা নিষ্পত্তিকে তিনি বিচারক ও আইনজীবীদের সক্রিয় ভূমিকা এবং ‘প্রক্রিয়াকেন্দ্রিক’ থেকে ‘মানবকেন্দ্রিক’ দৃষ্টিভঙ্গির ফল বলে উল্লেখ করেন।

প্রক্রিয়াগতসংস্কার

সিভিল প্রক্রিয়াবিধির সাম্প্রতিক সংশোধনে মামলার ধাপ কমানো, একই মামলায় রায় কার্যকর ব্যবস্থা সংযুক্ত করা, এবং মুলতবি আবেদনের সংখ্যা কড়াকড়িভাবে সীমিত করা হয়েছে। এতে বিলম্ব ও জটিলতা কমার আশা করা হচ্ছে।

ডিজিটালউদ্ভাবন

ডিজিটাল কজ লিস্ট, মুলতবি ট্র্যাকিং ও এসএমএস সমন ব্যবস্থার পাইলট সফল হওয়ায় পরিবার আদালতেও প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালুর প্রস্তুতি চলছে। জাতীয় পরিচয়পত্র-সংযুক্ত ডিজিটাল সমন ও বিচার সহায়তা হেল্পডেস্ক শিগগিরই যুক্ত হবে।

অবকাঠামো ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য

পুরোনো সমন পদ্ধতি, অনিয়ন্ত্রিত মুলতবি, কাঠামোবিহীন কেস ম্যানেজমেন্ট, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার অভাব এবং আদালত ভবনের অপ্রতুল সুবিধাকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্র্যাকের সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্টে স্বাস্থ্যকর, জেন্ডার-সংবেদনশীল শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে; পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় ও মহানগর আদালতেও এটি প্রসারিত হবে। প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

বিশেষ অতিথিদের মতামত

আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, পরিবার আদালতের ন্যায়বিচার জয়ের নয়, আরোগ্যের ব্যাপার। তাই বিচারপ্রক্রিয়াকে সহমর্মী ও দ্রুততর করতে হবে। তিনি কর্মশালাকে সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপের গতি সঞ্চারক হিসেবে দেখেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের একত্রিত করার জন্য ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানান।

ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, নারীর পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন ছাড়া ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়া অসম্ভব। সমাজে প্রচলিত ক্ষতিকর রীতি ভাঙতে সচেতনতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতিগত সমর্থনসহ বহুমুখী কাজ চালাচ্ছে ব্র্যাক।

সমাপনীমূল্যায়ন

কর্মশালায় নীতি-প্রণয়নকারী, বিচারক, সরকারি কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ আইনজীবীরা অংশ নেন। ৫১ জেলার ১১৭ জন বিচারক ও ১০ জন আইনজীবীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত পাঁচটি আঞ্চলিক পরামর্শ সভার সুপারিশগুলো মূল্যায়ন করা হয়, যেখানে সমন প্রক্রিয়ার বিলম্বকে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত, সহমর্মী ও নাগরিককেন্দ্রিক পরিবার আদালত গড়ে তুলতে সমন্বিত সংস্কারের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।