সাধারণত ভারতীয়রা সমবায়কে বিকল্প, ভঙ্গ প্রভৃতি নাম দিয়েছেন “বিকল্প” কথাটি ছয়শত শ্রীষ্ট পূর্বে লিখিত স্বশ্রুত সংহিতাতে পাওয়া যায়।
সমবায় ও বিন্যাস
ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে সমবায় ও বিন্যাসের অন্তর্ভুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বহু ঐতিহাসিক অবশ্য এ ব্যাপারে ভারতীয়দের দাবীকে নস্তাৎ করে দিয়েছেন। ডি. ই. স্মীথ তাঁর হিস্ট্রী অব ম্যাথেমেটিকস গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের পূর্বে ভারতীয়রা এ ব্যাপারে কিছু জানতেন সে কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে গিয়েছেন।
যাঁরা বৈদিক ছন্দ এবং সুর সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল তাঁরাই জানেন যে বৈদিকছন্দের সঙ্গেই এগুলির উৎপত্তি বা আবির্ভাব ঘটেছিল। দুইশত শ্রীষ্টপূর্বের আগে পিঙ্গলের ছন্দসূত্রে ছন্দ, যতি, মিল প্রভৃতির আলোচনায় সমবায় ও বিন্যাসের সাক্ষাৎ মেলে।
এটি অধিগত করার পর ভারতীয়দের বিভিন্ন শাস্ত্রে এর মূল সূত্র প্রযোগ করতে দেখা যায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ সুশ্রুতের সুশ্রুত সংহিতার কথা বলা যেতে পারে। এখানে একজায়গায় বলা হয়েছে ছয়টি স্বাদ একযোগে একটি, ছটি, তিনটি,…… ছয়টি করে নিলে 63 রকমের স্বাদ পাওয়া যাবে।
তিনশত খ্রীষ্টপূর্বে লিখিত ভগবতীসূত্রে একজায়গায় বলা হয়েছে সংখ্যক বস্তু থেকে একযোগে একটি, দুটি, ….. প্রভৃতি তুলে নিলে সমবায় সংখ্যাগুলি কত হবে। জম্বুদ্বীপপ্রজ্ঞপ্তি, অনুযোগদ্বার সূত্র প্রভৃতি গ্রন্থে বিন্যাস ও সমবায়ের সূত্র পাওয়া যায়। বরাহমিহিরের বৃহৎ সংহিতাতে (4) “P, n(n-1)(n-2)……(n-r+1) এবং c, n(n-1)(n-r+1) = 1.2.3.4
সূত্রগুলি পাওয়া গিয়েছে। বরাহমিহিরের এই গ্রন্থে যোলটি গন্ধ একযোগে একটি, দু’টি, তিনটি ও চারটি নিলে 174720টি পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহজাতকে গ্রহের যুতি (conjunction) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে উপযুক্ত সূত্রাদি প্রয়োগ করা হয়েছে।
সাধারণত ভারতীয়রা সমবায়কে বিকল্প, ভঙ্গ প্রভৃতি নাম দিয়েছেন “বিকল্প” কথাটি ছয়শত শ্রীষ্ট পূর্বে লিখিত স্বশ্রুত সংহিতাতে পাওয়া যায়। বর্তমানে সমবায় ও বিন্যাসে আমরা একযোগ একটি, একযোগে দুটি প্রভৃতি বলে থাকি, এগুলি ভারতীয়রা বলতেন একসংযোগ, দ্বিকসংযোগ, ত্রিক সংযোগ প্রভৃতি।
(চলবে)
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৪৯)