গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানিয়েছেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০/২(খ) ধারায় বলা হয়েছে—চেয়ারম্যান দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকলে তিনি সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কোনো সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। বর্তমানে চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসছেন। তাই তিনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দেননি। এ অবস্থায় অন্য কোনো উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। শামীম পাটোয়ারীর দাবি, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় কিছু ব্যক্তি নিজেদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করছেন, তা শুরু থেকেই বেআইনি।
বহিষ্কৃতদের কাউন্সিল অবৈধ
তিনি বলেন, বহিষ্কৃতদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূল ধারার কোনো নেতাকর্মী অংশ নেবেন না। তাদের কাউন্সিল আহ্বান সম্পূর্ণ অবৈধ এবং রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে না। যারা দল ভেঙেছেন, তারা অতীতে কখনো সফল হননি। এরশাদের জাতীয় পার্টি কিংবা জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই মূলধারা, এবং এই মূলধারা টিকে ছিল ও থাকবে।
জুন মাসের কাউন্সিল স্থগিতের কারণ
প্রেস ব্রিফিংয়ে শামীম পাটোয়ারী জানান, ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হল বরাদ্দ না পাওয়ায় তা স্থগিত হয়। হল কর্তৃপক্ষ বাজেট সংক্রান্ত সরকারি সভার কারণে বরাদ্দ দেয়নি। পরবর্তীতে ২৭ জুনও চেষ্টা করা হলেও লিখিতভাবে অপারগতা জানানো হয়। কিছু সিনিয়র নেতা এই ঘটনাকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ান এবং ২৮ জুনই কাউন্সিল করার তৎপরতা চালান।
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা
২৫ জুন ৭৮টি ইউনিট কমিটির নেতারা সভা করে চেয়ারম্যানের প্রতি পূর্ণ আস্থা জানান এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। ২৮ জুন প্রেসিডিয়াম সভায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়, যা ৩০ ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যান কার্যকর করেন। বহিষ্কৃতরা দেওয়ানি মামলা করলেও আদালতের আদেশে চেয়ারম্যানের পদ বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি, শুধু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে বহিষ্কৃতরা এখনো বহিষ্কৃত এবং তাদের কোনো সভা বা কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই।
আদালতের আদেশ নিয়ে বিভ্রান্তি
শামীম পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, আদালতের রায়কে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আদেশে ‘মহাসচিব’ শব্দও উল্লেখ করা হয়নি, অথচ কেউ কেউ নিজেদের মহাসচিব দাবি করছেন। তিনি নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানান।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল পরিচালনা
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। পদোন্নতি ও বহিষ্কার দুটোই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে। বহিষ্কৃতদের সভা গঠনতন্ত্রবিরোধী ও বেআইনি, যা আদালত অবমাননার শামিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চেয়ারম্যান বর্তমানে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছেন।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে মন্তব্য
বর্তমানে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল বলে উল্লেখ করেন তিনি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব বলে মত দেন। কিন্তু এখনো জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় না ডাকায় তিনি এটিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব হিসেবে উল্লেখ করেন।
অতীতের নির্বাচন ও আন্দোলনে ভূমিকা
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করেছিল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, শহীদ ও আহত নেতাকর্মীর ত্যাগ, এবং গণহত্যা বন্ধের দাবি জাতীয় পার্টি তুলেছিল। তবে আন্দোলনের পর কৃতিত্ব ভাগাভাগি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ
তার মতে, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক না হলে, পুলিশ-প্রশাসন সঠিকভাবে কাজ না করলে এবং সমান সুযোগ না থাকলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটার চেষ্টা। শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ সরকার হলে তবেই তারা অংশগ্রহণ করবে।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর শিকদার লোটন, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, অধ্যাপক মহসিনুল ইসলাম হাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বি চৌধুরী রুম্মন, হেনা খান পন্নী, প্রফেসর ড. গোলাম মোস্তফা, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, আমির উদ্দিন ডালু, মোঃ হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবাহান, আখতার হোসেন দেওয়ান, খন্দকার দেলোয়ার জালালী, সমরেশ মন্ডল মানিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























