যে সব দেশ জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্ধকারে ছিল তারা এঁদের সহায়তায় গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে।
এ দুজনের পরেই আরবজগতে বীজগণিত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন ওমর খৈয়াস। তাঁর গ্রন্থে আমরা, 1/x ² + a/ x ²+ b/x = c, x² + cx ² + bx = a প্রভৃতি নানা ধরণের সমীকরণ দেখতে পাই।
ইউরোপে বীজগণিতের প্রসার
ভারতীয় গণিতশাস্ত্রের স্বর্ণযুগ তখন স্মৃতির মণিকোঠায় স্থান পেয়েছে, আরব জগতে ধিকি ধিকি করে গণিতের সামান্য কিছু চর্চা চলেছে এবং চীনে প্রায় আরব জগতের মতই অবস্থা। গণিতশাস্ত্রের চর্চা যখন এই অবস্থা, তখন ইউরোপে নব-জাগরণ শুরু হয়। এই নবজাগরণের ফলে সাহিত্যে, বিজ্ঞানে, অঙ্কনে প্রভৃতি নানা দিকে উন্নতির জোয়ার দেখতে পাওয়া যায়। এ জোয়ারের ঢেউ গণিতশাস্ত্রকেও ভাসিয়ে নিয়ে গেল এক নব দিগন্তের সীমানায়।
গণিতশাস্ত্রের নব জাগরণ শুরু হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকে। কতকগুলি ঐতিহাসিক কারণ দেখতে পাওয়া যায়।১ তবে এ নবজাগরণের পিছনে চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে বহুবার এঙ্গল, সাক্সন, ফ্রাঙ্ক, গথ ও অন্যান্য টিউটনেরা রোমান সাম্রাজ্য আক্রমণ করে কিন্তু সাফল্য লাভ করতে পারে না। ফলে রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বে তোরণ সম্রাট কনষ্টানটাইন কর্তৃক স্থাপিত বাইজেনটাইন নগরীর উপর প্রতিষ্ঠিত কনষ্টান্টিনোপলের কোন ক্ষতি করতে পারে না।
১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে তুর্কী সৈন্যরা কনষ্টান্টিনোপল অবরোধ করে এবং কিছুকালের মধ্যেই রোমান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হতে থাকে। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন এই পতনের ফলে পশ্চিম ইউরোপে চিন্তা ও কার্য উভয়ক্ষেত্রে বিষম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর কিছুদিন পরেই বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ নৌযাত্রার দিকে দৃষ্টি দেয়। আবিষ্কৃত হয় নূতন নূতন দেশ।
সংযোগ সাধিত হয় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একদা যে সমস্ত দেশ শীর্ষে ছিল তাদের সঙ্গে। ফলে ভাব বিনিময় ও জান বিজ্ঞানের আদান প্রদান অতি দ্রুত ও সহজসাধ্য হয়ে ওঠে। কনষ্টান্টিনোপলের পতনের ফলে বহু জ্ঞানী গুণী ও বিজ্ঞজন ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এরই জন্য যে সব দেশ জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্ধকারে ছিল তারা এঁদের সহায়তায় গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে। তাছাড়া এসব গুণীব্যক্তিদের কাছে বহু গ্রন্থের নকল ছিল এবং এগুলি ইউরোপের অন্যান্য দেশ সহজেই হস্তগত করে।
(চলবে)
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৬৬)
প্রদীপ কুমার মজুমদার 



















