১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইউক্রনেকে ন্যাটোর সদস্য পদ না দিয়ে ‘ন্যাটো-ধাঁচের’ নিরাপত্তাতে পুতিনের আপত্তি নেই

প্রধান খবর
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের মাধ্যমে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো জোটের অনুচ্ছেদ ৫–এর মতো সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দেওয়ার ধারণায় সম্মত হয়েছেন—এমন দাবি করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। আলাস্কার একটি সামরিক ঘাঁটিতে শুক্রবার ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর রোববার তিনি একে ‘গেম–চেঞ্জিং’ উন্নয়ন বলে আখ্যা দেন। তবে কীভাবে এই নিশ্চয়তা কাজ করবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত এখনও নির্ধারিত হয়নি।

কেন এই অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ
ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী জোটের এক বা একাধিক সদস্যের ওপর সশস্ত্র হামলা হলে তা সবার ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউক্রেন বহুদিন ধরেই ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইলেও রাশিয়ার আপত্তি ছিল মূল বাধা। ন্যাটোতে আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ না দিয়েও যদি অনুচ্ছেদ ৫–সদৃশ সুরক্ষা দেওয়া যায়, তাহলে পুতিনের প্রধান আপত্তি এড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার একটি ‘বিকল্প পথ’ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে—এমন ধারণা আলোচনায় এসেছে।

পরবর্তী বৈঠকের প্রেক্ষাপট
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এই নিরাপত্তা কাঠামো প্রধান আলোচ্য হওয়ায় ধরে নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, রাশিয়া ইস্যুতে বড় অগ্রগতি হয়েছে।

নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কাঠামো নিয়ে আলোচ্য বিষয়
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, কী নামে এই ব্যবস্থা চালু হবে, কীভাবে তা গড়া হবে এবং প্রয়োগযোগ্য কোন নিশ্চয়তাগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে—এসব বিষয়ই অংশীদারদের সঙ্গে কয়েকদিনের আলোচনায় নির্ধারিত হবে। রুবিও এটিকে রাশিয়ার দিক থেকে বড় ছাড় বললেও জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না, তা স্পষ্ট নয়।

রাশিয়ার অতিরিক্ত আশ্বাসের কথা
উইটকফ দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউরোপের কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন না করার অঙ্গীকার আইন করে ‘বাঁধাই’ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে। শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের অতিরিক্ত ভূখণ্ড দখল না করার প্রতিশ্রুতিও তারা দিতে প্রস্তুত—এমনটাই তার বক্তব্য।

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘আর্টিকেল ৫–সদৃশ’ নিশ্চয়তায় আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ‘ইচ্ছুকদের জোট’ শান্তিচুক্তি-পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিজেদের ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ব্যবস্থাটি বাস্তবে কীভাবে কাজ করবে—সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্টতা আসেনি। তার কথা, ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর মতো কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং ইউক্রেনের ইইউ–অভিযানও সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ।

যুদ্ধবিরতি থেকে পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির দিকে
উইটকফ ও রুবিওর যুক্তি, আলাস্কার বৈঠকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ায় ট্রাম্প আপাতত যুদ্ধবিরতির বদলে সরাসরি শান্তিচুক্তির রূপরেখায় মনোযোগ দিচ্ছেন। রুবিও সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন উপস্থিত না থাকায় সেদিন কোনো যুদ্ধবিরতি সম্ভব ছিল না, আর সামগ্রিক শান্তিচুক্তির পথ এখনও দীর্ঘ।

ভূখণ্ড প্রশ্ন: ডনবাস কি আলোচনার কেন্দ্র
সোমবারের বৈঠকে সবচেয়ে জটিল ইস্যু হতে পারে ভূখণ্ড। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে (ডনবাস অঞ্চল) মুখ্য দাবি হিসেবে তুলে ধরেছেন। এটি গ্রহণযোগ্য কি না—সে বিষয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। উইটকফের কথায়, রাশিয়া চাইছে দখলরেখা নয়, আইনগত সীমানা অনুযায়ী ভূখণ্ড নির্ধারণের আলোচনায় যেতে। জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না এবং আলোচনার ভিত্তি হওয়া উচিত বর্তমান ‘কন্ট্যাক্ট লাইন’—যেখানে রাশিয়া পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।

সামগ্রিক চিত্র
রুশ আপত্তি এড়িয়ে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো–সদৃশ নিরাপত্তা ছাতার খসড়া—আলাস্কা বৈঠকের পর এটিই সবচেয়ে বড় বার্তা। কিন্তু এই ছাতার কাঠামো, প্রয়োগযোগ্যতা, যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপের ভূমিকা, এবং সবচেয়ে কঠিন—ভূখণ্ডগত সমঝোতা—এসব প্রশ্নের উত্তর মিলেনি। ট্রাম্প প্রশাসন ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’র ভাষ্য দিলেও রুবিওর সতর্কবার্তাই এখন বাস্তবতা: শান্তির পথে হাঁটা শুরু হয়েছে, কিন্তু গন্তব্য এখনও দূরে।

ইউক্রনেকে ন্যাটোর সদস্য পদ না দিয়ে ‘ন্যাটো-ধাঁচের’ নিরাপত্তাতে পুতিনের আপত্তি নেই

১১:২২:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

প্রধান খবর
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের মাধ্যমে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো জোটের অনুচ্ছেদ ৫–এর মতো সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দেওয়ার ধারণায় সম্মত হয়েছেন—এমন দাবি করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। আলাস্কার একটি সামরিক ঘাঁটিতে শুক্রবার ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর রোববার তিনি একে ‘গেম–চেঞ্জিং’ উন্নয়ন বলে আখ্যা দেন। তবে কীভাবে এই নিশ্চয়তা কাজ করবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত এখনও নির্ধারিত হয়নি।

কেন এই অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ
ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী জোটের এক বা একাধিক সদস্যের ওপর সশস্ত্র হামলা হলে তা সবার ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউক্রেন বহুদিন ধরেই ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইলেও রাশিয়ার আপত্তি ছিল মূল বাধা। ন্যাটোতে আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ না দিয়েও যদি অনুচ্ছেদ ৫–সদৃশ সুরক্ষা দেওয়া যায়, তাহলে পুতিনের প্রধান আপত্তি এড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার একটি ‘বিকল্প পথ’ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে—এমন ধারণা আলোচনায় এসেছে।

পরবর্তী বৈঠকের প্রেক্ষাপট
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এই নিরাপত্তা কাঠামো প্রধান আলোচ্য হওয়ায় ধরে নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, রাশিয়া ইস্যুতে বড় অগ্রগতি হয়েছে।

নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কাঠামো নিয়ে আলোচ্য বিষয়
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, কী নামে এই ব্যবস্থা চালু হবে, কীভাবে তা গড়া হবে এবং প্রয়োগযোগ্য কোন নিশ্চয়তাগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে—এসব বিষয়ই অংশীদারদের সঙ্গে কয়েকদিনের আলোচনায় নির্ধারিত হবে। রুবিও এটিকে রাশিয়ার দিক থেকে বড় ছাড় বললেও জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না, তা স্পষ্ট নয়।

রাশিয়ার অতিরিক্ত আশ্বাসের কথা
উইটকফ দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউরোপের কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন না করার অঙ্গীকার আইন করে ‘বাঁধাই’ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে। শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের অতিরিক্ত ভূখণ্ড দখল না করার প্রতিশ্রুতিও তারা দিতে প্রস্তুত—এমনটাই তার বক্তব্য।

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘আর্টিকেল ৫–সদৃশ’ নিশ্চয়তায় আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ‘ইচ্ছুকদের জোট’ শান্তিচুক্তি-পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিজেদের ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ব্যবস্থাটি বাস্তবে কীভাবে কাজ করবে—সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্টতা আসেনি। তার কথা, ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর মতো কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং ইউক্রেনের ইইউ–অভিযানও সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ।

যুদ্ধবিরতি থেকে পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির দিকে
উইটকফ ও রুবিওর যুক্তি, আলাস্কার বৈঠকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ায় ট্রাম্প আপাতত যুদ্ধবিরতির বদলে সরাসরি শান্তিচুক্তির রূপরেখায় মনোযোগ দিচ্ছেন। রুবিও সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন উপস্থিত না থাকায় সেদিন কোনো যুদ্ধবিরতি সম্ভব ছিল না, আর সামগ্রিক শান্তিচুক্তির পথ এখনও দীর্ঘ।

ভূখণ্ড প্রশ্ন: ডনবাস কি আলোচনার কেন্দ্র
সোমবারের বৈঠকে সবচেয়ে জটিল ইস্যু হতে পারে ভূখণ্ড। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে (ডনবাস অঞ্চল) মুখ্য দাবি হিসেবে তুলে ধরেছেন। এটি গ্রহণযোগ্য কি না—সে বিষয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। উইটকফের কথায়, রাশিয়া চাইছে দখলরেখা নয়, আইনগত সীমানা অনুযায়ী ভূখণ্ড নির্ধারণের আলোচনায় যেতে। জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না এবং আলোচনার ভিত্তি হওয়া উচিত বর্তমান ‘কন্ট্যাক্ট লাইন’—যেখানে রাশিয়া পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।

সামগ্রিক চিত্র
রুশ আপত্তি এড়িয়ে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো–সদৃশ নিরাপত্তা ছাতার খসড়া—আলাস্কা বৈঠকের পর এটিই সবচেয়ে বড় বার্তা। কিন্তু এই ছাতার কাঠামো, প্রয়োগযোগ্যতা, যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপের ভূমিকা, এবং সবচেয়ে কঠিন—ভূখণ্ডগত সমঝোতা—এসব প্রশ্নের উত্তর মিলেনি। ট্রাম্প প্রশাসন ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’র ভাষ্য দিলেও রুবিওর সতর্কবার্তাই এখন বাস্তবতা: শান্তির পথে হাঁটা শুরু হয়েছে, কিন্তু গন্তব্য এখনও দূরে।