সমঝোতার অপ্রস্তুততা
সোমবার হোয়াইট হাউসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে প্রাথমিক ঐক্যমত্য হয়েছিল। কিন্তু পরে রাশিয়া অন্য সুরে কথা বলে।
ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, আলোচনা হয়েছিল শুধু প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক প্রসঙ্গে। রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের কোনো উল্লেখ সেখানে ছিল না।
পরের দিন রাষ্ট্রীয় টিভিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, “আমরা কোনো ধরনের কাজ—দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক—অস্বীকার করছি না।” তবে তিনি যোগ করেন, শীর্ষ পর্যায়ের যে কোনো যোগাযোগ খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত করতে হবে। এর মানে, ক্রেমলিন এখনো প্রস্তুত নয়।

যুদ্ধের সূচনা ও জেলেনস্কির অবমাননা
এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল যখন পুতিন একতরফাভাবে ইউক্রেনের ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেন রাশিয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর আলাদা অস্তিত্ব একটি ঐতিহাসিক ভুল।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া–ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক ওরিসিয়া লুটসেভিচ বলেন, বৈঠক হলে পুতিনকে এমন একজন নেতার সঙ্গে বসতে হবে যাকে তিনি সবসময় অবমাননা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় প্রচারে জেলেনস্কিকে “নাৎসি”, “পশ্চিমা পুতুল” ও “অবৈধ শাসক” বলা হয়েছে। হঠাৎ করে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসা রুশ জনগণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
রাশিয়া নিয়মিত জেলেনস্কির বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, জরুরি আইন কার্যকর হওয়ায় ইউক্রেনের নির্বাচনের স্থগিততাকে তুলে ধরে। শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে তারা চাইছে নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হোক। এমনকি ক্রেমলিন তাঁকে নাম ধরে উল্লেখ না করে “কিয়েভ শাসনব্যবস্থা” বলেই সম্বোধন করে।

শর্তবাহিত বৈঠকের প্রশ্ন
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো তাতিয়ানা স্টানোভায়া বলেন, পুতিন এই যুদ্ধকে পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাত হিসেবে দেখেন। তাই তিনি বৈঠককে কখনোই জরুরি মনে করেননি। তবে যদি নিশ্চিত হতেন বৈঠক সফল হবে, তাহলে তিনি হয়তো রাজি হতেন।
পুতিনের মূল দাবি হলো আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ছাড়তে হবে। জেলেনস্কি এখনো সেই দাবিতে রাজি নন। তবে স্টানোভায়া মনে করেন, পুতিন ট্রাম্পকে এই পরিবর্তনের প্রধান চাবিকাঠি মনে করেন।
রাশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্রকেই কিয়েভের উপর চাপ প্রয়োগের মিত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। উশাকভ ও লাভরভের নেতৃত্বে নতুন কোনো ইস্তানবুল ধরনের বৈঠকের সম্ভাবনা থাকলেও, ক্রেমলিন ব্যর্থতার ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ও পুতিনের অনাগ্রহ
ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি পুতিন–জেলেনস্কি বৈঠকের ব্যবস্থা শুরু করেছেন। তবে Fox News-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে দুই নেতাকেই।
পুতিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিশেষ কারণও নেই। কোনো ছাড় না দিয়েই তিনি ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কার শীর্ষ বৈঠকে সম্মান পেয়েছেন, সাইফার সংক্রান্ত দাবি প্রত্যাহার করিয়েছেন এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রভাব দুর্বল করেছেন।
অগাস্টে ইউক্রেনের শহরগুলোতে ড্রোন হামলা কিছুটা কমলেও সোমবার রাতে তা আবার বেড়ে ২৭০ ড্রোন ও ১০টি মিসাইল ছোড়া হয়। অর্থাৎ, ট্রাম্পের চাপ কাজে না এলেও পুতিনের হাতে এখনো সামরিক বিকল্প রয়ে গেছে।
বর্তমানে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হিসাব—এই শান্তি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প কাকে দায়ী করবেন?
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















