টানা বর্ষণে মুম্বাই বিপর্যস্ত
মুম্বাইয়ে টানা ভারি বর্ষণে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। শহরের মিঠি নদী বিপজ্জনক সীমার কাছাকাছি ফুলে উঠেছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) বুধবারের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। এরই মধ্যে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় বুধবারের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা
আইএমডি জানিয়েছে, মুম্বাই, থানে, পালঘর, রায়গড় ও রত্নগিরি জেলায় প্রবল থেকে অতি প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, সর্বোচ্চ দমকা হাওয়া ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রায়গড় জেলায় রেড অ্যালার্ট বহাল থাকলেও থানে, পালঘর ও রত্নগিরি জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত
মঙ্গলবার দুপুরে ট্র্যাক ডুবে যাওয়ায় সেন্ট্রাল রেলের হারবার লাইন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বুধবার ভোর ৩টার দিকে পুনরায় চালু হয়। তবে পশ্চিম রেলওয়ের ট্রেনগুলো এখনো ৩০–৩৫ মিনিট দেরিতে চলছে। সেন্ট্রাল রেলের মূল লাইন মঙ্গলবার রাত ৭টা ৩০ মিনিটে চালু হলেও হারবার লাইন অনেক রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল।
দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল ও পরিবর্তিত রুট
বৃষ্টির কারণে কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। জোধপুর–দাদর এক্সপ্রেসকে বরিভলিতে থামানো হয় এবং সেখান থেকেই এর ফিরতি যাত্রা শুরু হয়। এ ছাড়া আহমেদাবাদ–পুনে দুরন্ত এক্সপ্রেস ও জয়পুর–পুনে এক্সপ্রেসকে সুরাট–উধনা–জলগাঁও হয়ে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়, যার ফলে যাত্রায় সময় বেড়ে যায় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত
মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার, ২০ আগস্ট নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করে। এর আওতায় গ্রীষ্মকালীন ২০২৫ ও শীতকালীন ২০২৫ সেশনের পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত। পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিগগিরই নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।
রেকর্ড বৃষ্টি ও শহরের চিত্র
মঙ্গলবার মাত্র ১১ ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। কুরলা, দাদর, আন্দেরি ও সিয়ন এলাকায় রাস্তাগুলো নদীর মতো রূপ নেয়। এতে সাধারণ চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বৃষ্টির কারণে দেয়ালের ধসে পড়া, গাছ উপড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
মিঠি নদী বিপজ্জনক পর্যায়ে
মিঠি নদীর পানির উচ্চতা ৩.৯ মিটার ছুঁয়ে যায়, যা ৪ মিটার বিপদসীমার কাছাকাছি। ফলে কুরলার ক্রান্তি নগরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয় বাসিন্দাদের। ৪০০-এর বেশি মানুষকে এনডিআরএফ ও সিটি করপোরেশনের সহায়তায় নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিমান চলাচলে ব্যাঘাত
মুম্বাই বিমানবন্দরে ভারি বৃষ্টির কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায় এবং রানওয়ের কিছু অংশে পানি জমে। অন্তত আটটি ফ্লাইট অন্যত্র পাঠানো হয় এবং আরও অনেক ফ্লাইট বিলম্বে ছেড়ে যায়। এতে টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় ও ভোগান্তি বেড়ে যায়।
মনোরেল ট্রেন আটকে যাওয়া
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুটি মনোরেল ট্রেন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মাঝপথে আটকে যায়। প্রায় ৭৮২ যাত্রী সেখানে বিপাকে পড়েন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কয়েকজন শ্বাসকষ্টে অজ্ঞান হয়ে যান। তবে মাত্র একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। উদ্ধার অভিযানে একটি ট্রেন থেকে ৫৮২ জনকে সিঁড়ি ব্যবহার করে নামানো হয়, আরেকটি ট্রেন থেকে ২০০ জন যাত্রীকে ওয়াডালা স্টেশনে নিরাপদে সরানো হয়।
স্কুল বন্ধের ভুয়ো খবর
বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (বিএমসি) জানিয়েছে, বুধবার স্কুল–কলেজ বন্ধের খবরটি ভুয়ো। প্রতিষ্ঠানটি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে তারা কোনো স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়নি।
মহারাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকায় পরিস্থিতি
কোকণ, মরাঠওয়াড়া ও পশ্চিম মহারাষ্ট্রেও টানা চতুর্থ দিনের মতো ভারি বৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারই পাঁচজন প্রাণ হারান—নানদেড়ে তিনজন, মুম্বাইয়ে একজন এবং বীডে একজন। চার জেলায় দেড় হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রত্নগিরি ও রায়গড় জেলায় নদীগুলো বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলায় পানি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই টানা বৃষ্টিতে মুম্বাই ও আশপাশের জনজীবন একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে। আইএমডির সতর্কতা অনুযায়ী, অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 






















