০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
ছোট্ট জিফি বক্স, বড় থ্যাঙ্কসগিভিং টেবিল: সস্তা আরামের লুকানো গল্প অ্যামাজন রক্ষায় নতুন পথ দেখাচ্ছে ক্রাফট চকলেট প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৯) ব্ল্যাক ফ্রাইডে অফারে দারুণ ছাড় পেল DJI Osmo Pocket 3 ভ্লগিং ক্যামেরা নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ: উৎসবের ভোজ আর অলস জীবনে বাড়ছে ঝুঁকি বাইয়াদা দ্বীপ: জেদ্দা উপকূলের এক নির্মল প্রাকৃতিক স্বর্গ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস টেনে তাইওয়ান ইস্যুতে বেইজিংয়ের নতুন চাপ ক্রক্সের স্যান্ডেলে এবার এক্সবক্স ব্র্যান্ডিং, গেমারদের জন্য নতুন ‘ড্রপ’ আবুধাবিতে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ড্রিসকলের বৈঠক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬৩)

চীনের মোকাবেলায় মার্কিন নৌবাহিনী ড্রোন নৌবহর তৈরি করছে, তবে সফল হচ্ছে না

সারসংক্ষেপ


সফটওয়্যার সমস্যায় ড্রোন পরীক্ষায় দুর্ঘটনা ও ব্যর্থতা

পেন্টাগন এল-থ্রি হ্যারিসের সঙ্গে সফটওয়্যার চুক্তি স্থগিত করেছে

নৌবাহিনীর প্রধান ক্রয় কর্মসূচি চাপে, শীর্ষ অ্যাডমিরাল বরখাস্ত

গত মাসে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি পরীক্ষায় পেন্টাগনের শীর্ষ স্বয়ংক্রিয় ড্রোন নৌকার ক্ষমতা প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার মাঝেই একটি নৌকা হঠাৎ থেমে যায়।

সফটওয়্যার ত্রুটি মেরামতে কর্মকর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ার সময়, আরেকটি ড্রোন নৌকা স্থির নৌকাটিকে ধাক্কা মেরে উপরে উঠে যায় এবং আবার পানিতে পড়ে যায়। ঘটনাটি ভিডিওতে ধরা পড়ে, যা রয়টার্সের হাতে এসেছে।

এই অঘোষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্রতিষ্ঠান—সারোনিক এবং ব্ল্যাকসি টেকনোলজিস। এটি সাম্প্রতিক সময়ে পেন্টাগনের স্বয়ংক্রিয় নৌবহর গড়ার প্রচেষ্টায় ঘটে যাওয়া একাধিক ব্যর্থতার একটি উদাহরণ, জানিয়েছেন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত অন্তত ১২ জন ব্যক্তি।

কয়েক সপ্তাহ আগে অন্য এক নৌপরীক্ষায়ও বড় দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ব্ল্যাকসি ড্রোন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সহায়ক একটি নৌকাকে। হঠাৎ ড্রোনটি গতি বাড়ালে সহায়ক নৌকাটি উল্টে যায় এবং নৌকার ক্যাপ্টেন পানিতে পড়ে যান। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয় এবং চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেন। ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ করে ডিফেন্স স্কুপ।

এই দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে সফটওয়্যার ত্রুটি ও মানবিক ভুলের কারণে, বিশেষ করে নৌকার অভ্যন্তরীণ সিস্টেম ও বাইরের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয়হীনতায়।

নৌবাহিনী, সারোনিক ও ব্ল্যাকসি এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা ঘটনাটি যাচাই করেছে রয়টার্সের দুই সূত্র। নৌকার নাম, কাঠামো এবং পরিবেশ সবকিছু মিলে গেছে গ্লোবাল অটোনোমাস রিকনাইসান্স ক্রাফট (GARC)-এর সঙ্গে।

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা


মার্কিন সামরিক নেতৃত্ব ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোনের ভূমিকা দেখে সিদ্ধান্তে এসেছে, চীনের তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য অগ্রযাত্রা ঠেকাতে আকাশ ও সমুদ্র ড্রোনের ঝাঁক দরকার। তাইওয়ান নিজেও এখন সমুদ্র ড্রোন কিনছে।

ইউক্রেনে তৈরি ড্রোনগুলো অনেকটা আসনবিহীন স্পিডবোটের মতো, যা অস্ত্র, বিস্ফোরক ও নজরদারি সরঞ্জাম বহন করতে সক্ষম। এগুলো সাধারণত রিমোট কন্ট্রোলে চালিত এবং একেকটির দাম প্রায় আড়াই লাখ ডলার। সস্তা ও কার্যকর হওয়ায় এসব ড্রোন আত্মঘাতী অভিযানে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটকে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো এমন এক নৌবহর তৈরি করা, যা মানব নির্দেশনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝাঁকের মতো চলতে পারবে। তবে এটি অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল প্রকল্প—একেকটি নৌকার খরচ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

হাডসন ইনস্টিটিউটের স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ক্লার্ক বলেন, সাম্প্রতিক পরীক্ষার ব্যর্থতা প্রমাণ করে, নৌবাহিনীর এই প্রযুক্তি স্থাপনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাঁর মতে, “নৌবাহিনীকে তাদের কৌশল মানিয়ে নিতে হবে, যখন তারা বুঝতে পারবে কোন প্রযুক্তি কী করতে পারে আর কী করতে পারে না।”

প্রশাসনিক সংকট


নৌবাহিনীর সমস্যার মধ্যে প্রযুক্তি ব্যর্থতার পাশাপাশি বড় ধাক্কা এসেছে প্রশাসনিক দিক থেকেও। সম্প্রতি এর স্বয়ংক্রিয় নৌ-ড্রোন ক্রয় ইউনিটের প্রধান অ্যাডমিরালকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মাসে এক বৈঠকে পেন্টাগনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে এই কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ ঘটনার পর পেন্টাগনের ডিফেন্স ইনোভেশন ইউনিট (DIU) প্রায় ২ কোটি ডলারের একটি চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে এল-থ্রি হ্যারিস (এল৩হ্যারিস)-এর সঙ্গে, যারা কিছু ড্রোন নৌকায় ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার সরবরাহ করছিল।

পেন্টাগন দুর্ঘটনার কারণ বা চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এল-থ্রি হ্যারিসও এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তাদের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের সফটওয়্যার পণ্যের নিরাপত্তা, মান ও সক্ষমতার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”

সমুদ্র ড্রোনের উত্থান


গত ২০২৩ সালে পেন্টাগন ১ বিলিয়ন ডলারের “রেপ্লিকেটর” কর্মসূচি চালু করে, যার মাধ্যমে মার্কিন নৌবাহিনী ও DIU হাজারো আকাশ ও সমুদ্র ড্রোন এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সফটওয়্যার সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়। এর প্রথম ধাপের সিস্টেমগুলো এ মাসেই ঘোষণা হওয়ার কথা।

ব্ল্যাকসি’র সঙ্গে নৌবাহিনী ইতোমধ্যে অন্তত ১৬ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে, যারা প্রতি মাসে ডজনখানেক GARC নৌকা তৈরি করছে। সারোনিকও প্রতিযোগিতায় আছে, তবে তারা এখনো বড় কোনো চুক্তি ঘোষণা করেনি।

অ্যাডমিরাল জিম কিলবি বলেছেন, “এই সিস্টেমগুলো নৌযুদ্ধের ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এগুলো বহরের কার্যপরিসর বাড়াবে, পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা উন্নত করবে এবং যুদ্ধক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।”

নৌবাহিনীর অস্থিরতা


পদে ফিরে আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ড্রোনের ঝাঁক তৈরি করাকে সামরিক অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবিত “বিগ বিউটিফুল বিল (আইন প্রস্তাব)”–এ সামুদ্রিক স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কিন্তু নতুন প্রশাসনের অধীনে নৌবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে।

এপ্রিল মাসে নৌবাহিনীর ক্রয় ইউনিট—প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অফিস আনম্যানড অ্যান্ড স্মল কমব্যাট্যান্টস (PEO USC)—ব্ল্যাকসি’র সফটওয়্যারের একটি সফল প্রদর্শনী নিয়ে লিংকডইনে পোস্ট করেছিল। কিন্তু পেন্টাগনের উপ-প্রতিরক্ষা সচিবের তৎকালীন চিফ অব স্টাফ কলিন ক্যারল মন্তব্য করেন যে কর্মসূচিটি আসলে অন্য প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি।

পরবর্তীতে জানা যায়, নৌবাহিনী এই ইউনিটকে তদন্তাধীন রেখেছে। এছাড়া এর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল কেভিন স্মিথকে নেতৃত্বে আস্থাহীনতার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এক সাম্প্রতিক বৈঠকে উপ-প্রতিরক্ষা সচিব স্টিভেন ফাইনবার্গ নৌ কর্মকর্তাদের কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলেন। তিনি নৌবাহিনীর স্বয়ংক্রিয় নৌযানের কিছু সক্ষমতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এবং ব্যয়ের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

নৌবাহিনী মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও জানায়, তাদের মিশন অব্যাহত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মানববিহীন নৌ সিস্টেমের আধুনিকীকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।

সামনে কী


নৌবাহিনী এখন আরও বড় প্রকল্পে হাত দিতে চায়—মানববিহীন সাবমেরিন ও মালবাহী জাহাজ। এর মধ্যে একটি নতুন প্রকল্প হলো “মডুলার অ্যাটাক সারফেস ক্রাফট,” যা মাঝারি ও বড় নৌযান তৈরি করবে, যাতে থাকবে কনটেইনার, নজরদারি যন্ত্রপাতি এবং আক্রমণ ক্ষমতা।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক টি.এক্স. হ্যামস বলেন, “নৌবাহিনী এমন এক পর্যায়ে এসেছে, যেখানে তাদের বহু দশকের ঐতিহ্য হঠাৎ করে দ্রুত পাল্টাতে হচ্ছে। আগে যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে বছরের পর বছর লাগত, এখন তাদের বলা হচ্ছে দ্রুত কাজ শেষ করতে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ছোট্ট জিফি বক্স, বড় থ্যাঙ্কসগিভিং টেবিল: সস্তা আরামের লুকানো গল্প

চীনের মোকাবেলায় মার্কিন নৌবাহিনী ড্রোন নৌবহর তৈরি করছে, তবে সফল হচ্ছে না

০১:০০:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

সারসংক্ষেপ


সফটওয়্যার সমস্যায় ড্রোন পরীক্ষায় দুর্ঘটনা ও ব্যর্থতা

পেন্টাগন এল-থ্রি হ্যারিসের সঙ্গে সফটওয়্যার চুক্তি স্থগিত করেছে

নৌবাহিনীর প্রধান ক্রয় কর্মসূচি চাপে, শীর্ষ অ্যাডমিরাল বরখাস্ত

গত মাসে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি পরীক্ষায় পেন্টাগনের শীর্ষ স্বয়ংক্রিয় ড্রোন নৌকার ক্ষমতা প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার মাঝেই একটি নৌকা হঠাৎ থেমে যায়।

সফটওয়্যার ত্রুটি মেরামতে কর্মকর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ার সময়, আরেকটি ড্রোন নৌকা স্থির নৌকাটিকে ধাক্কা মেরে উপরে উঠে যায় এবং আবার পানিতে পড়ে যায়। ঘটনাটি ভিডিওতে ধরা পড়ে, যা রয়টার্সের হাতে এসেছে।

এই অঘোষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্রতিষ্ঠান—সারোনিক এবং ব্ল্যাকসি টেকনোলজিস। এটি সাম্প্রতিক সময়ে পেন্টাগনের স্বয়ংক্রিয় নৌবহর গড়ার প্রচেষ্টায় ঘটে যাওয়া একাধিক ব্যর্থতার একটি উদাহরণ, জানিয়েছেন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত অন্তত ১২ জন ব্যক্তি।

কয়েক সপ্তাহ আগে অন্য এক নৌপরীক্ষায়ও বড় দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ব্ল্যাকসি ড্রোন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সহায়ক একটি নৌকাকে। হঠাৎ ড্রোনটি গতি বাড়ালে সহায়ক নৌকাটি উল্টে যায় এবং নৌকার ক্যাপ্টেন পানিতে পড়ে যান। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয় এবং চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেন। ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ করে ডিফেন্স স্কুপ।

এই দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে সফটওয়্যার ত্রুটি ও মানবিক ভুলের কারণে, বিশেষ করে নৌকার অভ্যন্তরীণ সিস্টেম ও বাইরের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয়হীনতায়।

নৌবাহিনী, সারোনিক ও ব্ল্যাকসি এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা ঘটনাটি যাচাই করেছে রয়টার্সের দুই সূত্র। নৌকার নাম, কাঠামো এবং পরিবেশ সবকিছু মিলে গেছে গ্লোবাল অটোনোমাস রিকনাইসান্স ক্রাফট (GARC)-এর সঙ্গে।

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা


মার্কিন সামরিক নেতৃত্ব ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোনের ভূমিকা দেখে সিদ্ধান্তে এসেছে, চীনের তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য অগ্রযাত্রা ঠেকাতে আকাশ ও সমুদ্র ড্রোনের ঝাঁক দরকার। তাইওয়ান নিজেও এখন সমুদ্র ড্রোন কিনছে।

ইউক্রেনে তৈরি ড্রোনগুলো অনেকটা আসনবিহীন স্পিডবোটের মতো, যা অস্ত্র, বিস্ফোরক ও নজরদারি সরঞ্জাম বহন করতে সক্ষম। এগুলো সাধারণত রিমোট কন্ট্রোলে চালিত এবং একেকটির দাম প্রায় আড়াই লাখ ডলার। সস্তা ও কার্যকর হওয়ায় এসব ড্রোন আত্মঘাতী অভিযানে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটকে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো এমন এক নৌবহর তৈরি করা, যা মানব নির্দেশনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝাঁকের মতো চলতে পারবে। তবে এটি অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল প্রকল্প—একেকটি নৌকার খরচ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

হাডসন ইনস্টিটিউটের স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ক্লার্ক বলেন, সাম্প্রতিক পরীক্ষার ব্যর্থতা প্রমাণ করে, নৌবাহিনীর এই প্রযুক্তি স্থাপনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাঁর মতে, “নৌবাহিনীকে তাদের কৌশল মানিয়ে নিতে হবে, যখন তারা বুঝতে পারবে কোন প্রযুক্তি কী করতে পারে আর কী করতে পারে না।”

প্রশাসনিক সংকট


নৌবাহিনীর সমস্যার মধ্যে প্রযুক্তি ব্যর্থতার পাশাপাশি বড় ধাক্কা এসেছে প্রশাসনিক দিক থেকেও। সম্প্রতি এর স্বয়ংক্রিয় নৌ-ড্রোন ক্রয় ইউনিটের প্রধান অ্যাডমিরালকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মাসে এক বৈঠকে পেন্টাগনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে এই কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ ঘটনার পর পেন্টাগনের ডিফেন্স ইনোভেশন ইউনিট (DIU) প্রায় ২ কোটি ডলারের একটি চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে এল-থ্রি হ্যারিস (এল৩হ্যারিস)-এর সঙ্গে, যারা কিছু ড্রোন নৌকায় ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার সরবরাহ করছিল।

পেন্টাগন দুর্ঘটনার কারণ বা চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এল-থ্রি হ্যারিসও এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তাদের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের সফটওয়্যার পণ্যের নিরাপত্তা, মান ও সক্ষমতার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”

সমুদ্র ড্রোনের উত্থান


গত ২০২৩ সালে পেন্টাগন ১ বিলিয়ন ডলারের “রেপ্লিকেটর” কর্মসূচি চালু করে, যার মাধ্যমে মার্কিন নৌবাহিনী ও DIU হাজারো আকাশ ও সমুদ্র ড্রোন এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সফটওয়্যার সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়। এর প্রথম ধাপের সিস্টেমগুলো এ মাসেই ঘোষণা হওয়ার কথা।

ব্ল্যাকসি’র সঙ্গে নৌবাহিনী ইতোমধ্যে অন্তত ১৬ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে, যারা প্রতি মাসে ডজনখানেক GARC নৌকা তৈরি করছে। সারোনিকও প্রতিযোগিতায় আছে, তবে তারা এখনো বড় কোনো চুক্তি ঘোষণা করেনি।

অ্যাডমিরাল জিম কিলবি বলেছেন, “এই সিস্টেমগুলো নৌযুদ্ধের ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এগুলো বহরের কার্যপরিসর বাড়াবে, পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা উন্নত করবে এবং যুদ্ধক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।”

নৌবাহিনীর অস্থিরতা


পদে ফিরে আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ড্রোনের ঝাঁক তৈরি করাকে সামরিক অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবিত “বিগ বিউটিফুল বিল (আইন প্রস্তাব)”–এ সামুদ্রিক স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কিন্তু নতুন প্রশাসনের অধীনে নৌবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে।

এপ্রিল মাসে নৌবাহিনীর ক্রয় ইউনিট—প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অফিস আনম্যানড অ্যান্ড স্মল কমব্যাট্যান্টস (PEO USC)—ব্ল্যাকসি’র সফটওয়্যারের একটি সফল প্রদর্শনী নিয়ে লিংকডইনে পোস্ট করেছিল। কিন্তু পেন্টাগনের উপ-প্রতিরক্ষা সচিবের তৎকালীন চিফ অব স্টাফ কলিন ক্যারল মন্তব্য করেন যে কর্মসূচিটি আসলে অন্য প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি।

পরবর্তীতে জানা যায়, নৌবাহিনী এই ইউনিটকে তদন্তাধীন রেখেছে। এছাড়া এর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল কেভিন স্মিথকে নেতৃত্বে আস্থাহীনতার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এক সাম্প্রতিক বৈঠকে উপ-প্রতিরক্ষা সচিব স্টিভেন ফাইনবার্গ নৌ কর্মকর্তাদের কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলেন। তিনি নৌবাহিনীর স্বয়ংক্রিয় নৌযানের কিছু সক্ষমতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এবং ব্যয়ের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

নৌবাহিনী মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও জানায়, তাদের মিশন অব্যাহত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মানববিহীন নৌ সিস্টেমের আধুনিকীকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।

সামনে কী


নৌবাহিনী এখন আরও বড় প্রকল্পে হাত দিতে চায়—মানববিহীন সাবমেরিন ও মালবাহী জাহাজ। এর মধ্যে একটি নতুন প্রকল্প হলো “মডুলার অ্যাটাক সারফেস ক্রাফট,” যা মাঝারি ও বড় নৌযান তৈরি করবে, যাতে থাকবে কনটেইনার, নজরদারি যন্ত্রপাতি এবং আক্রমণ ক্ষমতা।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক টি.এক্স. হ্যামস বলেন, “নৌবাহিনী এমন এক পর্যায়ে এসেছে, যেখানে তাদের বহু দশকের ঐতিহ্য হঠাৎ করে দ্রুত পাল্টাতে হচ্ছে। আগে যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে বছরের পর বছর লাগত, এখন তাদের বলা হচ্ছে দ্রুত কাজ শেষ করতে।”